উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে ১০টা ৪৫ মিনিটে তাকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত সোয়া আটটার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। তার সঙ্গে একই গাড়িতে রয়েছেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান (সিঁথি)।
দলের চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি ৮ নং গেট দিয়ে সরাসরি ভিআইপি টারমার্কে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সামনে পৌঁছে।
এর আগে, বাসা থেকে বের হয়ে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় পর রাত ১১টার দিকে বিমানবন্দরে পৌঁছান বিএনপির নেত্রী। খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে গুলশান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে ঢল নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের। গুলশানের বাসভবন থেকে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা, প্রয়াত ভাই সাইদ এস্কান্দারের সহধর্মিণী নাসরিন এস্কান্দারসহ আত্মীয়স্বজনেরা তাকে বিদায় জানান।
ফিরোজা থেকে রওনা হওয়ার পর সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাডাম বাসা থেকে রওনা হয়েছেন। তিনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীসহ সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানবন্দর থেকে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে যাবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সোমবারই ঢাকায় এসেছে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।
এদিকে বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসলিমা আক্তার।
দীর্ঘ সাত বছর পর মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। লন্ডন বিমানবন্দরে মাকে রিসিভ করার জন্য স্ত্রীসহ বিএনপির দুইজন নেতাকে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারেক।
২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপির চেয়ারপারসন সর্বশেষ লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন। এরপর তার আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে বন্দী জীবন কাটাচ্ছিলেন। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় তার লন্ডন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা বলা হলেও এখন যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়াই চূড়ান্ত হয়েছে।
ডিআর/ওএফ