আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে সরকারের সমালোচনা করা, মিথ্যাচার করা বিএনপি’র চিরায়ত ঐতিহ্য।
তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, এ বন্যা নাকি সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল। বিষয়টি হাস্যকর। প্রত্যেকটি বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করা, মিথ্যাচার করা বিএনপি’র চিরায়ত ঐতিহ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েও মিথ্যাচার ও অপরাজনীতির বৃত্ত থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসতে পারেনি।”
আজ মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ের কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব একথা বলেন।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘আমি তার (মির্জা ফখরুল) কাছে জানতে চাই, সম্প্রতি চীনের ইয়াংজী নদী অববাহিকার ভয়াবহ বন্যা কি চীনের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল? জাপান ও আসামের বন্যাও কি একই কারণে? তাহলে বিএনপি আমলের যে বন্যা হয়েছিল তা কোন নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে হয়েছিল, জানাবেন কি?’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের পাশাপাশি দুর্গত মানুষের পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা, রান্না করা খাবার বিতরণ, চিকিৎসা, ত্রাণ কার্যক্রমে প্রশাসনকে সহায়তায় স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা রয়েছেন সক্রিয়।
তিনি বলেন, দেশের যে কোন দুর্যোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনও দূরে সরে থাকেনি। নিরাপদ দূরত্বে বসে বসে প্রেস ব্রিফিং করেনি। ছুটে গেছে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে। সম্পৃক্ত হয়েছে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা ও মানবিক সহায়তা প্রদানে। করোনায় কর্মহীন মানুষের পাশে থেকে আওয়ামী লীগ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা নজিরবিহীন ।
কাদের বলেন, “একইভাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে বন্যা দুর্গত মানুষের পাশেও দলীয় নেতা-কর্মী এবং জন প্রতিনিধিগণ সার্বক্ষণিক সক্রিয় রয়েছেন। মাটি ও মানুষের দল বলে দেশের ও দেশের মানুষের যে কোন বিপদে সবার আগে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্মগত ঐতিহ্য।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি এখনো রয়ে গেছে। অনেকে টিকেট জমা দিয়ে ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা আগে নমুনা দিচ্ছে পরীক্ষার জন্য। কেউ কেউ ২৪ ঘন্টা আগে রিপোর্ট পাচ্ছে আবার কেউ কেউ পাচ্ছে না। এতে শেষ মুহুর্তে মানুষের উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে। আবার রেজাল্ট পজেটিভ আসলে শেষ মূহুর্তে যাত্রা বাতিল করতে হচ্ছে। এর ফলে অনেকে আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া, নমুনা গ্রহণ ও ফলাফল প্রদানে আছে সমম্বয়হীনতা ও ভোগান্তি। বিদেশগামীদের ভোগান্তি কমাতে তিনি একটি যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্প্রতি করোনার লক্ষণ দেখা দিলেও অনেকে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছে না। কোন কোন হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা, নমুনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ, নমুনা গ্রহণে দীর্ঘ লাইন ও ফলাফল প্রদানে অপ্রয়োজনীয় সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি কারণে পরীক্ষার প্রতি মানুষের অনীহা বাড়ছে।
অপরদিকে, টেলিমেডিসিনের আওতা বাড়িয়ে ঘরে বসেই অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ রোগীরাও বিভিন্ন রোগ যন্ত্রণায় হাসপাতালে যেতে চাচ্ছে না। আস্থা ফিরিয়ে আনতে হাসপাতালগুলোতে দৃশ্যমান সেবার মান ও আন্তরিকতা বাড়াতে হবে। নমুনা পরীক্ষা হতে দূরে থাকলে একজন রোগী অনেককে সংক্রমিত করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু করে বন্যায় মধ্যাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন ধরণের সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই নির্দেশনা দিয়েছেন। চলছে খাদ্যসহ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম। অথচ বিএনপি মহাসচিব বন্যার্তদের সহায়তা প্রদানে সরকারের কোন ধরণের প্রয়াস খুঁজে পাচ্ছেন না, চোখে দেখছেন না।
তিনি বলেন, রাজধানীতে বসে প্রেস ব্রিফিং-এ মিথ্যাচার করলে দেখতে পাওয়ার কথা নয়। বন্যা গুলশানে নয়, দেশের ৩১টি জেলাকে প্লাবিত করছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রেখে ও
উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্ধ হয়ে থাকলে সরকারের উদ্যোগ ও সহায়তা দেখতে পাওয়ার কথা নয়। কাদের বলেন, হাতের তালু দিয়ে আকাশ ঢাকা যায় না। বিএনপি না দেখলেও দেশের মানুষ এবং দুর্গত এলাকার মানুষ সরকারের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেখছে ও উপকৃত হচ্ছে।”
সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ৩১টি জেলায় বন্যার্তদের জন্য ১ হাজার ৬০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসকল আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৮০ হাজার। আশ্রয়কেন্দ্রে জরুরি চিকিৎসা সহায়তায় প্রায় নয়শত মেডিকেল টিম সক্রিয় রয়েছে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন বন্যায় এ পর্যন্ত ৩৯টি জেলার ১৫টি উপজেলায় পানিবন্দী প্রায় দশ লাখ পরিবারের প্রায় ৪৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ইতোমধ্যে তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের নিকট ১২ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন চাল বরাহ করা হয়েছে। যার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৭ হাজার টনেরও বেশী। নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ১ লাখ ৩২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গো-খাদ্য বাবদ ২ কোটি টাকার বেশী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য নৌকাসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটর করছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিচ্ছেন। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।