রমজান হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র ও বরকতময় মাস। এ মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ করা হয়েছে, যা আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। তাই আমাদের জানা প্রয়োজন, রমজানে কী করা উচিত (করণীয়) এবং কী থেকে বিরত থাকা উচিত (বর্জনীয়)। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) কীভাবে সেহরি ও ইফতার করতেন, তা জানা ও অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
রমজানে করণীয় বিষয়
রমজানে ইবাদত ও নেক আমলের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা উচিত। নিম্নে করণীয় কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো-
১. সঠিক নিয়তে রোজা রাখা
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে ঈমান ও সওয়াবের প্রত্যাশায়, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি : ৩৮)
২. সেহরি খাওয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সেহরিতে বরকত রয়েছে, তাই তা পরিত্যাগ করো না।’ (সহিহ বুখারি : ১৯২৩)
৩. সময়মতো ইফতার করা
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণের ওপর থাকবে, যতক্ষণ তারা ইফতারে দেরি না করে।’ (সহিহ বুখারি : ১৯৫৭)
৪. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা
রমজান হলো কোরআন নাজিলের মাস। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
৫. তারাবিহ নামাজ আদায় করা
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়াম (তারাবিহ) আদায় করবে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৩৭)
৬. দান-সদকা ও জাকাত প্রদান করা
রাসুল (সা.) রমজানে অনেক বেশি দান করতেন। রাসুল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে উদার, আর রমজানে তিনি আরও বেশি উদার হতেন। (সহিহ বুখারি : ৬)
রমজানে বর্জনীয় বিষয়সমূহ
রমজান শুধু না খেয়ে থাকার নাম নয়; বরং আত্মসংযমের একটি প্রশিক্ষণ। তাই কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
১. মিথ্যা, গিবত ও কটূকথা বলা
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ করে না, আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই যে সে শুধু খাবার ও পানীয় ত্যাগ করবে।’ (সহিহ বুখারি : ১৯০৩)
২. রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ ও রাগ করা
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ তোমার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে বলো, আমি রোজাদার।’ (সহিহ বুখারি: ১৯০৪)
৩. অশ্লীলতা ও চোখের পাপ
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না।’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ৩২)
৪. সময় অপচয় করা
রমজান ইবাদতের মাস, তাই অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
রাসুল (সা.)-এর সেহরি ও ইফতার
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেহরি ও ইফতার ছিল খুবই সহজ ও স্বাস্থ্যকর।
১. সেহরি কেমন ছিল?
রাসুল (সা.) বলেন, ‘সেহরি খাও, কারণ এতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি : ১৯২৩) তিনি সাধারণত খেজুর, পানি বা হালকা খাবার খেতেন।
২. ইফতার কেমন ছিল?
তিনি খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, যদি খেজুর না পেতেন, তাহলে পানি পান করতেন।’ (আবু দাউদ : ২৩৫৬)
তিনি দ্রুত ইফতার করতেন এবং এই দোয়া পড়তেন- ‘اللهم لك صمت، وعلى رزقك أفطرت’ (আবু দাউদ : ২৩৫৮)
রমজান আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মাস। এ মাসে আমাদের বেশি বেশি ইবাদত, দান-সদকা ও আল্লাহর স্মরণ করা উচিত। রাসুল (সা.)-এর সেহরি ও ইফতার ছিল খুবই সহজ ও বরকতময়, যা আমাদেরও অনুসরণ করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন
বাংলাদেশের খবরের ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- [email protected]
লেখকের মেইল : [email protected]
বিএইচ/