মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ.) : সংগ্রামী এক আলেমের জীবন
মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৬
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
তিনি হঠাৎ করে চলে গেলেন। সবাইকে হতবুদ্ধি, নির্বাক ও শোকবিদ্ধ করে চলে গেলেন। ঘরবাড়ি-ময়দান শূন্য করেই চলে গেলেন। ঝড়ের রাতে জাহাজ থেকে নাবিক নেমে গেলে যেমন হয়, গহীন অরণ্যে কাফেলার রাহবার নিখোঁজ হয়ে গেলে যেমন হয়—দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেম সমাজের অবস্থা তার চলে যাওয়ায় তেমনই হয়েছে। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন মুফতী ফজলুল হক আমিনী।
জাতীয় ঈদগাহে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে তার নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায়। ওইদিন আসরের পর লালবাগ শাহী মসজিদের সামনের সংরক্ষিত করবস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এক নজরে তার জীবনের দিকে তাকালে আমরা দেখব, তিনি ১৯৪৫ সালের ১৫ই নভেম্বর বি-বাড়ীয়া জেলার আমীনপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ও দ্বীনদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বি-বাড়ীয়া জামেয়া ইউনুসিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলাধীন বিক্রমপুরের মোস্তফাগঞ্জ মাদরাসায় তিন বছর পড়াশোনা করেন। তারপর ১৯৬১ সালে রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসায় চলে আসেন।
এখানে তিনি হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.) ও হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.), কিংবদন্তী মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ (রহ.), শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আজিজুল হক (রহ.), আরেফ বিল্লাহ মাওলানা সালাহ উদ্দীন (রহ.) এবং হযরত মাওলানা আব্দুল মজীদ ঢাকুবী (রহ.)-এর বিশেষ তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদীসের সনদ লাভ করেন।
১৯৬৯ সালে আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী (রহ.)-এর কাছে হাদীস পড়ার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান করাচী নিউ টাউন মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি উলুমুল হাদীসের উপর পাঠ গ্রহণ করে দেশে ফিরে আসেন।
কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭০ সালে। প্রথমে মাদরাসা-ই- নূরিয়া কামরাঙ্গীরচরে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই তিনি হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কন্যার সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭২ সালে মাত্র নয় মাসে তিনি কুরআন শরীফ হেফয করেন। এ সময় তিনি ঢাকার আলু বাজারে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। একই সাথে আলু বাজার মসজিদের খতীবের দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর ১৯৭৫ সালে তিনি জামেয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক ও সহকারী মুফতী নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি লালবাগ জামেয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রধান মুফতীর দয়িত্ব পান। ১৯৮৭ সালে হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর থেকে তিনি লালবাগ জামেয়ার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৩ সালে পান বড়কাটারা হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও মুতাওয়াল্লির দায়িত্ব। ইন্তেকালের আগ পর্যন্তই এই দুইটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পাশাপাশি ঢাকার কাকরাইল, দাউদকান্দির গৌরীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু মাদ্রাসার প্রধান অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মুফতী আমিনী (রহ.)-এর বিশেষত্ব কী ছিল? তিনি একজন প্রজ্ঞাবান বড় আলেম ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী দুটি বড় মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীস ছিলেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হিসেবে সরব একজন ইসলামী রাজনীতিক ছিলেন। তার পরিচয় এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। গত দুই যুগ ধরে তিনি ছিলেন এদেশের ধর্মপ্রাণ-দেশপ্রেমিক মানুষ ও সর্বস্তরের আলেম সমাজের একজন প্রধান প্রতিনিধি। তিনি তাদের ভাই ছিলেন। তিনি তাদের দুঃখ ও দ্রোহের কণ্ঠ ছিলেন। তিনি তাদের বন্ধু, নেতা ও অভিভাবক ছিলেন। সঙ্কটকালে তার গমগমা কণ্ঠ আর হাতের আঙুলের দিকে তাকিয়ে থাকতেন তারা। আহা! এত সুন্দর করে জনসভা ও মাহফিলগুলোতে ইসলামের অতীত গৌরব, বীরত্ব, আশাব্যঞ্জকতা, উদ্দীপনা, আল্লাহনির্ভরতা আর সাহসের পঙক্তিমালা তিনি উচ্চারণ করতেন যে মুহূর্তের মধ্যেই লাখো মানুষের ছায়াচ্ছন্ন, চিন্তাক্লিষ্ট চেহারায় প্রত্যয় ও আশ্বাসের রোদ হেসে উঠত। তিনি তার বক্তব্যে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা পেশ করতেন। তিনি বীর সালাহউদ্দিন আইয়ুবী, গাজী নুরুদ্দীন জঙ্গি (রহ.)-এর অমিত সাহসের ইতিহাস উচ্চারণ করতেন। শাহ ওয়ালি উল্লাহ, সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ, কাসেম নানুতুবী ও শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান (রহ.)-এর জীবনব্যাপী সংগ্রামের দাস্তান শোনাতেন। শেখ সাদী, জালালুদ্দীন রূমী, আকবর এলাহাবাদী, ইকবাল, হালী, জিগার মুরাদাবাদী ও খাজা আজিজুল হাসান মজযুব (রহ.)-এর শের আবৃত্তি করতেন। তার কণ্ঠের উঠানামায় লাখো মানুষের মজমা তরঙ্গের মতো দুলতে থাকতো। তিনি সাহসের কণ্ঠ ছিলেন। সংগ্রামের ময়দানে অবিচলতার পাহাড় ছিলেন।
আশির দশকের শুরু পর্যন্ত তিনি ছিলেন অতি মনোযোগী ও নীরবতাবাদী একজন মেধাবী আলেম-শিক্ষক। তার শিক্ষক ও অভিভাবক হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) তাকে রাজনীতিতে নামালেন। ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সেই যে নামলেন তিনি, আর সরে গেলেন না। তিনি যখন গেলেন তখন কোটি মানুষকে রাস্তায় রেখে একদমই তিনি চলে গেলেন।
নব্বই দশকের শুরুতে ভারতের উত্তর প্রদেশে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হলে এই দেশে লংমার্চের ডাক দেয়া হয়। সেই লংমার্চ আন্দোলনের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ও প্রধান নির্বাহী ছিলেন মুফতী আমিনী (রহ.)। তার শিক্ষক শায়খুল হাসীস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) ছিলেন এ লংমার্চের আহ্বায়ক ও অভিভাবক। মুফতী আমিনী (রহ.) ছিলেন এর কার্যনির্বাহী প্রধান। ১৯৯৪ সালে এক নাস্তিক মহিলা লেখক পবিত্র কুরআন পরিবর্তনের ডাক দিলে তিনি ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সারা দেশে ছুটে বেড়িয়ে আন্দোলন সংগঠিত করেন। হরতাল পালন করেন। সেই মুরতাদ মহিলা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।
২০০১ সালে সব রকম ফতোয়া নিষিদ্ধ করার একটি রায় উচ্চ আদালত থেকে ঘোষিত হলে তিনি বিচারপতিকে মুরতাদ ঘোষণা করে ঝুঁকিপূর্ণ ও ঘটনাবহুল এক আন্দোলনে নেমে পড়েন। তখন চার মাসের জন্য তিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। বর্তমান সরকার ঘোষিত শিক্ষানীতি ও নারীনীতি নিয়ে তিনি সোচ্চার প্রতিবাদ করেন। নারীনীতির মধ্যে উত্তরাধিকারসহ সবপর্যায়ে নারীর সম-অধিকারের কুরআনবিরোধী ধারা বাতিলের জন্য দেশবাসীর প্রতি আন্দোলনের ডাক দেন। একপর্যায়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে বহু প্রতিকূলতা ও প্রশাসনিক প্রতিরোধের মুখে ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল দেশব্যাপী সফল হরতাল পালন করেন। এর ঠিক ছয়দিন পর তার ছোট ছেলেকে গুম করে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই নমনীয় করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে সেই ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। প্রতিটি আন্দোলনেই তিনি ছিলেন মূল আহ্বায়ক এবং আগাগোড়া অনমনীয় ও দৃঢ়পদ। সারাদেশের শীর্ষ আলেমরা প্রতিটি আন্দোলনে তার সঙ্গে ও পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করেন। প্রতিবাদ, আন্দোলন, সংগ্রামে ধর্মপ্রাণ মানুষের আস্থা ও আশ্বাসের মিনারে পরিণত হন তিনি।
আন্দোলন-সংগ্রামে প্রবীণত্ব ও নেতৃত্বের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি সব সময় সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন ছিলেন না। কিন্তু কার্যনির্বাহী দায়িত্ব তাকেই আঞ্জাম দিতে হয়েছে সব সময়। তার সময়কালে প্রায় সময়ই তিনি তার গুরুজনদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ স্নেহ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এসেছেন। খতিব উবায়দুল হক (রহ.), বি-বাড়িয়ার বড়হুজুর মাওলানা সিরাজুল ইসলাম (রহ.), শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) ও আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মতো বটবৃক্ষরা সব সময় তাকে স্নেহ-ছায়া বিলিয়ে এসেছেন। বড়দের সঙ্গে তিনি এভাবেই শ্রদ্ধা ও আস্থার সম্পর্ক বজায় রাখতেন।
সংগ্রামী আলেম মুফতী ফজলুল হক আমিনী (রহ.)-এর জীবনে তার প্রত্যক্ষ উস্তায তিন মনীষীর প্রভাবের কথা তিনি প্রায়ই বলতেন। সবচেয়ে বেশি বলতেন বাংলার সংস্কারক পুরুষ মোজাহেদে আযম হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী-ছদর ছাহেব (রহ.)-এর কথা। বলতেন প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ও সংগ্রামী আলেম করাচির হযরত ইউসুফ বিন্নৌরী (রহ.)-এর কথা। আর পরবর্তী পর্যায়ে দেশবরেণ্য বুযুর্গ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘তাওবার রাজনীতিক’ হযরত মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর জীবন ও সংগ্রামের প্রভাবের কথা বিভিন্ন সময় উল্লেখ করতেন। তার পড়াশোনা, মেযাজ, চিন্তাধারা ও বিভিন্ন পদক্ষেপের ক্ষেত্রে তিনি এই মনীষীদের কথা শ্রদ্ধা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে উল্লেখ করতেন।
মুফতী আমিনী (রহ.) মেধাবী ও সংগ্রামী একজন আলেম ছিলেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিচরণের কারণে তার আচরণে কখনো কখনো একটা আটপৌড়ে ও গাম্ভীর্যহীন ভাব বিরাজ করত। খোলামেলা ভাষায় বক্তব্য দিতেন। প্রাণ খুলে মিশতেন। জোরের সঙ্গে কখনো বিরক্তি প্রকাশ করতেন। কখনো বয়ানের মধ্যেও হেসে উঠতেন। যা দেখলে অনেক সময় তাকে গভীর মনের ও চিন্তার মানুষ বলে মনে হতো না। একটা বিভ্রম তৈরি হতো। কিন্তু বাস্তবতা এ রকম ছিল না। যারা জানেন তারা জানেন যে, তিনি কেবল হাদীসের দরসের প্রস্তুতির জন্য নয়, বরাবর অধ্যয়ন পাগল একজন মানুষ ছিলেন। গভীর অধ্যয়ন ও পাঠনিমগ্নতায় তিনি অনেক সময়ই বিভোর থাকতেন। মাঝে মাঝেই ইসলামী জ্ঞান, দর্শন, ফিকহ ও চিন্তাধারা বিষয়ে নতুন প্রকাশিত আরবি-উর্দু-ফার্সির বহু কিতাব কার্টন ধরে ধরে তিনি কিনে আনতেন। ইসলাম বিষয়ে আলোচিত নতুন প্রকাশিত কোনো গ্রন্থ তার অপঠিত থাকত না। লালবাগ মাদরাসার বিশাল লাইব্রেরির প্রাচীন শত শত কিতাবের কোনো কোনো পৃষ্ঠায় কাঠপেন্সিলে তার নোট ও পর্যবেক্ষণ আঁকা আছে। তার অন্তরে আচরণে আধ্যাত্মিকতার একটি স্বচ্ছ ঝর্ণা প্রবাহিত থাকতো। বেশিরভাগ সময়ই তার বক্তব্যে থাকতো আকাবিরে দ্বীন ও আসলাফে উম্মতের চোখভেজা বর্ণনা।
যারা জানেন তারা মুফতী আমিনী (রহ.)-এর আরেকটি বিষয় সম্পর্কেও জানেন। বছরের প্রায় প্রতি রাতে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেঁদে-কেটে দুআ করতেন। এ দুআ কখনও মাদরাসায় তার রুম বন্ধ করে করতেন, কখনও ছাত্রদের ডেকে এনে দফতরে সম্মিলিতভাবে করতেন। দুআয় সময় দুই হাত ঊর্ধ্বে তুলে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকতেন। সে কান্না সহজে শেষ হতো না। লালবাগ মাদরাসায় প্রতি বৃহস্পতিবার শেষ রাতে তিনি একটি সম্মিলিত দুআর আয়োজন করতেন। রাত ৩টার আগেই সারা মাদরাসার ছাত্ররা উঠে এসে শাহী মসজিদের বারান্দায় তাহাজ্জুদ পড়ত। তেলাওয়াত করত। ফজরের আযানের আধা ঘণ্টা আগে তিনি সবার মুখোমুখি দাঁড়াতেন। এরপর সবাইকে নিয়ে দু’হাত আল্লাহর দরবারে তুলে ধরতেন। সামনে ছাত্ররা বসা। উল্টোদিকে একা তিনি দাঁড়ানো। মসজিদের বাতিগুলো থাকত নেভানো। রাজনীতির ময়দানে হুঙ্কার দেয়া মুফতি আমিনী সেই অন্ধকার শেষ রাতে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে অসহায়ের মতো, ভিক্ষুকের মতো, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মতো চিত্কার করে কাঁদতে থাকতেন। তার সঙ্গে সারাটা মসজিদ যেন কাঁদতে থাকত। মনে হতো তার বুক যেন ফেটে যাচ্ছে। কান্নায়-কষ্টে, আবেদনে-আবদারে, দুঃখে-কাতরতায় তিনি নুয়ে নুয়ে পড়তেন। এবং অপরিহার্যভাবে এসব দুআয় তিনি দেশ, দেশের মানুষ, দেশের স্বাধীনতা ও শান্তির জন্য বড় একটি সময় জোরে জোরে দুআ করতেন।
দীর্ঘ বিশ মাস গৃহবন্দী থেকে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। কাছের মানুষরা জানেন, তাকে কতটা চাপের মধ্যে রাখা হয়েছিল। কতবার তাকে আদালতের বারান্দায় টেনে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো একটি মামলা কি তার ব্যক্তিগত ‘দুর্নীতি’, ‘উপার্জন’ কিংবা ‘অনৈতিকতা’ নিয়ে ছিল? দেশ ও ইসলামের জন্য লড়তে লড়তে, কুরআন ও সুন্নাহর জন্য বলতে বলতে তিনি অবরুদ্ধ হলেন। বছরের পর বছর অবরুদ্ধ ও প্রায় নির্বাক থাকতে বাধ্য হলেন। আমার মতো তার হাজার হাজার অকৃতজ্ঞ ছাত্র, লাখ লাখ আলেম আর কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষ তাকে মুক্ত করার কোনো চেষ্টা করিনি। তিনি তো আমাদের হয়েই লড়েছিলেন। তিনি তো দ্বীনের জন্যই টার্গেট হয়েছিলেন। আহা! ক্ষমাহীন নিস্পৃহা ও নির্বিকারত্ব নিয়ে আমরা তাকে তার অবস্থায় ছেড়ে রাখলাম। কোনো প্রতিবাদ, কোনো আন্দোলন, কোনো শব্দ আমরা করলাম না। এমনকি চিত্কার করে কাঁদলামও না। আমাদের এ অপরাধ কি আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন?
মুফতি আমিনী (রহ.)। আমার শিক্ষক। আমাদের শিক্ষক। আমরা তার জন্য বেহেশতে উঁচু মাকামের প্রার্থনা করি। জানাযার লাখো মানুষের জনসমুদ্র তার জন্য হাউমাউ করে কেঁদেছে, ডুকরে ডুকরে কেঁদেছে। আর ঘন ঘন চোখ মুছেছেন হাজার হাজার মানুষ। তাকে হারানোর কষ্ট অনেকের চোখে স্রোত সৃষ্টি করেছে। শেষ জীবনে তাকে কষ্ট দেওয়ার কষ্টে অনেকের বুকে পাথর জমেছে। ইয়া আল্লাহ! তোমার প্রিয় এই মর্দে মুমিন ও মর্দে মুজাহিদকে তুমি শান্তির ছায়ায় টেনে নাও। আমীন।
বিএইচ/