ছবি : সংগৃহীত
ইসলাম মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। মানুষে মানুষে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরি করে। ইসলামের মূল ভিত্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম দ্বিতীয় প্রধান হলো নামাজ। নামাজে আছে শান্তি, সুখ ও কল্যাণ। নামাজ কেবল মহান আল্লাহর একটি ইবাদতই না, বরং পারস্পরিক সম্পর্কের একটি যোগসূত্রও বটে। প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত ফরজ নামাজে মুসল্লিদের মোলাকাত ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের একটি বন্ধন তৈরি করে। এতে করে তারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি স্নেহ-মর্যাদাশীল হয়ে ওঠে। সামাজিক চলাফেরায় ধনী-গরিবের বৈষম্য বিদূরিত হয়।
পাঁচওয়াক্ত ফরজ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। তন্মধ্যে জুমার নামাজের ফজিলত অন্যতম। আর জুমার দিন হলো সপ্তাহের সর্বোত্তম দিন। এ দিনকে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বিশেষ দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জুমাবারকে মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এই দিন অর্থাৎ জুমার দিনকে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন বানিয়েছেন’ (ইবনে মাজা : ৯০৮)।
আমাদের দেশে জুমার দিন তথা শুক্রবার হলো ছুটির দিন। এই দিন সব ধরনের অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। জুমাবারে দুপুরে শহর-বন্দর, পাড়া-গাঁয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ব্যস্ততা থেকে অবসর হয়ে সবাই এ দিন প্রভুর দরবারে নুয়ে পড়ে। তওবা-ইস্তিগফার করে। বেশি বেশি ইবাদত করে। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নেয়। কেউ কেউ আবার জুমাবারে পুরো দিনই নফল ইবাদতে মগ্ন থাকেন।
জুমার দিন শুভ্র-সফেদ পোশাকে উম্মাহর মিলনমেলা সবাইকে মুগ্ধ করে। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুবক-বৃদ্ধ; সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। বড়-ছোট কোনো পার্থক্য থাকে না। এ দিন রাজা-বাদশাহ, ধনী-গরিব সবাই সমান ও বৈষম্যহীন। এ যেন এক অপার্থিব মিলনমেলা। ভালোবাসা আর ভালোলাগার নজর কাড়া দৃশ্য। এমন দৃশ্য দেখতে কার না ভালো লাগে! হাসিমুখে সবাই একে অন্যের সঙ্গে সালাম-মুসাফাহা করেন। পারিবারিক হাল-অবস্থা জিজ্ঞেস করেন। অনেক অপরিচিত হয়েও এ দিন সবাইকে খুব পরিচিত মনে হয়। কেউ আবার পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন। এভাবেই স্নেহ, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে জুমাবারে মুসলিম উম্মাহর ভ্রাতৃত্বের বন্ধন যেন আরও দৃঢ় হতে থাকে।
আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের এমন বন্ধনকে পছন্দ করে কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মাঝে আপস মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (সুরা হুজরাত : ১০)।
এই আয়াতে যে বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা হলো, সব মুমিন একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। মুমিনের বন্ধন অবিচ্ছেদ্য ও অভঙ্গুর হবে। সুখে-দুখে, কাজে-কর্মে, চিন্তা-চেতনায় সর্বত্রই এর জোয়ার ধারা বজায় থাকবে।
হাদিস শরিফে এসেছে, জুমার দিন কেবল মুহাম্মাদি উম্মাতেরই বৈশিষ্ট্য। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতকে জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অজ্ঞ রেখেছেন। ইহুদিদের ফজিলতপূর্ণ দিবস ছিল শনিবার। খ্রিস্টানদের ছিল রোববার। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়ায় পাঠালেন এবং জুমার দিনের ফজিলত দান করলেন। সিরিয়ালে শনি ও রোববারকে শুক্রবারের পেছনে রাখা হয়েছে। কারণ, দুনিয়ার এই সিরিয়ালের মতো কেয়ামতের দিনও ইহুদি-খ্রিস্টানরা মুসলমানদের পেছনে থাকবে। আমরা উম্মত হিসেবে সবার শেষে এলেও কেয়ামতের দিন সবার সামনে থাকব’ (মুসলিম : ১৪৭৩)।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে যতদিন সূর্য উদিত হবে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার। এ দিনে আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছিল। সর্বশেষ কেয়ামত সংঘটিত হবে শুক্রবার দিনে’ (মুসলিম : ৮৫৪)।
জুমআর দিনের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে উপস্থিত হলো, সে যেন একটি উট কুরবানি করল। দ্বিতীয়ত যে মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি গরু কুরবানি করল, তৃতীয়ত যে মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। অতঃপর ইমাম যখন মিম্বরে বসে খুতবা পেশ করেন, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যান’ (বুখারি : ৮৮১)।
এটিআর/