কোরআনে বর্ণিত ঘরটির সামনে আমি, সুখস্বপ্ন নাকি সত্যি!
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৭
বাইতুল্লাহকে সামনে রেখে মাগরিব পড়ছি। দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব সুরা কুরাইশ পড়লেন। তিনি যখন 'ফাল ইয়াবুদু রব্বা হাজাল বাইত' (তারা যেন এই ঘরের রবের ইবাদত করে) আয়াতটি পড়লেন, তখন দিলের অবস্থা যে কেমন ছিল, তা বলে বোঝানো মুশকিল।
এই ঘর, মানে আমাদের সামনে কালো গিলাফাবৃত যে ঘরটি, সেটি। আমরা ঘরটির খুব কাছে। আর তার রব আমাদের উদ্দেশে পরোক্ষ আদেশ দিয়ে বলছেন, 'তারা যেন এই ঘরের রবের ইবাদত করে।' আহ, কী অনুভূতি! আবেগে আমার দিলটা ভরে উঠল।
চিন্তা করুন- সুদূর বাংলাদেশের একজন বাসিন্দা। সারাজীবন পবিত্র কোরআন-হাদিসে যে ঘর, যে স্থানগুলোর নাম সে পড়ে এসেছে, আজ সে সেগুলো দেখছে খুব কাছ থেকে, আপনভাবে, তাহলে তার হৃয়য়োচ্ছ্বাস কেমন হবে, আমারও তেমনই হলো। শুধু 'আল্লাহ আল্লাহ' বলে কৃতজ্ঞতা আদায় করা ছাড়া আর কিছুই মুখ দিয়ে বের হলো না।
৩০ বছর বয়সের কাছাকাছি একজন মানুষ আমি। ২০১১ সালে যখন ঢাকায় এলাম, প্রথমদিকে তখন ঢাকাকে দেখে নিজেকে খুব 'মহান' মনে হত; ভাবতাম- যেসব জিনিস বাড়িতে টেলিভিশনে দেখতাম, সেগুলো আজ আমার চোখের সামনে। কী দারুণ ব্যাপার! তবে পবিত্র ভূমির সফরটা তার চেয়েও যে কত আনন্দের, তা মুসাফিরই অনুভব করতে পারে। যেসব স্থান-স্থাপনার নাম আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর মুখে উচ্চারিত হয়েছে, আমার মতো গোনাহগার, সেগুলো চাক্ষুষ দেখছে। আল্লাহর প্রতি অফুরান শুকরিয়া।
'তারা যেন এই ঘরের রবের ইবাদত করে'- এই আয়াতে আল্লাহ যেভাবে আমাদের পরোক্ষ আদেশ দিয়েছেন। আমারও মনে হলো কোরআনের সুরে আমিও তাঁর কাছে দোয়া করি। তাই পরোক্ষভাবে আমিও বললাম, 'ফাল ইয়াশফিনি/ইয়াশফিনা রব্বু হাজাল বাইত' (এই ঘরের রব যেন আমাকে /আমাদেরকে আরোগ্য দান করে)। যখন এই দোয়া করছি, তখন ভাবলাম- দোয়া কবুলের সময় শুধু দুনিয়াবি সুবিধা চাইব, তা হয় না- তাই একই সুরে এই দোয়া করলাম, 'ফাল ইয়ুহদিনা রব্বু হাজাল বাইত' (এই ঘরের রব যেন আমাদের হেদায়েত দান করেন)। আশা করি- এই ঘরের রব আমার মনের কথা শুনবেন এবং হেদায়েতের আলোয় আলোকিত করবেন ইনশাআল্লাহ।
আর বাইতুল্লাহর মতো স্থানে পায়ে ব্যথার জন্য দোয়া চাওয়ার কারণ হলো- ব্যথা এতটাই তীব্র ছিল যে, এর কারণে তাওয়াফ করতে কষ্ট হচ্ছিল, তাই মুখ দিয়ে এই দোয়া বের হয়ে যায়। একটু পরই সম্বিত ফিরে পাই- সুযোগে আল্লাহর কাছে অনেক বড় কিছুই চাইতে হবে। তাই হেদায়েত চাইলাম।
এর আগে প্রথম রাকাতে ইমাম সাহেব সুরা ফিল তিলাওয়াত করলেন। এই সুরাটিতেও কাবাঘরের সঙ্গে সম্পর্কিত হস্তিবাহিনীর কাহিনি আলোচিত হয়েছে। আহ শক্তিশালী আবরাহা ও তার সৈন্যদের কী নির্মম পরিণতি হয়েছিল সেদিন; ছোট্ট একপ্রকার পাখির কঙ্কর নিক্ষেপে ধ্বংস হয়েছিল সেসময়কার 'পরাশক্তিটি'। সুরাটি শুনতে শুনতে আমি যেন চলে গেলাম রাসুল (সা.)-এর জন্মেরও আগের জামানাতে। আমি এখনো ঘোরের মধ্যেই আছি যে, আমি যা দেখছি এটি কি সুখস্বপ্ন, কল্পনা নাকি সত্যি?
এমএইচএস