Logo

ধর্ম

মহাকাশে নাসার রেকর্ড করা শব্দকে ‘ফেরেশতাদের জিকির’ বলা কি যুক্তিযুক্ত?

বেলায়েত হুসাইন

বেলায়েত হুসাইন

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৪৩

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সম্প্রতি মহাকাশে প্রথমবারের মতো শব্দ রেকর্ড করেছে। আগে ধারণা করা হতো, মহাকাশ যেহেতু বায়ুশূন্য স্থান তাই সেখানে শব্দ হওয়া সম্ভব না। ফলে মহাশূন্যে শব্দ রেকর্ডের খবর বিজ্ঞানে এক নতুন সংযোজন। 

নাসার গবেষকদের মতে, মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন কণা বা নক্ষত্রের বিকিরণের ফলে যে কম্পন বা ভাইব্রেশনের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই এই শব্দের উৎপত্তি। মূলত শুরুতে এ শব্দ ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক তরঙ্গ হিসেবে থাকে, যা পরবর্তী সময়ে শব্দতরঙ্গে রূপান্তরিত হয়। 

নাসার ‘আওয়ার ইউনিভার্স ইজ নট সাইলেন্ট এন্ড লিসেন টু দ্য ইউনিভার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নব আবিষ্কৃত মহাকাশীয় এ শব্দ নাসার অত্যাধুনিক গবেষণা সরঞ্জামের মাধ্যমে শনাক্ত ও রেকর্ড করা সম্ভব হয়েছে। 

নাসা এই শব্দকে বিজ্ঞানের চোখেই দেখেছে এবং সেভাবেই এর ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছে। কিন্তু খ্রিস্টান এক গবেষক একে দেখেছেন তার ধর্মের দৃষ্টি দিয়ে এবং এ ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেছেন যে, নাসা আবিষ্কৃত শব্দ শুনে তার মনে হয়েছে, এটি যেন একত্রে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের ব্রেগোরিয়া ট্র্যান্ট গাওয়ার মতো শব্দ। ব্রেগোরিয়া ট্র্যান্ট হলো- খ্রিস্টানদের এক ধরনের ধর্মীয় সঙ্গীত, যা দলবদ্ধভাবে গাওয়া হয়। 

খ্রিস্ট্রান ওই গবেষকের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অনেকেও এই শব্দকে ধর্মীয় রঙে উপস্থাপন করছেন এবং বলতে চাইছেন যে, নাসার আবিষ্কৃত এই শব্দ আসমানে ইবাদতরত ফেরেশতাদের জিকিরের আওয়াজ। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, আসলেই কি ওই শব্দ কোরআনে ফেরেশতাদের যে জিকিরের কথা উল্লেখ রয়েছে, সেই আওয়াজ কিনা! 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবর কথা বলেছে দেশের দুই গবেষক আলেমের সঙ্গে। তাদের একজন দেশের ঐতিহ্যবাহী ইসলামি ম্যাগাজিন মাসিক মদিনার বিভাগীয় সম্পাদক মাওলানা খালেদুজ্জামান। 

তিনি বলেছেন, এতদিন বিজ্ঞানীদের অবস্থান ছিল, মহাকাশে শব্দ নেই। অথচ হাদিস শরিফে আসমানে শব্দ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত। পবিত্র কোরআনে সুরা জ্বিনের মধ্যেও ওহী নাজিল হওয়ার সময় আসমানে কান লাগিয়ে জ্বিনদের ফেরেশতাদের কথোপকথন শোনার কথা উল্লেখ রয়েছে। দীর্ঘ দিন পর হলেও নাসার গবেষণাতে আসমানে শব্দ থাকার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেল। তবে নাসার প্রাপ্ত শব্দ যে ফেরেশতাদের আওয়াজ, তা ওহী ছাড়া নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। 

মাওলানা খালেদুজ্জামানের মতে, ‘ফেরেশতাদের জিকিরের আওয়াজে’র যে দাবিটি সামনে এসেছে, এটি উপেক্ষাও করা যায় না; বরং সম্ভাবনা রয়েছে। 

তিনি বলেন, এর কারণ, ইতোপূর্বে ফেরেশতাদের আওয়াজ শুনতে জ্বিনদের আসমানের সঙ্গে কান লাগিয়ে থাকার বিষয়টি সাব্যস্ত। মানে অনেক উপরে গেলে ফেরেশতাদের আওয়াজ শোনাটা অসম্ভব নয়। 

তবে এটিকে নিশ্চিতভাবে ফেরেশতাদের জিকিরের আওয়াজ বলে বিশ্বাস করতেও নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি। বলেছেন, এটি ধর্মীয় বিষয়, যা ওহী ছাড়া বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর শব্দটি অন্যকিছুর আওয়াজও হতে পারে, যা নাসা উল্লেখ করেছে।

এ বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ও দেশের বর্ষীয়ান গবেষক আলেম ড. এবিএম হিজবুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘নাসা আবিষ্কৃত শব্দ ফেরেশতাদের জিকিরের আওয়াজ হওয়া প্রশ্নবোধক।’ কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আসলে ফেরেশতাদের জিকিরের আওয়াজ কেমন, তা পূর্বের কারো কাছেই প্রতিষ্ঠিত ও রেকর্ডকৃত নয়। তাই এটিকে ফেরেশতাদের শব্দ বলা বোধগম্য মনে হয় না। 

তিনি আরও বলেন, ‘এমন সব বিষয়ের সঙ্গে ধর্মের রঙ লাগানো এক ধরনের উন্নাসিকতা। তাই আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, এসব ব্যাপারগুলো যদি সুস্পষ্টভাবে বেরিয়ে না আসে, তাহলে এরকম বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়। এতে করে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন।’

ড. এবিএম হিজবুল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা ইসরার ৪৪ নাম্বার আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মাখলুখ সবসময় তাঁর জিকির করতে থাকে। সেটা যেমন পৃথিবীতে হচ্ছে, তেমনি মহাশূন্যে ও আসমানে হচ্ছে। এজন্য শুধু এ সূত্রে এটিকে ফেরেশতাদের জিকির বলা বোধগম্য নয় এবং এটি নিয়ে নিউজ-প্রতিবেদন করাটাও অনুচিৎ। বরং এই নিউজ করা যেতে পারে যে, মহাকাশে শব্দের আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু এটিকে ফেরেশতাদের জিকির বলা একেবারে অবাঞ্ছনীয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ সাংবাদিক বলেন, যেসব গণমাধ্যম এটিকে ফেরেশতাদের আওয়াজ বলে প্রতিবেদন তৈরি করছে, তাদের উদ্দেশ্য আসলে ভিউবাণিজ্য। যা মোটেই উচিৎ হয়নি। কারণ, এটি সাধারণ পাঠকের সঙ্গে প্রবঞ্চনার পাশাপাশি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলা করার সামিল। প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের উচিৎ সাংবাদিকতার মানদণ্ড নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশের খবরের ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- [email protected] 

এইচকে/বিএইচ/এনআর/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর