Logo

ধর্ম

ইসলাম ও আলেম বিদ্বেষ : প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

Icon

মো. রুহুল আমীন খান

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:৫১

ইসলাম ও আলেম বিদ্বেষ : প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

বিদ্বেষ মানে হচ্ছে কাউকে অসহ্য মনে করা। তার প্রতি অন্তরে শত্রুতা ও ঘৃণা পোষণ করা। বিদ্বেষ মানুষের অন্তরের বিষয়। তথাপি মানুষের আচার, আচরণ, লেখালেখি ও কথাবার্তায় বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। মুসলামন হওয়া সত্ত্বেও কতিপয় মানুষের কথা ও লেখার মাধ্যমে অতিমাত্রায় ইসলাম ও আলেম বিদ্বেষ প্রকাশিত হয়। কারণ হিসেবে তারা দুয়েকজন আলেমের অপরাধের কথা তুলে ধরে। আর তাদের অপরাধের কারণে দেশের সকল আলেমকে দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করে। অথচ দুয়েকজন আলেমের অপরাধের কারণে সকল আলেমকে দোষী মনে করা, তাদের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ লালন করা নির্বুদ্ধিতা ছাড়া অন্যকিছু নয়।

মানুষ মাত্রই ভুল। আলেম হোক কিংবা শিক্ষক হোক, নায়ক হোক কিংবা নেতা হোক; কোনো মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। মানবিক কারণে যে কারো মাধ্যমে ভুল-ত্রুটি, এমনকি অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। অপরাধ করলে আইনানুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু একজনের ভুল বা অপরাধের কারণে সমপেশার বা সমশ্রেণির সবাইকে দোষী মনে করা যৌক্তিক হতে পারে না। কিন্তু আলেমদের ক্ষেত্রে এমনটাই করা হয়ে থাকে। কোনো একজন আলেমের অপরাধের দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় দেশের সকল আলেমের ওপর।

রাজধানীর নামকরা একটি স্কুলের সাবেক শিক্ষক পরিমল জয়ধরের মাধ্যমে তার ছাত্রী ধর্ষিত হয়। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তি হিসেবে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তাই বলে কি সকল শিক্ষকই ধর্ষক, সকল শিক্ষকই এর জন্য দায়ী? অবশ্যই না। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘এক্সেপশন ক্যান নট বি এক্সাম্পল।’ অর্থাৎ ব্যতিক্রম কখনো দৃষ্টান্ত হতে পারে না। কতিপয় লেবাসধারী আলেমের মাধ্যমেও অঘটন সংঘটিত হতে পারে। তাই বলে এর জন্য দেশের সকল আলেমকে দায়ী বা অপরাধী মনে করা যৌক্তিক হতে পারে না। অপরাধের দায় একমাত্র অপরাধীরই প্রাপ্য। সমপেশার বা সমশ্রেণির অন্যদের এর জন্য দোষী বলে প্রচার করা শান্তির পথ থেকে মানুষকে দূরে রাখার বৃথা আস্ফালন। 

শ্রদ্ধাভরা শ্রুতিমধুর ‘হুজুর’ শব্দটা বর্তমানে অবজ্ঞা প্রকাশের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। নাটকে, সিনেমায় পাঞ্জাবি পরা মানুষকে হুজুর চরিত্রে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। শুধু বিনোদন জগতেই নয়; সামাজিক জীবনেও হুজুররা অবহেলা অবজ্ঞার শিকার হচ্ছেন। বিভিন্নস্থানে তাদেরকে তাচ্ছিল্যের সুরে অবজ্ঞাভরে ‘হুজুর’ বলে সম্মোধন করা হয়। অফিস আদালতেও তাদের অবহেলা অবজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়। অনেকে আলেম-হুজুরদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। তাদের কিছু বোঝাতে গেলে হুজুরদের নিয়ে নেতিবাচক নানা দৃষ্টান্ত পেশ করে। অথচ সেগুলোর অধিকাংশ সংবাদই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা। 

যুগ যুগ ধরেই আলেমদের প্রতি রয়েছে দেশের মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা। তাই জনবিচ্ছিন্ন বামপন্থীরা তাদেরকে টার্গেট করে, সাক্ষ্য-প্রমাণহীন দোষত্রুটি ও অপরাধের কথা অবলীলায় প্রচার করে। ‘আষাঢ়ের গল্পের’ মতো আলেমদের তুচ্ছ অপরাধকে মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক বড় করে তুলে ধরে। এভাবে আলেমদের প্রতি জনগণকে বীতশ্রদ্ধ করতে চায়। সর্বদা তাদের কোণঠাসা করে রাখতে চায়। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি শ্রেণিও কম না, সুযোগ পেলেই তারা আলেমদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিতে চায়। বিগত সরকারের আমলে আলেমদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলে প্রথম ধাপেই তাদের ১৫-২০দিনের রিমান্ডে নিয়ে নেওয়া হত। ডান্ডা-বেড়ি পরিয়ে তাদেরকে আদালতে তোলা হত। বিপরীতে বাস্তব সন্ত্রাসীদের আদালতে তোলা হত রাজপুত্রের মতো।

সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নির্যাতন-নিপীড়িনের বিরুদ্ধে কথা বলেন। কিন্তু আলেমসমাজের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেন না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এক্ষেত্রে নিরব ভূমিকা পালন করে। আলেমদের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবার সোচ্চার হওয়ার দরকার । 

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ। তাই ধর্মের প্রতি এদেশের অধিকাংশ মানুষের রয়েছে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ধর্ম নিয়ে কতিপয় দুষ্টু চরিত্রে লোক প্রায়ই বিরূপ মন্তব্য করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়। জনতার আন্দোলনের মুখে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তখন সুশীল হিসেবে পরিচিত কথিত বুদ্ধিজীবীরা দেশে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাক -স্বাধীনতার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে প্রচারণা চালায়। অথচ আলেমরা যখন তাদের দাবি জানাতে গিয়ে হামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হন, তখন সুশীল হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীরা নিরব থাকেন। এ দ্বিচারিতার অবসান হওয়া দরকার।

লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর