ইসলামে ইমাম-মুয়াজ্জিনের মর্যাদা ও নেতৃত্বের গুরুত্ব

মাওলানা তানবির শেখ
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩১
-67aca2bbbf7df.jpg)
ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবনব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি বিষয় এবং অবস্থানকে গভীরভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ধর্মীয় নেতৃত্ব ও ভূমিকা, বিশেষত ইমাম এবং মুয়াজ্জিনদের মর্যাদা। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে এই দুটি পদবির জন্য নির্দিষ্ট মর্যাদা, দায়িত্ব এবং অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ইসলামের কাঠামোতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইমামদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলিমদের ইমাম নিযুক্ত হয়, তাকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন তিনি তাদের সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেন এবং তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের উপকারের দিকে উৎসাহিত করেন।’ (সুনান আবু দাউদ)
এ ছাড়াও অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইমাম হলেন- (সালাতের সার্বিক) জিম্মাদার। আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ, ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৭)
ইমামের উপর যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে, তা অত্যন্ত কঠিন। মুসলিম হিসেবে আমরা তাদের সর্বোত্তম পরামর্শদাতা ও ধর্মীয় পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখি। ইমামকে তার অনুসারীদের প্রতি সৎ, ন্যায়পরায়ণ এবং সত্যবাদী হতে হবে।
ইমাম কোনো দিন মজুর কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নন, ইমাম হলেন নেতা। ইমাম-মুয়াজ্জিন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তারা সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা মানুষের স্তরভেদ অনুপাতে তাদের সম্মান দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৪২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান দেয়, সে জান্নাতে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থান পাবে। (সহীহ মুসলিম) এটি প্রমাণ করে যে মুয়াজ্জিনদের আজান দেওয়ার কাজটি শুধুমাত্র একটি দায়িত্ব নয়; বরং এটি তাদের জন্য এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আজান শোনা এবং তা গ্রহণ করা মুমিনদের জন্য অনেক ফজিলত ও বরকতপূর্ণ কাজ।
ইমাম ও মুয়াজ্জিনের সম্পর্ক একে অপরের পরিপূরক। যেখানে ইমাম নামাজের নেতৃত্ব দেন, মুয়াজ্জিন তার আগমন ঘোষণা করেন। একে অপরের কাজ একটি সুসংহত ব্যবস্থা তৈরি করে, যা মুসলিম সমাজকে একটি সুশৃঙ্খল এবং সংগঠিত জীবন যাপনের পথ দেখায়। তাদের যৌথ কর্মকাণ্ড একে অপরকে পূর্ণতা দেয় গোটা মুসলিম উম্মাহের মধ্যে একতা ও ধর্মীয় সচেতনতা তৈরি করে।
ইমাম ও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা আমাদের জীবনে আল্লাহর আইন ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেন। তাদের দায়িত্ব শুধু নামাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তারা মুসলিম সমাজের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সুতরাং আমাদের উচিত তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, তাদের অপমান ও অসম্মান হয় কিছু থেকে বিরত থাকা এবং তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে আমরা দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো করতে গিয়ে তাদের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব তা যেনো ভুলে না যাই। আল্লাহ রব্বুল আলামীন এই কথাগুলো থেকে আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন!
- বাংলাদেশের খবরের ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- [email protected]
লেখকের মেইল : [email protected]
বিএইচ/