Logo

ভিডিও

বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে

দাগি অপরাধীরা প্রকাশ্যে এসেই খুনোখুনিতে

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯

প্রদেশে বিভক্ত হচ্ছে দেশ

বাংলাদেশের খবরের প্রথম সংবাদে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে কাজ করছে। জনমুখী প্রশাসন গঠনের লক্ষ্য নিয়ে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন জনপ্রশাসন গঠন করতে চায় কমিশন। এ জন্য তারা সুপারিশ প্রতিবেদন প্রস্তুত করছেন। তবে সুপারিশ প্রতিবেদনে কী থাকছে তা এখনই বলতে চাচ্ছেন না কমিশন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কমিশন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সব কাজ সম্পন্ন করেছে। কমিশনের সদস্যরা জনগণের মতামত নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। কোনটি রাখা হবে, কোনটি রাখা হবে না তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংস্কার কমিশন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাঁচ বা ছয়টি গুচ্ছের (ক্লাস্টার) সুপারিশ করার পরিকল্পনা করছে যেখানে নির্দিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করবেন। এছাড়া সংস্কার কমিশন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা ৩০ বা এর নিচে নামিয়ে আনার প্রস্তাব আসতে পারে এবং দেশকে চারটি প্রশাসনিক প্রদেশে বিভক্ত করার প্রস্তাব আসতে পারে কমিশন থেকে। বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা- এ চার প্রদেশ গঠনের সুপারিশের চিন্তা করছে কমিশন। সংস্কার কমিশন উপসচিব পদের জন্য একটি নতুন পদোন্নতির বিধান চালু করতে চাইছে, সে অনুযায়ী প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা উপসচিব পদে পদোন্নতি পাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব

প্রথম আলোর প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ দিয়েছে। ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রশ্নে বিএনপিসহ সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো এবং অংশীজনদের কোনো দ্বিমত নেই। তবে কীভাবে সেই ক্ষমতার ভারসাম্য আনা যাবে, সে ব্যাপারে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ করতে চাইছে, সেখানে আলোচনা করে উপায় বের করার চেষ্টা থাকবে।

বিএনপি যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে সেই ভারসাম্য আনা যাবে, সে ব্যাপারে বিএনপি ও অন্য দলগুলো এখনো বিস্তারিত কিছু বলেনি। অবশ্য সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, তাদের বিস্তারিত প্রতিবেদনে বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের কাজ চলছে। এরপর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়বে। কমবে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা।

এখন প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে অন্য যেকোনো কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে হয়। সংবিধানের এই জায়গায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। কিছু সাংবিধানিক পদে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়ার কথা বলেছে তারা। এসব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হবে না।

১৫ জানুয়ারি নিজেদের সুপারিশের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, কমিশন রাষ্ট্রপতির কিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্বের কথা সুপারিশ করছে। এই বিশেষ কার্যাবলি বা সংবিধানে উল্লেখিত বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে কাজ করবেন।

পরিকল্পিত শ্রমিক অসন্তোষের মুখে পোশাক খাত

আমার দেশ পত্রিকার প্রথম সংবাদে বলা হয়েছে, দেশের পোশাক খাতে বড় ধরনের নাশকতার ছক আঁকা হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় দাবি-দাওয়া বা তুচ্ছ ইস্যুকে সামনে এনে শ্রমিকদের উসকে দিতে কাজ করছে একটি মহল। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একের পর এক কারখানায় শ্রমিক উসকে দেওয়ার নেপথ্যে কাজ করছে পোশাক খাতের অন্তত দেড় শতাধিক ট্রেড ইউনিয়ন।

ঢাকার আশুলিয়া, গাজীপুরের কোনাবাড়ী, শ্রীপুর ও নারায়ণগঞ্জকেন্দ্রিক এসব ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রমকে পোশাকশিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। তারা দাবি করছেন, সরকারের নমনীয় নীতির কারণে বিভিন্ন নামের নিবন্ধনহীন শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকে অর্থের জোগান দিচ্ছেন আওয়ামী সমর্থক ঝুট ব্যবসায়ী ও বড় কয়েকটি গ্রুপের মালিকরা।

যেসব গ্রুপের মালিক গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতার সুযোগ খুঁজছেন, তাদের কারখানাগুলো আগেই রুগ্‌ণ অবস্থায় ছিল। আবার কোনো কোনোটি বিগত সরকারের আমলেই ব্যবসা গুটিয়ে অর্থ পাচার করে ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হয়ে আছে। মূলত রাজনৈতিক ফায়দা নিতেই এসব শ্রমিক সংগঠনের পেছনে অর্থ ঢালছেন জেলে থাকা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত আগস্ট থেকে জানুয়ারির ২২ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৭০টি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা যায়। শ্রমিকদের উসকে দিয়ে আন্দোলনের পর বন্ধ করে দেওয়া হয় ৩৩টি কারখানা। এসব কারখানার ৩১ হাজার ৩৫০ জন শ্রমিক এখন বেকার।

বিজিএমইএর তথ্য মতে, ঢাকার আশুলিয়া, গাজীপুরের কোনাবাড়ী, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কয়েকটি অঞ্চল এখন চরম অনিরাপদ। বিজিএমইএ নিয়মিত তাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক অসন্তোষ বা কারখানার অন্য বিষয়গুলো মনিটরিং করে থাকে। এই মনিটরিং সেলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে বলেন, ৫ আগস্টের পর যেসব কারখানায় নিয়মিত শ্রমিক অসন্তোষ চলছে এগুলোর সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।

তিনি কয়েকটি কারখানার নাম উল্লেখ করেন বলেন, যেমন হা-মীম গ্রুপ, মণ্ডল গ্রুপ, ন্যাচারাল ডেনিম, নাসা গ্রুপ, এনভয় গ্রুপ, ডেকো গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, স্টার্লিং গ্রুপের পোশাক কারখানাগুলোতেই শ্রমিক অসন্তোষ বেশি বলে জানান। তবে এসব কারখানার শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়গুলো খুবই তুচ্ছ।

মাঠের সব নিয়ন্ত্রণ চান ডিসিরা

কালের কণ্ঠের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, আসন্ন জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিন শতাধিক প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব ও সুপারিশ পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে।

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনের ডিসি সম্মেলন শুরু হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওই দিন তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যুক্ত থাকবেন। বিকেলে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অধিবেশনগুলো শুরু হবে।

মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। তারাই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

একজন ডিসি জেলার অন্তত ৩০২টি কমিটির প্রধান। এর পরও মাঠের আরো ক্ষমতা চান তাঁরা।

ডিসিরা নতুন করে যে ক্ষমতা চাইছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জেলা পুলিশের এসিআর দেওয়া, কনস্টেবল নিয়োগ কমিটিতে তাঁদের প্রতিনিধি রাখা, ডিসির অধীনে বিশেষ ফোর্স গঠন, অপরাধ ডেটাবেইস ও এনআইডি ডেটাবেইস সার্ভারে ডিসি ও ইউএনওদের প্রবেশাধিকার, উপজেলা পরিষদের কর্মচারী নিয়োগ ও বদলির ক্ষমতা এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের বদলে উপজেলার সরকারি বাসা বরাদ্দের ক্ষমতা।

বেড়েছে নানা অপরাধ

অসহায় পুলিশ

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান সংবাদে রয়েছে, সারা দেশে বাড়ছে নানা অপরাধ। চাঁদাবাজি, দখল, ছিনতাই, মব জাস্টিস, সাইবার ক্রাইম, প্রতারণা, আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে দেশের মানুষ শঙ্কিত। কোনোভাবেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সীমিত সামর্র্থ্য দিয়ে পুলিশ চেষ্টা করলেও অনেক ক্ষেত্রে এ বাহিনীর সদস্যরা অসহায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামান্য অপরাধেও মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে মানুষের অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া, দায়িত্বশীলদের জবাবদিহির অভাব এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন তাঁরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘৫ আগস্টের পর পুলিশ একটা ট্রমার মধ্যে ছিল। এখনো পুরো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই উন্নতির দিকে। ছিনতাই বেড়েছে। তবে ছিনতাই-ডাকাতি রোধে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জনমনে স্বস্তি ফেরাতে কমিউনিটি পুলিশকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।’

১ জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ঢাকা থেকে গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজ বাড়ি ফেরেন হাসিবুল ইসলাম (৪০)। বাসার সামনে গাড়ি দাঁড় করানোর পরপরই ৮-১০ মাদকাসক্ত কিশোর গাড়ির ভিতরে তাঁর স্ত্রী, শ্যালকের স্ত্রীকে দেখে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি শুরু করে। বাধা দিতে গেলে তারা হাসিব এবং তাঁর শ্যালক হানিফ ও গাড়িচালক শিমুলের ওপর হামলে পড়ে। জীবন রক্ষায় বাড়ির ভিতর ঢুকেও বাঁচতে পারেননি হাসিব। ২২ জানুয়ারি মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে রুবেল (৩২) নামে এক যুবককে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল জাদুরানী বাজারের একটি বট গাছে দুই হাত বেঁধে ঝুলিয়ে নৃশংসভাবে পেটানো হয়। একপর্যায়ে তার দেহ নিথর হয়ে পড়ে। গুরুতর অবস্থায় হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রুবেল স্থানীয় গোগর গ্রামের পটুয়াপাড়ার মো. খলিলের ছেলে।

কেবল ওপরের দুটি ঘটনা নয়। এমন ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। খোদ রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় সাম্প্রতিককালে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদতে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া হালে জামিনে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আবারও তৎপর হয়ে পড়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে সারা দেশে ডাকাতি, চুরি, দস্যুতা, সিঁধেল চুরির মামলা বেড়েছে। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ডাকাতি মামলা বেড়েছে ২০টি। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর ও নভেম্বরে বেড়েছে আরও বেশি।

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বড় অস্বস্তি তৈরি করেছে ছিনতাই। যত্রতত্র ছিনতাই হচ্ছে। পুলিশ ও ঢাকার আদালতের তথ্যানুযায়ী, ঢাকার ৫০ থানা এলাকায় ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিনে অন্তত ৩৪ জন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মামলা করেছেন। এ সময় একজন ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও চারজন। ৫ আগস্ট থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে ছিনতাইকারীর হামলায় নিহত হয়েছেন সাতজন। ১৮ ডিসেম্বর মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে ছিনতাইকারীর হামলায় নিহত হন কামরুল হাসান। ১৫ ডিসেম্বর মগবাজারে হাবিব উল্লাহ নামে এক তরুণ ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার রাতে কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ এলাকায় সজল রাজবংশী নামে ব্যবসায়ীকে গুলি করে প্রায় ৭০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া দুর্বৃত্তরাও কিশোর বয়সি।

দাগি অপরাধীরা প্রকাশ্যে এসেই খুনোখুনিতে

সমকালের প্রধান এ সংবাদে বলা হয়েছে, রাজধানীর পল্লবীর টেকেরবাড়িতে গেল সোমবার দিনদুপুরে ১০-১২  দুর্বৃত্ত মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু নামে এক যুবককে চাপাতি ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। বাবুর স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এই হত্যায় কলকাঠি নাড়েন দাগি সন্ত্রাসী মুসা শিকদার ওরফে সুমন শিকদার। এ ঘটনায় মুসাকে প্রধান আসামি করে পল্লবী থানায় মামলাও করেন বাবুর স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্রসহ ১১টি মামলা রয়েছে।

২০২২ সালে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসেন মুসা। এর পর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ফের দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অপরাধ জগৎ।

মুসার মতো অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে এসেই ফের জড়াচ্ছেন অপরাধে। এতে বাড়ছে খুনোখুনি। চাঁদা ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাত ছাড়াও এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর হামলা করছে। স্থানীয়রা বলছেন, অন্তর্কোন্দলের ঘটনায় বাবুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাবুর বিরুদ্ধেও দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে।

দাগি অপরাধীর অপতৎপরতার পাশাপাশি একের পর এক ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিতে জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী সজল রাজবংশী আহত হয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণ ও ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর আগে মঙ্গলবার গুলশানে ব্যবসায়ী দুই ভাইকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাত ৯টার দিকে গুলশান-২-এ হামলার শিকার হন তারা।

১০ জানুয়ারি রাতে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে এহতেশামুল হক নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ওয়াহিদুল হাসান নামে আরেক ব্যবসায়ীর ওপর একই সময়ে হামলা হয়। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এহতেশামুলকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অন্তত ২০ জন ছিলেন। তারা এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার বিপণিবিতান, ইন্টারনেট, কেবল টিভির সংযোগ (ডিশ) ও ফুটপাতের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে লুটপাট

সূচকগুলো উদ্বেগজনক

যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাটের চিত্র আরও দৃশ্যমান হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংক খাতের মূল সূচকগুলো ‘উদ্বেগজনক’ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই ‘ব্যাংক খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে’। কারণ, খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাতের সম্পদের মান নিম্নমুখী হয়েছে। ঋণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। মূলধন কমার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে ব্যাংক খাতের এমন নেতিবাচক চিত্র পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ব্যাংক খাত সংস্কারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। তাদের কাজ চলছে। বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ফলে আমানত বাড়ছে। ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লুটপাটের ক্ষত সেভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এখন ক্ষতগুলো প্রকাশিত হচ্ছে। এতে দৃশ্যমান হচ্ছে লুটপাটের প্রভাব।


প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাত উল্লেখযোগ্যভাবে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। মূল সূচকগুলো উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে গেছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি শতকরা হারও বেড়েছে। প্রভিশনে হার কমায় নিট খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকের ঋণ এবং আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ গত জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। আগে কখনো এত বেশি হারে বাড়েনি। খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মানকে নিম্নমুখী করেছে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের করেছে। এটি আগামী এপ্রিল থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা। এটি কার্যকর হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণের হার আরও বেড়ে যাবে। তখন সংকট আরও তীব্রতর হতে পারে।

এনজে/এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর