Logo

নির্বাচিত

বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে

অপরাধী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০২

অপরাধী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত

ছবি : সংগৃহীত

জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৫ 

সব নাগরিককে সুরক্ষা দেব 

বাংলাদেশের খবর প্রধান প্রতিবেদন করেছে, সরকারকে একটা 'খেলার টিম' অভিহিত করে জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই সরকারের ছয় মাস চলে গেল, এটাকে আমি বলছি সরকারের প্রথম পর্ব। তাই প্রথম পর্বের কোনো ভুল থাকলে, সেটাকে ঠিকঠাক করে, এখন আমরা খেলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা দেশের সব নাগরিককে সুরক্ষা দেব। কে কোন ধর্মে বিশ্বাস করে সেটা বিবেচ্য নয়। গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মস্ত বড় ইস্যু। এটা আমাদের এখন এক নম্বর বিবেচ্য বিষয়। 


দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা এখন থেকে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করব, সেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও দেশের মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করা। নারী ও শিশু এবং সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কে কোন মতবাদে বা রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী সেটা বিবেচ্য নয়। কারণ সরকার দেশের মানুষের সরকার। তাই তাকে সুরক্ষা দেওয়া আমার কাজ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন তিনি। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া মস্ত বড় দায়িত্ব। এই ইস্যুতে সারা দুনিয়া নজর রাখছে আমাদের ওপরে। একটা ছোট্ট ঘটনা সারা দুনিয়ায় চাউর হয়ে যায়। আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বলেছি আপনারা সংখ্যালঘু হিসেবে কোনো কিছু দাবি করবেন না, দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করবেন। কারণ দেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধান আপনাকে যে অধিকার দিয়েছে সেই অধিকার রাষ্ট্রের কাছে আপনার প্রাপ্য। এটা দাবি নয়, আপনার পাওনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে অধ্যাপক ইউনুস বলেন, বাজার দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটা নিয়ে জেলা প্রশাসকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে পারে কার জেলায় বাজারদর কতটা ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে। কোনো চাঁদাবাজি বা অন্য যেসব অসুবিধা থাকে সেগুলো দূর করতে হবে।

অটোরিকশা সেবায় নৈরাজ্য জিইয়ে রাখতে আন্দোলন, জিম্মি নগরবাসী 

প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ও মালিকের জমার নির্ধারিত হার রয়েছে। সরকার সেই ভাড়া ও জমার হার কার্যকর করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু রাস্তা অবরোধ করে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করলেন অটোরিকশার চালকেরা। নেপথ্যে ছিলেন মালিকেরাও। 

জরিমানা ও মামলা করা ঠেকাতে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গতকাল রোববার সকালে ঢাকার দিবসে রামপুরার বনশ্রী, মিরপুর, মিরপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে, গাবতলী, আগারগাঁও, তেজগাঁও, শনির আখড়া, দোলাইরপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকেরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে ওই সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। 

যেমন শাওকাত হোসেন ও মাজেদা বেগম গতকাল সকালে সাভার থেকে বাসে ঢাকার নিউমার্কেটের দিকে আসছিলেন। গাবতলী এসে বাসটি অবরোধে আটকা পড়ে। তখন যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শাওকাত ও মাজেদা হেঁটে এবং রিকশা করে নিউমার্কেটে পৌঁছান। 

শাওকাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চালক চলাচল বন্ধ রাখতে পারেন। রাস্তা অবরোধ করিবেন মালিকদের কেন? আইন মানতে বলায় সড়ক অবরোধ করে ভোগান্তি তৈরি তো মানুষকে জিম্মি করার শামিল। 

সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অটোরিকশাচালকদের অবরোধের কারণে গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে কয়েকজন উপদেষ্টা সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি। 

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে দেওয়া চিঠি প্রত্যাহার করে।

ফলে যাত্রীদের আগের মতোই বেশি ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হবে এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে অটোরিকশাচালকদের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হবে। মালিকেরাও চালকদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করতে থাকবেন। 

অপরাধী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত

আমার দেশ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এই চাপ আরো বাড়বে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং আইনজ্ঞরা মনে করছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে যুক্ত করা গেলে নিশ্চিতভাবেই ভারত চাপে পড়বে। জাতিসংঘের রিপোর্টে ভারতের আশ্রয়ে থাকা হাসিনাকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের প্রধান খুনি হিসেবে চিহ্নিত করার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, আমরা শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের ফিরিয়ে এনে গণহত্যার দায়ে বিচার করব। অর্থাৎ ভারতকে এখন বিচারের জন্য হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে হবে।

বিচারের জন্য হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এতদিন এক রকম নীরব ছিল। জাতিসংঘের রিপোর্ট প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠান, গণহত্যার দায়ে তার বিচার হতে হবে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও জুলাই গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা যেন কোনোভাবেই দায়মুক্তি না পায়।

উল্লেখ্য, জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতিসংঘ গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট গত ১২ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। রিপোর্টে জুলাই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা বিতাড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে বলা হয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা, নির্দেশনা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে জুলাই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। তিনিই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের বিক্ষোভ দমনে হত্যার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, বিক্ষোভকারী ছাত্রদের গুলি করে হত্যার পর তাদের লাশগুলো গুম করে ফেলো।

জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, কমপক্ষে এক হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১৩ ভাগ শিশু। আহতের সংখ্যা হাজার হাজার।

জাতিসংঘের এ রিপোর্ট প্রকাশের পর বাংলাদেশের ভেতরে এবং বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার এবং হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরদার হচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক জুলাই গণহত্যার তদন্তের জন্য গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে জুলাই বিক্ষোভ দমনে যে ধরনের হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কেউ যেন দায়মুক্তি না পায়।

মানবাধিকার কমিশনার জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, প্রকাশিত রিপোর্টের বাইরে আরো অনেক তথ্য রয়েছে। আমরা এসব তথ্য দিয়ে বিচারকাজে সহায়তা দিতে চাই। এ বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। ভবিষ্যতে যেন আর কখনো এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য জড়িতদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

বিশেষ ফোর্স চান ডিসিরা

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে চান জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। সে কারণে চলমান ডিসি সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে এক গুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে বাছাইকৃত ১১টি প্রস্তাবসহ এ সম্মেলনে মোট ৩৫৪টি প্রস্তাব উত্থাপন হবে বলে জানা গেছে। গতকাল থেকে শুরু হওয়া ডিসি সম্মেলন শেষ হবে আগামীকাল।

ডিসি সম্মেলনের প্রস্তাব ঘেঁটে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। মাগুরা জেলা প্রশাসক প্রস্তাব দিয়েছেন সব জেলায় ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠনের জন্য। এ ফোর্স জেলা প্রশাসকের অধীনে মোবাইল কোর্ট ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা, ত্রাণ বিতরণ, দুর্যোগকালীন সেবা দেওয়াসহ জরুরি কার্যক্রমে অংশ নেবে। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পর্যায়ে অবস্থিত বাহিনীগুলোর কার্যালয়ের দূরত্ব, প্রস্তুতিমূলক কারণে সময় ক্ষেপণ হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ও জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়। জানা যায়, তার এ প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মনে করছে, জেলা প্রশাসকের অধীনে ১৫ জনের এ ধরনের একটি ফোর্স থাকতে পারে।

মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম উত্থাপিত প্রস্তাবে বলেছেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা নিজে বা তার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্ট, উচ্ছেদ অভিযান, বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ ও দুর্যোগে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার কাজ করেন। এসব কাজ প্রায়ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। নিজস্ব সুরক্ষা ও এ ধরনের জরুরি সেবা কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য জেলা প্রশাসকের অধীনে একটি ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠন করা যেতে পারে। এ ছাড়া অপরাধ ডেটাবেজ ও ন্যাশনাল আইডি ডেটাবেজে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রবেশাধিকার চেয়েছেন ডিসিরা। বর্তমানে এসব ডেটাবেজে শুধু জেলা ও উপজেলার পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। এ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওরা তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে জেলা বা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জেলা ও উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উল্লিখিত ডেটাবেজে প্রবেশাধিকার দেওয়া হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। 

এ ছাড়া ডিসিরা ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯-এর বিধিমালা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ আইন প্রণয়নের পর ওই আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগের স্বার্থে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিধিমালা প্রণীত হয়। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯ প্রণীত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিধিমালা তৈরি করা হয়নি। আইনটির যথার্থ কার্যকারিতার স্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিধিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। মোবাইল কোর্ট আইনের কিছু ধারার অর্থদন্ড যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন চাঁদপুরের ডিসি।

মূল দায়দায়িত্ব রাজনীতিকদেরই

কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে ঐকমত্যের প্রয়াস শুরু হওয়ার পর এর প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়ন নিয়ে নানা আলোচনা চলমান। ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা করেও রাজনৈতিক নানা মতাদর্শের কারণে কতটুকু ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে।

ঐক্যপ্রক্রিয়ার বিষয়টিকে যেমন ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে, আবার নানা প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। কেউ কেউ বিষয়টিকে জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলছেন।

অনেকে বলছেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে অনেক বিষয়ে সমর্থন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জও। কারণ কোন দল কী সুপারিশ করল, তা প্রকাশ করা হবে। ফলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গেলে তাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। 

এই প্রক্রিয়াকে সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্যদিকে সংস্কার প্রশ্নে সরকারের এই প্রয়াসকে একটি সূচনা পর্ব হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে এটি যে বেশ কয়েক মাসের একটি প্রক্রিয়া, তা অনুধাবন করা যাচ্ছে।

শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে প্রথম বৈঠক করে। এতে বিএনপি, জামায়াতসহ ২৭টি দল ও জোটের প্রায় ১০০ রাজনৈতিক নেতা অংশ নেন।

বৈঠকের বিষয়ে পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কালের কণ্ঠের কথা হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ সংস্কার কমিশনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যে তাদের মনে হয়েছে, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা করতে চায় সরকার। বিভিন্ন দল ও সামাজিক শক্তির সঙ্গে পৃথকভাবে বসবেন তারা। তবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব হবে না। সে অবস্থায় সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, শুধু যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হলো, সেগুলোকেই কি বাস্তবায়ন করা হবে—এমন নানা প্রশ্ন তাদের মনে এসেছে।

রাজনৈতিক চাপ থেকে নিস্তার চান ডিসিরা

সমকাল পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, একটি রাজনৈতিক শক্তির পতনের পর আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি ফিরে এসেছে। আর প্রশাসনকে সব সময় এই রাজনৈতিক শক্তির চাপেই থাকতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। এই সরকারকে সফল হতে হলে রাজনৈতিক শক্তির চাপ কমাতে হবে। 

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বালুমহাল, হাটবাজার ইজারা, সরকারি সম্পত্তি দখলসহ বিভিন্ন খাতে টাকার অবৈধ লেনদেন  হয়েছে বড় পরিসরে। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনসহ সব ক্ষেত্রে করা হয়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। ফলে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বে বড় ধাক্কা খেতে হয়েছে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি)। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি যেন আর হতে না হয়, সে জন্য আইনের শাসন ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে নিস্তার চান বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিরা। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা প্রণয়ন ও সংস্কার চেয়েছেন তারা। 

গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তিন দিনের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় ডিসিরা এসব বিষয় তুলে ধরেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

সম্মেলনের মুক্ত আলোচনায় একাধিক বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি  বলেছেন, মাঠ প্রশাসনকে সেবামুখী করতে পেশাগত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা জরুরি। সংস্কারের আগে সমস্যার মূলে গিয়ে তা সমাধান করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৬ মাস পরও মাঠ প্রশাসন কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক করতে পারছে না, সেই উত্তর খুঁজতে হবে। এ কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, ন্যায্য দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া এবং মানুষের সব ধরনের সেবা নিশ্চত করা যাবে। আট বিভাগীয় কমিশনার ও ১২ ডিসি মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। 

প্রায় সব বিভাগীয় কমিশনার বলেন, গত ৫ আগস্টের পর মাঠ প্রশাসন পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে। সব জেলার ডিসি, এসপিসহ অন্য কর্মকর্তারা একে অপরের পরামর্শ নিয়ে কাজ করছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনো সময় মাঠ প্রশাসনে এমন সমন্বয় ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক জেলায় ডিসি-এসপিরা দু’ভাগে বিভক্ত ছিলেন। তবে এখন অনেক ভালো সমন্বয় থাকার পরও রাজনৈতিক শক্তির কারণে মাঠে কাজের গতি কম। 

আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে নৌ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নদীপথে মাদক চোরাচালান, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ হচ্ছে। এসব অপরাধ মোকাবিলার জন্য নৌ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। 

মিলেমিশে সাড়ে ৩ লাখ পিস বিক্রি

এসপির ইয়াবা কারবার

যুগান্তর পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, অবিশ্বাস্য হলেও খোদ পুলিশ সুপারের সম্মতি নিয়েই বড় ধরনের ইয়াবা চালান বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রির মোটা অঙ্কের টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন এসপিসহ পুলিশের দুর্নীতিপরায়ণ কতিপয় সদস্য। এমনকি ঘুসের ভাগ হিসাবে সোর্স নামধারী চাকরিচ্যুত দুই পুলিশ কনস্টেবলকে দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার পিস ইয়াবা। অভিযানে আটক হওয়া চারজনের মধ্যে তিন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়েও দেওয়া হয়। গত ৬ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনাটি ঘটেছে দেশের ইয়াবা প্রবেশের অন্যতম রুট হিসাবে পরিচিত কক্সবাজারের রামুতে। 

এদিকে যুগান্তরের অনুসন্ধানে এমন ভয়াবহ অপরাধের ঘটনা ধরা পড়ার পর প্রথমে অস্বীকার করেন অভিযুক্তরা। তবে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ থাকায় পরে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার অপচেষ্টা করেন খোদ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ। এসপির নির্দেশে ডিবির ওসি জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করে সব অভিযোগ স্বীকার করেন এবং রিপোর্ট বন্ধ করতে ব্যাগভর্তি মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে আসেন। যুগান্তরের হাতে রিপোর্টের সপক্ষে অন্য প্রমাণাদি ছাড়াও এসপি, দুজন এএসপি এবং ওসিসহ বেশ কয়েকজনের ৫০ মিনিটের অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে। 

আত্মসাৎ ও বিক্রি হয় যেভাবে : তথ্যানুসন্ধান ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৬ জানুয়ারি ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া থেকে ৪ লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ টয়োটা কোম্পানির ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়ি (নম্বর : ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-৬২০৯) জব্দ করা হয়। এ সময় গাড়িতে থাকা ৪ জনকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি জাহাঙ্গীর আলম ও এসআই সমীর গুহের নেতৃত্বে ডিবির একটি অভিযানিক টিম। তবে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাৎক্ষণিক তিন ইয়াবা কারবারিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গুরুতর এ অপরাধ আড়াল করতে অভিযানে দেখানো হয় চকরিয়া থানাধীন ডুলহাজারার ইউনিয়ন। সেখানে ১ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা জব্দ এবং ইয়াবা বহনকারী গাড়ির চালক ইসমাইলকে গ্রেফতার দেখিয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা করা হয় (মামলা নং- ১৬)। মামলার বাদী করা হয় এসআই সমীর গুহকে। নিয়মানুযায়ী জব্দ করা গাড়ি চকরিয়া থানায় হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু তা না করে জেলা পুলিশ লাইনে এনে রাখা হয়। 

অভিযানে ডিবির ওসি জাহাঙ্গীর আলম, এসআই সমীর গুহ, কনস্টেবল/৫১১ জাহিদ হাসান, কনস্টেবল/১৩৭৩ মো. সাইফুল হাসান, কনস্টেবল/১১৯১ রেজাউল করিম, কনস্টেবল/৬৫৬ মোহাম্মদ ইরফান (ওসি ডিবির একান্ত মুন্সি) এবং রিয়াজ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। যারা সবাই মাদক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত এবং টাকার ভাগ নিয়েছেন। 

এদিকে অভিযান ধামাচাপা দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো প্রেস রিলিজ বা সংবাদ সম্মেলন করা হয়নি। অথচ ৫০০ পিস ইয়াবা জব্দের ঘটনায় কক্সবাজার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ অন্তত ২০ জন সাংবাদিককে নিউজ করার জন্য প্রেস রিলিজ পাঠান। কিন্তু সম্প্রতি ৫ লাখ ইয়াবা চালান আটকের পর কোনো সাংবাদিককে জানানো কিংবা কোনো প্রেস রিলিজও দেওয়া হয়নি। ফলে সংবাদমাধ্যমে অভিযানের খবর প্রকাশিত হয়নি। এ রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়েই পুলিশের মাদক বিক্রির ভয়ানক তথ্য যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর