Logo

নির্বাচিত

বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে

আপন পাপেই ধরাশায়ী

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩০

আপন পাপেই ধরাশায়ী

শাস্তির জালে রাতের ভোটের কারিগররা

আপন পাপেই ধরাশায়ী

বাংলাদেশের খবর প্রধান প্রতিবেদন করেছে, ক্ষমতায় রাখতে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করেছিলেন তৎকালীন দায়িত্বশীল আমলা, পুলিশ ও শতাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বিশেষ করে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, রাতে ভোট নেওয়ার অভিযোগ আন্তর্জাতিকভাবেই আলোচিত ও স্বীকৃত। এসব নির্বাচনের কারিগরদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট ২৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


দ্রুত আরও কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন (ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হন), তারা নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৪৩ জনকে ওএসডি করা হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম তাদের। আর যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি, তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে দেওয়া হচ্ছে। আর যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে, তাদের বিষয়গুলো দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে। 


এদিকে এসব অনিয়মের পেছনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পদে কর্মরত কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সেসব কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দসহ অন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তদন্ত শুরু করেছে।

নতুন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বেও থাকছেন সাবেক সমন্বয়কেরা 

প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে নতুন যে ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে, তার সম্ভাব্য নাম ‘বিপ্লবী ছাত্রশক্তি’। এ সংগঠনের নেতৃত্বে থাকছেন কার্যক্রম স্থগিত হওয়া ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র সাবেক নেতারা। তাঁদের পাশাপাশি এ সংগঠনের সঙ্গে আরও যুক্ত হচ্ছেন ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগী এবং আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাধ্য হয়ে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া কোনো না কোনোভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ততা ছিল, এমন শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ নতুন সংগঠনে থাকছেন। তবে শিবিরের পদধারী কোনো নেতা এই সংগঠনে যুক্ত হচ্ছেন না। ছাত্রসংগঠনটির চারজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির সমন্বয়কদের বড় অংশই ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতা। আন্দোলনের প্রথম পর্বে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনে ১ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীদের অনেকে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ তখন ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগও করেছিলেন। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। যদিও তখন শিবিরের প্রকাশ্য কার্যক্রম না থাকায় তাঁরা সাংগঠনিক পরিচয়ের বিষয়টি সেভাবে সামনে আসেননি।

সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন ছাত্রসংগঠনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে চারজন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ছিল ছাত্রলীগের একক নিয়ন্ত্রণে। হলে ওঠা থেকে আসন পাওয়া—সবই নির্ভর করত ছাত্রলীগের নেতাদের ইচ্ছার ওপর। হলে থাকতে হলে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। এ পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে মিছিল–সমাবেশসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা অতীতে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না, তাঁরা চাইলে নতুন সংগঠনে সম্পৃক্ত হতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান ওরফে জিমের কথা বলেছেন ওই উদ্যোক্তারা। আশিকুর ছাত্রলীগের সূর্য সেন হল শাখা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তিনি প্রথম ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। পরে আশিকুরের মতো অনেকে আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে তখন ছাত্রলীগের পদ ছেড়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি থেকে পদত্যাগ করা নেতার সংখ্যা দুই শতাধিক হবে।

আবার কোনো পদে ছিলেন না, কিন্তু বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন, এমন অনেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে দূরে সরে যান। যেমন সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী লিমন মাহমুদ হাসান ও অমর একুশে হলের মহির আলম ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন তাঁরা। তাঁদের মতো ছাত্রলীগ ছেড়ে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক। এ ধরনের শিক্ষার্থীদেরও নতুন ছাত্রসংগঠনে যুক্ত করতে চাইছেন উদ্যোক্তারা।

গণ–অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে নতুন এই ছাত্রসংগঠনের কোনো সম্পর্ক থাকবে না বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন যে রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে সেই দলের সঙ্গে নতুন ছাত্রসংগঠনের যুক্ততা থাকছে না। যদিও গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের একটি অংশ নতুন রাজনৈতিক দলে আরেকটি অংশ নতুন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে আসছে।

নতুন ছাত্রসংগঠন ও নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের পরও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি বহাল থাকবে। বিষয়টি এই দুই প্ল্যাটফর্মের কেন্দ্রীয় নেতারা এর আগে একাধিকবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

রাজনীতিতে অনৈক্য

আমার দেশ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঐক্যের ডাকে রাজনৈতিক দলগুলো তাৎক্ষণিক ইতিবাচক সাড়া দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন-পরবর্তী রাজনীতিতে একটি সুদৃঢ় ঐক্যের পথ সুগম হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। অপরিমেয় রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত ঐক্যের পরিবর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনের সর্বত্র অনৈক্য, এমনকি হানাহানির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

বিশেষ করে দীর্ঘ আড়াই দশকের মিত্রশক্তি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে বর্তমানে সব থেকে বৈরী সম্পর্ক চলছে। রাখঢাক ছেড়ে দল দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদ্গার করছে। সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াত বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে সম্পর্কের বৈরিতার ক্ষেত্রে মূল দলকে ছাপিয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত দুটি ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক দিন দিন তিক্ত থেকে তিক্ততর হচ্ছে। এদিকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত সফল গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পালটাপালটি বক্তব্য ফ্যাসিবাদবিরোধী দুই শক্তির মধ্যে বিরোধ চাঙা করছে। তাদের নতুন দল গঠন নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে একধরনের উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্বে অলিখিত দুটি ফ্রন্ট তৈরি হয়ে গেছে। সংস্কার ও নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা একই সুরে কথা বলছে। এক্ষেত্রে জামায়াত ছাড়া সাবেক ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশিরভাগ দলকে বিএনপি পাশে পেয়েছে। অপরদিকে জামায়াতের সুরে কথা বলছে কয়েকটি ইসলামি দল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে অনৈক্য দেশের জন্য মোটেই কল্যাণকর নয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দেশ এখনো বিপদমুক্ত নয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানে জড়িত শক্তিগুলোর মধ্যে এ অবস্থায় কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়। এতে করে দেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় যারা বিরোধী, তারা উৎসাহিত ও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। অনৈক্য দেখা দিলে সেটা দেশের জন্য ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। হাসিনার পতন আন্দোলনে ছাত্র-জনতা সামনে থাকলেও পেছন থেকে আওয়ামীবিরোধী সব দলেরই সমর্থন ছিল। তাদের অনেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণও করেছিল। তীব্র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনে রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল। আওয়ামী লীগ ও তার জোটভুক্ত দলগুলোর বাইরে সব দল ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে চলতে শুরু করেছিল। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টিকেও জুলাই আন্দোলনের পক্ষের শক্তিগুলো স্বাগত জানিয়েছিল।

এখনো তারেক রহমানের ওপর দুই সাজা

নিষ্পত্তি হলেই দেশে ফিরতে পারেন

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে এখনো চারটি মামলা বহাল আছে। এর মধ্যে দুই মামলায় রয়েছে সাজার রায়। সাজাপ্রাপ্ত মামলার মধ্যে একটি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা। এতে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

অপরটি অর্থ পাচারের মামলা। এতে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ দুটি মামলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা। এর মধ্যে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় নিম্ন আদালতে দেওয়া ৯ বছরের সাজা আপিল দায়েরের শর্তে এক বছরের জন্য সরকারের নির্বাহী আদেশে স্থগিত করা হয়েছে। এ মামলায় তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের তিন বছরের সাজাও স্থগিত করা হয়েছে। অর্থ পাচারের মামলাটি হাই কোর্টে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এটি নিষ্পত্তি  হলেই তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন বলে জানা গেছে। 

জানা যায়, বিগত সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে ৮৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ৭৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। মামলাগুলোর মধ্যে অনেকগুলো খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। 

কিছু মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলা চলার মতো উপাদান না থাকায় আদালত কয়েকটি মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তারেক রহমানকে। পেন্ডিং মামলা সংশ্লিষ্ট বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, অবশিষ্ট চারটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলে একেবারে মামলামুক্ত হয়ে যাবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর মধ্যে মানহানির দুই মামলা থেকে যে কোনো সময় অব্যাহতি বা খালাস পেতে পারেন তিনি। উচ্চ আদালতে বিচারাধীন অর্থ পাচারের মামলায় খালাস পেলেই সাজার ভারমুক্ত হবেন তিনি। 

সরবরাহ বেশি, সংকটের শঙ্কা কম

কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোজা ঘিরে রেকর্ড নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এ সময়ের বাড়তি চাহিদা মেটাতে এরই মধ্যে ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের বিপুল মজুদ নিশ্চিত করেছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। ফলে রোজায় অতিমুনাফালোভী চক্র যেভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটে, এবার এ আশঙ্কা নেই; বরং দাম আরো কমতে পারে। তথ্য-উপাত্ত এবং ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা এমন আভাসই দিচ্ছেন।

তবে পর্যাপ্ত আমদানির মধ্যেও চোখ রাঙাচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। বাজারে এ পণ্যটির সংকট এখনো কাটেনি। হাতেগোনা দু-একটি দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি রাখা হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল সংকটে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেলও।

ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকটের কারণে ভোক্তাদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই সংকট চলতে থাকলে রোজায় এটি ভোক্তাদের বাড়তি উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি নিষ্পত্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে দেশে ৯টি ভোগ্যপণ্যের মোট আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টন। আর চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের একই সময় আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টন।

গত অক্টোবর-জানুয়ারি সময়ে আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ছোলা আমদানি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, খেজুর ২৩ শতাংশ, চিনি ২০ শতাংশ, ডালজাতীয় পণ্য ৪৪ শতাংশ, রসুন ২০ শতাংশ ও আদা আমদানি ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তবর্তী সরকার। আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা।

সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ইসি পুরোনো পথে

সমকাল পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি যেভাবে নেওয়া হচ্ছে, তাতে নতুনত্বের কিছু নেই। শেষ তিন সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ার পেছনে যারা ‘বড় অনুঘটক’ হিসেবে কাজ করেছে, সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর মাঠ প্রশাসনের ব্যাপারে এখনও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নেই কোনো পরিকল্পনা। এসব বিষয়ে তারা বরাবরের মতো সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছে।

ডিসেম্বর কিংবা আগামী জুন– এ দুই সময়সীমা সামনে রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এ লক্ষ্যে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান পুরোনো ধারা মেনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের মতো বিষয়ে বেশি জোর দিচ্ছে। 

ইসির নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ৯০ দিনের প্রস্তুতিতে যে কোনো নির্বাচন আয়োজন ইসির পক্ষে সম্ভব। যে কারণে জনপ্রতিনিধিদের কোনো পদ শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। এমনকি সংবিধানে সীমানা নির্ধারণ এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুতির নির্দেশনা থাকলেও ইসির হাতে সর্বশেষ যে তালিকা থাকবে, তা দিয়েই নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা আছে। তবে প্রশ্ন হলো নির্বাচনের মান নিয়ে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করা। এখন এক দলের বদলে আরেক দল নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সুযোগ পেলে তাকে পরিবর্তন বলা যায় না।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের পুনরাবৃত্তি কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না। তারা আশা করেন, সব পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। গণআন্দোলনের রক্ত বৃথা যাবে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ সমকালকে বলেন, অতীতের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির সুযোগ নেই। মাঠ প্রশাসন নিয়ে ইসির পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আগের তিন নির্বাচনে যারা মাঠের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ইতোমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে ইসি ভবিষ্যতে আরও পরিবর্তন আনবে। মাঠ প্রশাসনকে ইসির নিয়ন্ত্রণে রাখতে রদবদলই একমাত্র উপায় কিনা– এমন প্রশ্নে এই কমিশনার বলেন, কমিশন নিরপেক্ষ থাকলে মাঠ পর্যায়ে খুব বেশি ঝামেলার সুযোগ থাকবে না। 

নির্বাচনের তপশিল নিয়ে কোনো ধারণা দিতে পারছেন না ইসির নির্বাচন শাখার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন ইসির কাছে আইন ও সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তাই এই মুহূর্তে সঠিক কোনো ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন নিয়ে ইসির অবস্থান পুরোপুরি অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের অনুরূপ। সংস্কার ছাড়া আগামী ডিসেম্বরে ভোট হতে পারে। আবার অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হতে পারে আগামী জুনের মধ্যে– এমন কথা গতকাল রোববারও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন কক্সবাজারে গিয়ে বলেছেন। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার সহেযাগিতা চেয়ে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দুটি ডেটলাইন দিয়েছে। নির্বাচন ডিসেম্বরে, বড় ধরনের সংস্কার হলে আগামী জুনের মধ্যে হবে। 

দলীয় সরকারের অধীনে শেষ তিন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রধান অভিযোগ ছিল ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে। যে কারণে তারা দুটি সংসদ নির্বাচন বর্জন এবং একটিতে অংশ নিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। আওয়ামী লীগের পতনের পর তারা এখন আর এই দাবি করছে না। জামায়াত ইসলামীসহ অন্য কয়েকটি দল সবার জন্য সমান সুযোগ আছে কিনা– সেটা যাচাইয়ের জন্য হলেও স্থানীয় সরকারের কিছু নির্বাচন সংসদের আগে চাইছে।

আওয়ামী দুষ্কর্মের দোসর ‘শিক্ষিত তস্কর’

ব্যাংক বিনাশে তিন গভর্নর

যুগান্তর পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতে রীতিমতো ‘লুটপাটের মহোৎসব’ হয়েছে। একসঙ্গে এত ব্যাংক লুট বিশ্বের কোথাও হয়নি। নজিরবিহীনভাবে পাচার হয়েছে এসব টাকার সিংহভাগ। আশঙ্কাজনভাবে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। এতে অতি মাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়েছে গোটা ব্যাংক খাত।

এরপর থেকেই দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে শুরু হয় ‘রক্তক্ষরণ’। যা এখনো অব্যাহত। এসব নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেছেন ব্যাংক ও অর্থনীতি সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর-ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার। তাদের নীতিগত ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ব্যাংক দখল, লুট, বড় বড় জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। ব্যাংক বিনাশে আওয়ামী দুষ্কর্মের এই তিন দোসর ‘শিক্ষিত তস্কর’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। 

তাদের বিচারের দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। আলোচিত রিজার্ভ চুরিসহ অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতে লুটপাটের প্রথম সুযোগ করে দিয়েছেন ড. আতিউর রহমান। তিনি সরকারের পতনের আগেই দেশত্যাগ করেন। ফজলে কবিরের আমলে আতিউরের প্রণীত নীতির মাধ্যমে অপকর্মের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। শুরু হয় ব্যাংক দখল। আর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে অর্থনীতি ও ব্যাংকে নজিরবিহীন লুটপাট ও টাকা পাচারের ঘটনা ঘটে। এমনকি তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে ব্যাংক দখলে সহায়তা করেন।

ড. আতিউর রহমান ২০০৯ সালের ১ মে থেকে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে একটি শক্তিশালী ব্যাংক খাত পেয়েছিলেন। কিন্তু অদক্ষতা, ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বকীয়তাকে খর্ব করা, ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেওয়ায় খাতটি দুর্বল হতে থাকে। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলেন, পরিদর্শনব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেন, ব্যাংক লুটপাটের সুযোগ করে দেন। তার সময়ে নীতিমালার শিথিলতায় শুরু হয় জালিয়াতি। ওই সময়ে হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, ক্রিসেন্ট, অ্যাননটেক্সের জালিয়াতি প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে দেওয়া নয় ব্যাংকের কোনোটিই দাঁড়াতে পারেনি। অপরিকল্পিত ও অদক্ষ আইটি ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের কারণে রিজার্ভ চুরির সুযোগ তৈরি হয়।

২০১০ সালের শুরুতে সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি হয়। দুটি ব্যাংকে বড় জালিয়াতি হলেও আতিউরের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। তার সময়ে লুটপাটকারীদের নজর পড়ে জনতা ব্যাংকে। দুর্বল তদারকির পাশাপাশি প্রচলিত নীতিমালাগুলো শিথিল করে লুটাপাটকারীদের আরও বেশি সুযোগ করে দেন।

২০০৯ সালের ১৯ এপ্রিল শিল্প খাতের খেলাপি ঋণ ডাউন পেমেন্ট ছাড়া নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে নির্বিচারে ঋণখেলাপিরা এর সুযোগ নেন। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হতো। এতেও ক্ষান্ত হননি ঋণখেলাপিরা। তারা আরও ছাড় নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। 

ফলে ২০১২ সালের ১৪ জুন খেলাপি ঋণের নীতিমালা শিথিল করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি কমানো সম্ভব হয়নি। ২০১৩ সালের ১৯ মে খেলাপি ঋণ নবায়নের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেখানে বলা হয়, প্রথম দফায় ২ বছর, দ্বিতীয় দফায় এক বছর এবং তৃতীয় দফায় ৬ মাসের জন্য নবায়ন করা যাবে।

এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর