Logo

অর্থনীতি

বিশেষ সাক্ষাৎকারে জন চৌধুরী

পিক আওয়ারে বেশি ও অফ-পিকে কম টাকায় বিদ্যুৎ দিতে হবে

Icon

আতাউর রহমান সোহাগ

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:১০

পিক আওয়ারে বেশি ও অফ-পিকে কম টাকায় বিদ্যুৎ দিতে হবে

জন সাখাওয়াত চৌধুরী /ছবি : বাংলাদেশের খবর

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ খরচ কমানোর উপায় হিসেবে সোলার পাওয়ার ব্যবহারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এনকেসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জন সাখাওয়াত চৌধুরী। এছাড়াও স্মার্ট মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা পিক আওয়ার ও অফ-পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভিত্তিতে আলাদা খরচ দিতে পারেন। 

তার মতে, ঢাকার ছাদগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপন করা গেলে প্রচুর পরিমাণে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। শুধুমাত্র ঢাকার ছাদগুলোতে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। যা সাধারণত সাশ্রয়ের জন্য সুবিধাজনক হবে।

আরও পড়ুন : বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে পথ দেখালেন জন চৌধুরী

তবে, বর্তমান মিটারিং পদ্ধতি সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে সোলার পাওয়ার ব্যবহারের পূর্ণ সম্ভাবনা না বলে জানান তিনি।

জন চৌধুরী আরও বলেন, সোলার পাওয়ারের সুবিধা পাওয়ার জন্য বিদ্যুৎ ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে সোলার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যুক্ত করার দরকার। সোলার পাওয়ার গ্রিডের সাথে যুক্ত হলে তা বিদ্যুৎ ব্যবহারের খরচ কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে। 

উদাহরণ হিসেবে তিনি আমেরিকার চিত্র তুলে ধরেন। যেখানে সোলার পাওয়ার গ্রিডে সফলভাবে সংযুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ খরচ কমানোর মাধ্যমে গ্রাহকদের সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি একধাপ এগিয়ে গেলে বিদ্যুৎ সংকট নিরসন সম্ভব হতে পারে।

ব্যাটারি স্টোরেজ প্রযুক্তি
সোলার পাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও এটি দিনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে রাতে এ শক্তির ব্যবহার সম্ভব হয় না। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে জন চৌধুরী ব্যাটারি স্টোরেজ প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

ব্যাটারি স্টোরেজের মাধ্যমে সোলার পাওয়ার উৎপাদিত শক্তি সংরক্ষণ করা সম্ভব। যা পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে রাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে, সোলার পাওয়ারের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর নির্ভরতা কমবে।

স্মার্ট মিটারিং ও ইনসেনটিভ প্রোগ্রাম
জন চৌধুরী আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন—স্মার্ট মিটারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর নজরদারি বাড়ানো।

তিনি বলেন, স্মার্ট মিটারিং পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকরা পিক আওয়ার ও অফ-পিক সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভিত্তিতে আলাদা খরচ দিতে পারেন। পিক আওয়ারে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে তাদের জন্য খরচ বাড়ানো হবে। তবে অফ-পিক সময়ে কম খরচে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে উৎসাহিত করা সম্ভব হবে।

তিনি সরকারের বিদ্যুৎনীতি নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তার মতে, সরকার সোলার পাওয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না, যার ফলে এ প্রযুক্তি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, যদি সরকার সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর ডিস্ট্রিবিউশন গ্রিডে সঠিকভাবে সংযোগ স্থাপন করে এবং স্মার্ট মিটারিং ব্যবস্থা চালু করে, তাহলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং সংকট নিরসন সম্ভব।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা
জন চৌধুরী আন্তর্জাতিক পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের ওপর জোর দেন। তার মতে, দেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ও সোলার পাওয়ার ব্যবহার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার মূল্যবান শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে সোলার পাওয়ারের উন্নয়ন, স্মার্ট মিটারিং ও ব্যাটারি স্টোরেজ প্রযুক্তির জন্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তা প্রয়োজন। এর ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং বিদ্যুৎ সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জন চৌধুরী তার সাক্ষাৎকারে দেশের বিদ্যুৎ সংকটের সমাধানে সোলার পাওয়ার, স্মার্ট মিটারিং ও ব্যাটারি স্টোরেজ প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। যাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সাশ্রয়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তিনি ক্রস-বর্ডার ট্রান্সমিশন পলিসি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে কম খরচে বিদ্যুৎ আমদানি করার কথা বলেন।

এনকেসফটের পরিকল্পনা
জন চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি ব্যবস্থা চালু করতে চাই। যেখানে গ্রাহকরা আমাদের কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবেন। আবার সেখান থেকে একটি অংশ আমাদের পেমেন্ট হিসেবে দেবেন। এতে গ্রাহক ও কোম্পানি উভয়ই লাভবান হবে।’

জন সাখাওয়াত চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
এনকেসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জন সাখাওয়াত চৌধুরী প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তিনি ফুজিতসু নেটওয়ার্ক কমিউনিকেশনের ইউটিলিটি ডিভিশনের পরিচালক এবং বিভিন্ন খ্যাতনামা আইটি ও ইলেকট্রনিক অ্যাসোসিয়েশনের বোর্ড অব ডিরেক্টরের সদস্য। তিনি কেমা কিউয়ালিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কেমা কনসালটিংয়ের স্মার্ট গ্রিড ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং দক্ষিণ আমেরিকার ইউটিলিটিগুলোর জন্য স্মার্ট গ্রিড উন্নয়নে কাজ করেছেন। জন ২০০৬ সালে আইবিএম থেকে প্রেসিডেনশিয়াল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এবং ডালাস বিজনেস জার্নাল অনুযায়ী স্মার্ট গ্রিডের শীর্ষ ২০ বিশেষজ্ঞের একজন। তার পেশাগত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে।

এএস/এআরএস/ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর