বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে
যৌক্তিক-অযৌক্তিক সব দাবিতেই রাজপথ গরম
বাংলাদেশের খবর
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১১
প্রিয় পাঠক, রাঙা সকালে চায়ের ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যাক আপনার সকল গ্লানি। প্রতিটি চুমুকে সুখ নামুক। আজকের বিপরীতে আগামীদিন আরও প্রশান্তিময় হোক— এই প্রত্যাশায় চলুন জেনে নিই আজকের দিনের বাংলাদেশকে। চোখ বুলাই দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোর প্রধান প্রতিবেদনে—
টালমাটাল চাকরিজীবীরা
বাংলাদেশের খবরের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসারের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলানো হয়ে উঠেছে কঠিন। আয়-ব্যয়ের এই বড় বৈষম্যের জের গত কয়েক বছর ধরে টানছে মানুষ। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে টালমাটালভাবে সংসার চালাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। আওয়ামী সরকারের আমলে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে ঋণ করে জীবনধারণ করতে হয়েছে পেশাজীবী মানুষদের। যেখানে বেতন বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতি থেকে ১-২ শতাংশ বেশি হতে হয়, সেখানে খরচ কয়েকগুণ বাড়লেও কর্মজীবী মানুষের আয় বেড়েছে নামমাত্র। তাই নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যয়ের সঙ্গে আয় বৃদ্ধির পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা।
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে সংসার যেন টালমাটাল। জীবনধারণের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষ। অনেকে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েও টানতে পারছেন না খরচের লাগাম। এর মধ্যে ঊর্ধ্বগতির বাজারে খরচ বহনে বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প বেতনের চাকরিজীবীদের। গত কয়েক বছরে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অনেক আমিষ। আর বাজারের ফর্দে কাটছাঁট করেই চলছে সংসারের নানা খরচ।
বাজেটে করের চাপ কমানো হবে
প্রথম আলো প্রধান প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী বাজেটে করের চাপ কমানো হবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, আগামী বাজেটে শুল্ক-কর যৌক্তিক করে ব্যবসাবান্ধব করা হবে। কর দেওয়ার ব্যবস্থাও সহজ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও করব্যবস্থাকে সহজ করার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, পণ্য আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি পর্যন্ত ১০ শতাংশের বেশি ভ্যাট থাকা উচিত নয়, যা বর্তমানে ১৫ শতাংশ।
অন্যদিকে যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁদের ওপর প্রতিবছর করের চাপ না বাড়িয়ে করের জাল বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেন ব্যবসায়ীরা। করদাতাদের অযথা হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানান তাঁরা। সম্প্রতি ভ্যাট বাড়ানোর ফলে বাজারে পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে, তা-ও জানান ব্যবসায়ীরা। এতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। তাই ওই সব পণ্যে ভ্যাট কমানোর দাবি জানান তাঁরা।
গতকাল বুধবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা: প্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলা হয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি ভ্যাট বাড়ানোর ফলে পোশাক, জুস, বিস্কুট, আকাশপথে টিকিটসহ বিভিন্ন খাতে যে প্রভাব পড়ছে, তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা তুলে ধরেন। আবার পর্যটন বা ভ্রমণের টিকিটের কমিশনের ওপর অযৌক্তিক হারে উৎসে কর কেটে রাখার কথাও বলা হয়। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড নিতে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা জোরদার করার পক্ষে মত দেওয়া হয়।
শেয়ারবাজার ধ্বংসে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ
আমার দেশের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে দেশের শেয়ারবাজার ছিল লুটপাটের অন্যতম টার্গেট। আর্থিক খাতে ব্যাংক লুট ও দখলের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে কারসাজির মাধ্যমে লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে গুটিকয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লুটে নেয় এক লাখ কোটি টাকার বেশি।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্টে হাসিনার আমলে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে ‘প্রভাবশালীদের’ সম্পৃক্ততার কথা বলা হলেও তারা কারা- সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। তবে আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন শেয়ারবাজার লুটের। তার সহযোগী হিসেবে কারসাজিতে নাম এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের। ডিএসইর তৎকালীন প্রধান রকিবুর রহমান গং শেয়ারবাজার জালিয়াতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।
মূলত প্রতারণা, কারসাজিসহ প্লেসমেন্ট শেয়ার এবং আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে মহাবিপর্যয়ের পর পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন এবং পরে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন শেয়ারবাজারের কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা জানান, ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা নানা ধরনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে শেয়ারবাজারকে লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তাদের লুটপাট আর অনিয়মের কারণে নিঃস্ব হয়ে বাজার ছেড়ে চলে গেছেন বহু বিনিয়োগকারী। কিন্তু এত লুটপাট ও অনিয়মের পরও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজার নিয়ে বর্তমান সময়ে বিএসইসি কী করছে জানতে সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের মন্তব্য চাওয়া হয়েছিল আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে। তাতে তিনি সাড়া দেননি। তবে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম আমার দেশকে বলেন, শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম হয়েছে সেগুলোতে বিএসইসির দায় রয়েছে। তিনি এটাও বলেন, বিএসইসি একাই সবকিছু করেছে বিষয়টা এমন নয়।
অবৈধ বিদেশি ধরতে এবার সাঁড়াশি
বাংলাদেশ প্রতিদিন লিড করেছে, বাংলাদেশে থাকা অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিদেশিদের বৈধতা অর্জনের জন্য বেঁধে দেওয়া সময় আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। তবে যারা এই সময়ের মধ্যে বৈধ হবেন না, তাদের গ্রেপ্তারসহ শাস্তির আওতায় আনা হবে। জানা গেছে, সরকারের কাছে ১ লাখ ২০ হাজার বিদেশি নাগরিকের তথ্য রয়েছে। বিদেশি এসব নাগরিকের অনেকে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন-সংক্রান্ত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের বেশি কেউ দেশে অবস্থান করলে তাকে জরিমানা দিতে হবে। এই জরিমানা আগের থেকে পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে। দিনপ্রতি ২০০ টাকার স্থলে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা যেত। সেই আইন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিদিন হিসাব করে জরিমানা দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যে নিজ দেশে ফিরতে চায়, সে ফিরতে পারবে। এরপরও যদি কেউ থেকে যায় তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশে থাকা অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিদেশিদের বৈধতা অর্জনের জন্য বেঁধে দেওয়া সময় আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। তবে যারা এই সময়ের মধ্যে বৈধ হবেন না, তাদের গ্রেপ্তারসহ শাস্তির আওতায় আনা হবে। জানা গেছে, সরকারের কাছে ১ লাখ ২০ হাজার বিদেশি নাগরিকের তথ্য রয়েছে। বিদেশি এসব নাগরিকের অনেকে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন-সংক্রান্ত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের বেশি কেউ দেশে অবস্থান করলে তাকে জরিমানা দিতে হবে। এই জরিমানা আগের থেকে পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে। দিনপ্রতি ২০০ টাকার স্থলে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা যেত। সেই আইন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিদিন হিসাব করে জরিমানা দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যে নিজ দেশে ফিরতে চায়, সে ফিরতে পারবে। এরপরও যদি কেউ থেকে যায় তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
যৌক্তিক-অযৌক্তিক সব দাবিতেই রাজপথ গরম
সমকালের প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক– যেটাই হোক, দাবি হাসিলের ‘মোক্ষম জায়গা’ হয়ে উঠেছে রাজপথ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যেন বয়ে যাচ্ছে দাবি-দাওয়ার নহর। হুটহাট সড়ক-মহাসড়কে নেমে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে যান চলাচল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকার শঙ্কা নিয়েই ঘর থেকে বের হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
আন্দোলনের সামনে পড়লেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সীমাহীন বিপত্তির পাশাপাশি দিনের পরিকল্পনায় লেগে যাচ্ছে ভজকট। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক, নির্দিষ্ট গন্তব্যের গাড়ি রাস্তায় চলছে কিনা, তা নগরবাসীকে ৯৯৯-এ ফোন করে জেনে নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। নাজুক পরিস্থিতি পার করতে হয় পুলিশ বাহিনীকে। প্রথমে কয়েক দিন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নানা সংগঠন, পেশাজীবী, ছাত্র-শ্রমিক বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে আন্দোলন শুরু করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কেউ কেউ মানুষকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। এটি কাম্য নয়। এমন কৌশল আগেও দেখা গেছে। দাবি-দাওয়ার মধ্য দিয়ে কেউ হীন স্বার্থ হাসিল করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
তথ্য বিশ্লেষণ করে সমকাল দেখেছে, জানুয়ারিতেই নানা দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ ১১ বার অবরোধের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া গেল ২৮ দিনে শুধু ঢাকাতেই দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভের মতো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। এ ছাড়া শতাধিক আন্দোলন হয়েছে রাজপথে।
ব্যাংকখেকো নাসা নজরুল
যুগান্তরের লিড নিউজে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক খাত থেকে নামে-বেনামে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ঋণও খেলাপি হওয়ার পথে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণখেলাপির বাইরে ছিলেন তিনি। এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। এই প্রথমবার তাকে ঋণখেলাপির তালিকায় দেখা যাচ্ছে। তাদের মতে, ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেটিকে পুঁজি করে ব্যাংক খাতে এসব অপকর্ম করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বেসরকারি সব ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, নাসা গ্রুপ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২২টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। এর মধ্যে শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই বের করা হয় ৩ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ ঋণের একটি অংশ খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মহাখালী শাখা থেকে আফসার রিসোর্টের নামে ৪৮০ কোটি, মেয়ে আনিকার নামে ২১০ কোটি এবং বনানী শাখা থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা নিয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পুরো টাকাই শেষ ধাপের (মন্দমান) খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ২৬৫ কোটি টাকা। এর একটা অংশ বেনামি ঋণ। এ টাকা পুনঃতফশিল করে নিয়মিত দেখাচ্ছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ১ হাজার ৯৬১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। এসব ঋণ নাসা গ্রুপ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ছয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে বের করা হয়।
আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে নাসা এবং এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ ১ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এসব ঋণ পায় সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫৯০ কোটি এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন মজুমদার। এসব ঋণ বের করা হয় উভয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে। এছাড়া ডাচ্-বাংলা থেকে ২৪৫ কোটি, উত্তরা ব্যাংক থেকে ১২০ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইসলামি শাখা থেকে ২৪ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ১৪ কোটি, যমুনা ব্যাংকের মহাখালী শাখা থেকে ৫৭ কোটি, পূবালী ব্যাংকের মহাখালী করপোরেট শাখা থেকে ২২ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ২১ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৩৪ ও কাওরান বাজার শাখা থেকে ২৭৩ কোটি, এনআরবিসি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২১ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২৬৮ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটির মহাখালী শাখা থেকে ৫৩১ কোটি ও গুলশান শাখা থেকে ২৩৫ কোটি, ব্যাংক এশিয়ার গুলশান লিংক রোড শাখা থেকে ৬৯ কোটি, সিটি ব্যাংক থেকে ২৫৪ কোটি এবং ইউসিবি ব্যাংক থেকে ৯০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। এর বাইরে সরকারি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) থেকে ৬২ কোটি টাকার ঋণ নেন তিনি। এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জনতা ব্যাংক থেকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ২৬১ কোটি টাকা সুদ মাফ করে নেন নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।
তবে তিনি সবচেয়ে বেশি ঋণ নেন ইসলামী ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের এক শাখা (লোকাল অফিস) থেকেই নাসা গ্রুপ নিয়েছে ২ হাজার ১০২ কোটি টাকা, যা এখন মুনাফাসহ অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৯৯৮ কোটি টাকা নিয়েছেন বিশেষ বিবেচনায়। বাকি ১ হাজার ১০৪ কোটি টাকা নিয়মিত ঋণ হিসাবে দেখানো হয়।
ভ্যাট গায়েবে ঘুষ-দুর্নীতির পোয়াবারো
কালের কণ্ঠের লিড প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। ব্যবসায়ী-কর্মকর্তার যোগসাজশ, ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বেশির ভাগ ভ্যাটই আদায় হয় না বলে এটি প্রায় ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়। কেন্দ্র থেকে প্রান্ত, ছোট থেকে বড়—প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই কমবেশি ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট শাখা, বেসরকারি সংস্থা টিআইবিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই বিচ্ছিন্নভাবে ভ্যাট নিয়ে জরিপ ও গবেষণা করেছে।
এসব জরিপের তথ্য বলছে, কমবেশি ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আওতায় সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ী তালিকাভুক্ত রয়েছে। অথচ সরকারের খাতায় ভ্যাটের জন্য নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ। তাদেরও সবাই রিটার্ন দেয় না।
ডিজিটাইজেশনের অভাবে ভ্যাট ফাঁকির অবারিত সুযোগ। এমন বাস্তবতায় ভ্যাট কর্তৃপক্ষ তাদের ভ্যাটের আওতায় না এনে বছরের পর বছর ভ্যাটের হার বাড়িয়ে চলছে। সম্প্রতি অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে এমনভাবে ভ্যাট বাড়িয়েছে যে তাতে সব মহল থেকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এনবিআরের তথ্য-উপাত্ত, বিভিন্ন জরিপের তথ্য পর্যালোচনা এবং ব্যবসায়ী-কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে ভ্যাটের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
এনআর/এটিআর