Logo

ক্যাম্পাস

বাংলাদেশের স্বপ্ন ও সংগ্রামের নতুন অধ্যায়

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ২৩:২৬

বাংলাদেশের স্বপ্ন ও সংগ্রামের নতুন অধ্যায়

স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। তবে তরুণ সমাজের চোখে এই দেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে? তারা চায় একটি আত্মনির্ভরশীল, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, যেখানে সুশাসন, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান দেখিয়েছে যে পরিবর্তনের নেতৃত্ব তরুণরাই দেয়। তাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ, উন্নত ও ন্যায়ভিত্তিক, যেখানে প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ পাবে এবং জাতি গর্বের সঙ্গে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তরুণদের চোখে নতুন বাংলাদেশের ভাবনা তুলে ধরেছেন তানজিল কাজী।

তরুণদের চোখে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ 
চারিদিকে সবুজের সমারোহে বেষ্টিত, ভৌগলিকভাবেই এই নৈসর্গিক ভূখণ্ডের অগ্রগতি, অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের রয়েছে অপার সম্ভাবনা, যা পৃথিবীর বুকে সুবিদিত। এই দেশের আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা যখনই উঠে আসে, সবার আগেই মাথায় আসে তরুণ সমাজের কথা। কারণ তরুণরাই দেশের নির্মাতা, ভবিষ্যতের কর্ণধার। তাদের হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাবে বিশ্বমঞ্চের কাতারে।  

তরুণরা বাংলাদেশকে দেখতে চায় আত্মনির্ভরশীল, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে, যেখানে দুর্নীতি ও বৈষম্যের সূচক থাকবে সর্বনিম্ন স্তরে; যেখানে সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে। তরুণরা স্বপ্ন দেখে এমন এক বাংলাদেশের, যেখানে সুযোগ ও সম্ভাবনা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে; শিক্ষা, ন্যায়বিচার ও উন্নয়নের সুফল সর্বস্তরে পৌঁছাবে।  

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাষ্ট্র সংস্কারের যে বড় বড় বিপ্লব হয়েছে, তার সূত্রপাত তরুণদের হাত ধরেই। কিছুদিন আগেই ঘটে যাওয়া ২৪ শে গণঅভ্যুত্থানের কথাই যদি বলি, দেশ ও দশের কল্যাণার্থে এই তরুণদের হাত ধরেই এক ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে, যা ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।  

একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তরুণ সমাজ অনবদ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের উন্নয়ন পৃথিবীর কোনো জাতিই ঠেকাতে পারবে না, যদি আমরা বাঙালিরাই উন্নয়নের পথে বাধা না হয়ে দাঁড়াই। তরুণদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশ সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির আলোয় এগিয়ে যাবে বিশ্বদরবারে।  

আবিদা সুলতানা
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  

সুশিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গঠন  
শিক্ষার্থীরা একটি জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের স্বপ্ন, উদ্যম ও সৃষ্টিশীল চিন্তাই নতুন বাংলাদেশ গড়ার শক্তি। উন্নত, সুশিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গঠনের জন্য শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। শুধু পুথিগত জ্ঞান নয়, প্রযুক্তি, গবেষণা ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারে। দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে শিক্ষার্থীদের সততা ও আদর্শিক মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। তারা যদি সৎ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে, তাহলে দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত হবে। দেশপ্রেম, পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে তারা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবে। তাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশ হবে উন্নত, স্বনির্ভর ও গৌরবময়।  

তাওহীদ আহমেদ
শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়  

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হোক 
‘মেধার জয়ধ্বনি’ দিয়ে শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন দেশের জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হওয়ার মূল কারিগর শিক্ষার্থীসহ দেশের তরুণ সমাজ। ’৫২ থেকে ’২৪—পুনর্জন্মের এ নব বাংলাদেশে ছাত্রসমাজই ছিল অগ্রপথিক। জুলাইয়ের বিপ্লবমুখর দিনগুলো পার করে অধিকার আদায়ের এ চেতনা নিঃসন্দেহে বাঙালিকে যুগে যুগে অনুপ্রাণিত করবে, শানিত করবে। আগামীর বাংলাদেশকে সকল প্রকার বৈষম্য এবং দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চাওয়া তরুণ সমাজের প্রথম ও প্রধান দাবি।  

বহুজাতিক এবং বহু-ধর্মীয় সম্মিলনে তিলে তিলে গড়ে ওঠা বাংলাদেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। চাকরির দ্বার উন্মুক্ত করা প্রয়োজন; সেই সঙ্গে পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নফাঁস রোধ করা সরকারের নতুন চ্যালেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত। পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাধর্মী কাজের সংখ্যা ও গুণগত মান নিশ্চিত করা জরুরি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষার সঠিক বিকাশ দরকার। দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্যায়গুলোতে স্বজনপ্রীতি রোধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গণ্ডি গোটা দেশসহ বিদেশে পরিব্যাপ্ত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের পাঠদানের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য ‘শিক্ষক মূল্যায়ন’ ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। নতুন বাংলাদেশের কাছে এ হোক আমাদের পরম চাওয়া।  

সামিহা সিরাজী লাজ
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

স্বপ্নের বাংলাদেশ‘৭১-এ শুরু, ‘২৪শে কত দূর?  
১৯৭১ সাল ছিল আমাদের আত্মত্যাগ, রক্ত ও বিজয়ের বছর। মুক্তিযোদ্ধারা একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন—একটি শোষণমুক্ত, সাম্যের সমাজ যেখানে প্রতিটি মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। কিন্তু ৫২ বছর পরও সেই স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে?  

স্বাধীনতার পরও আমরা দুর্নীতি, বৈষম্য, বেকারত্ব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার শৃঙ্খলে বন্দি। বিগত বছরগুলোতে একতরফা নির্বাচন, ভোটাধিকার হরণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা ও বিচার বিভাগের দুর্বলতা আমাদের গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ফলে জনগণের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে।  

এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখনো অপূর্ণ। ১৯৭১-এ আমরা বৈদেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়েছি, আর ২০২৪-এ নিজেদের দেশের মধ্যেই গণতন্ত্র ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করছি। জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছে—ন্যায়বিচার ও সমানাধিকারের দাবিতে তারা কোনো অন্যায় মেনে নেবে না।  

এখনো সময় আছে, আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হবে। আমাদের নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব হলো মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা। যে বাংলাদেশ আমরা ১৯৭১-এ চেয়েছিলাম, তা যেন ২০২৪-এর সংগ্রামের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ নেয়—তাহলেই প্রকৃত বিজয় অর্জিত হবে।

জেসান অর্ক মারান্ডী
শিক্ষার্থী, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  

নিরাপত্তাহীনতা : নতুন বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ 
২৪শের গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদে চলাফেরা করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ বেড়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। রাজধানীসহ সারাদেশে অপরাধীরা দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে, অথচ প্রশাসনের কঠোরতা অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রতুল।  

প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাচ্ছেন, অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী ও যৌথবাহিনীর টহল বাড়িয়েও অপরাধ দমনে যথেষ্ট সাফল্য আসছে না। চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।  

প্রশাসনকে আরও কার্যকরভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানই পারে দেশকে নিরাপদ করতে। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।  

মোসা. সাদিয়া
শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর