Logo

ক্যাম্পাস

বৈশাখ হোক হৃদয়ের নবজাগরণ

Icon

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, ডিআইইউ

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:১৩

আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:৫২

বৈশাখ হোক হৃদয়ের নবজাগরণ

নিশ্ছিদ্র আকাশে নতুন দিনের প্রথম আলো ছড়িয়ে দেয় এক অনির্বচনীয় অনুভূতি—যেন একটি জাতির চেতনা, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের নবজাগরণ। পহেলা বৈশাখ সেই দিন, যেদিন বাঙালির হৃদয় জেগে ওঠে শেকড়ের টানে, ঐতিহ্যের আহ্বানে।

উৎসবের রঙ, মাটির ঘ্রাণ আর লোকজ সুরে এই দিনটি হয়ে ওঠে আত্মার সঙ্গে আত্মার মিলনের এক পরম ক্ষণ। বৈশাখ তাই শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন তারিখ নয়—এ এক জীবনবোধ, এক সাংস্কৃতিক উজ্জ্বলতায় ফিরে দেখা আমাদের আপন ইতিহাস। আসন্ন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে কথা বলেছেন কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী। মতামত তুলে ধরেছেন তানজিল কাজী

বাঙালির আত্মপরিচয়ের সঞ্জীবনী সুধা
গোটা বছর গড়িয়ে চৈত্রের অবসানে আগমন ঘটে পহেলা বৈশাখের। আসে নতুন বছর, নববর্ষ। পুরাতন বছরের জীর্ণ-শীর্ণ ক্লান্ত রাত্রির অন্তিম প্রহর ঘোষিত করে আসে নবঊষার স্বর্ণদ্বার। তিমির রাত্রি ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে উদিত হয় জ্যোতির্ময় সূর্য। দীর্ঘ এক বছরের তপস্যা শেষে এ শুভদিনের আগমনে আনন্দোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় বাঙালি সত্তা।  

পহেলা বৈশাখে বাংলার সমস্ত মানুষ নতুন আহ্বানে সাড়া দিয়ে ওঠে। আটপৌরে জামা-কাপড় ছেড়ে কেতাদুরস্ত পোশাকে মেতে ওঠে রমনার বটমূলের উৎসবে। নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ বৈশাখী মেলা। লোকজ, হস্তশিল্প, রং-বেরঙের আয়োজনে জমজমাট এ মেলা বাঙালির হাজার বছরের চিরন্তন চেতনাকে জাগ্রত করে। এ ছাড়া পুতুলনাচ, নাগরদোলা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী কিংবা পান্তা-ইলিশ বাড়তি আমেজের রসদ যোগায়।  

নগরজীবনে পহেলা বৈশাখ ভিন্নভাবে ধরা দেয়। উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানিয়ে তরুণীরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে, আর ছেলেরা পরে পাঞ্জাবি। এ সময় ছায়ানটের বটমূলে বেজে ওঠে, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলায় প্রভাতী উৎসব পরিণত হয় জনসমুদ্রে। নববর্ষ উদযাপন গোটা জাতির তথা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে অখণ্ড বাঙালি জাতির সার্বজনীন উৎসব। হৃদয়াবেগ, প্রীতিময় আন্তরিকতা দিয়ে মোড়ানো এ উৎসবে ব্যবসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করে থাকে।  

বাংলা নববর্ষ উৎসব সত্যের গৌরবে, প্রেমের বৈভবে, মঙ্গলের প্রাচুর্যতায়, নির্ভিক মহত্ত্বে উদ্ভাসিত হয়ে উজ্জ্বলতা ছড়াক বছরজুড়ে—এ হোক আমাদের কামনা। নববর্ষ যেন মুষ্টিমেয় ধনীর ভোগবিলাসের সংকীর্ণ উল্লাসে পরিণত না হয়, যুদ্ধক্লিষ্ট শুভশক্তিরও উদ্বোধন ঘটে। পহেলা বৈশাখ জাগ্রত করুক অখণ্ড জাতীয় চেতনা; ঋদ্ধ করুক আগামীর গর্বিত চেতনা। 

 সামিহা সিরাজী লাজ
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এক নতুন ভোরের প্রত্যয়
নতুন সূর্য ওঠে নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে। পহেলা বৈশাখ তাই শুধু দিন নয়, এ যেন একটি অনুভব—নতুন করে জীবনকে ছুঁয়ে দেখার অঙ্গীকার। হাজার বছরের সংস্কৃতির যে উজ্জ্বল দীপ্তি আমাদের শেকড়ে, পহেলা বৈশাখ সেই ঐতিহ্যের পবিত্র উৎসব।

এই দিনে আমরা ভুলে যাই গ্লানি, বিভেদ আর অতীতের দুঃখ। আমরা একসাথে গাই, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’, খুলে দিই হৃদয়ের সব জানালা। রঙে, আলোয় আর মাটির গন্ধে ফিরে পাই আমাদের আপনকে। চৈত্রের খরতাপে ক্লান্ত হৃদয়ে বৈশাখ আসে আশার বার্তা হয়ে। এবারও আসুক নতুন সাহস, ভালোবাসা আর মানবতার জয়গান হয়ে।

এস. এম. জুবায়ের আহমেদ
সিএসই বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্স

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের রঙিন আয়না
পহেলা বৈশাখ আমাদের কাছে কেবল একটি উৎসব নয়, বরং আত্মপরিচয়ের এক গভীর অনুভব। এই দিনটি যেন আমাদের শিকড়ে ফেরার আহ্বান, যেখানে আমরা ফিরে দেখি আমাদের নিজস্বতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের রঙিন আয়না।

শহরের কোলাহল, জীবনের দৌড়ঝাঁপ, প্রযুক্তির কৃত্রিমতার ভিড়ে আমরা যখন নিজের ভেতরের মানুষটিকে হারিয়ে ফেলি, পহেলা বৈশাখ তখন এসে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরা বাঙালি, আমরা রঙে, ছন্দে, ভালোবাসায় বাঁচতে জানি।

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিটি মুখোশ, প্রতিটি রঙ যেন আমার হৃদয়ে আশা আঁকে। ভোর সকালে ‘এসো হে বৈশাখ’ শুনে যেভাবে মন জেগে ওঠে, তা আর কোনো উৎসব দিতে পারে না। আমার কাছে পহেলা বৈশাখ মানে নতুন শুরু—নিজের ভেতরের ধুলো ঝেড়ে জীবনের প্রতি আবার ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরা। এ উৎসব আমাদের শেখায় সংস্কৃতি শুধু চর্চার বিষয় নয়, এটি হৃদয়ের ভাষা। পহেলা বৈশাখ বাঁচিয়ে রাখুক আমাদের শেকড়, আমাদের স্বপ্ন। 

শ্রেয়া ঘোষ
শিক্ষার্থী, হবার্ট অ্যান্ড উইলিয়াম স্মিথ কলেজেস, যুক্তরাষ্ট্র

বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন
পহেলা বৈশাখ বাঙালির জীবনে এক নতুন স্পন্দন নিয়ে আসে। এটি শুধু একটি দিন নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। এই পহেলা বৈশাখ আমাদের মনে করিয়ে দেয় নতুন শুরুর কথা। এই দিনে বাংলার আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসবের আমেজে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত, সবখানে লাগে রঙের ছোঁয়া। 

পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। নানা রঙের মুখোশ, পাপেট আর লোকশিল্পের মোটিফ দিয়ে সাজানো এই শোভাযাত্রা বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রকাশ।

এই দিনে বিভিন্ন স্থানে বসে বৈশাখী মেলা। সেখানে পাওয়া যায় বাংলার লোকশিল্প, হাতে তৈরি জিনিস আর নানা ধরনের মুখরোচক খাবার। পান্তা-ইলিশ তো পহেলা বৈশাখের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ ছাড়াও মিষ্টিমুখ করা হয়, ব্যবসায়ীরা খুলেন নতুন হালখাতা। পহেলা বৈশাখ শুধু আনন্দ আর উৎসবের দিন নয়, এটি বাঙালির ঐক্য আর অসাম্প্রদায়িক চেতনারও প্রতীক। এই দিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে উদযাপন করে, যা আমাদের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। নতুন বছর যেন সবার জীবনে বয়ে আনে সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধি—এই কামনাই এবারের বোশেখে।

মেহেদী হাসান
শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

  • এটিআর
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর