Logo

ক্যাম্পাস

ঢাবির নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ

মো. মুহাইমিনুল ইসলাম

মো. মুহাইমিনুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৩৮

ঢাবির নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি একই হলের সহজ-সরল ও আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে কৌশলে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতেন। এরপর সেই তথ্য ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নকল আইডি খুলে বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন।  

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম জান্নাতুল ফেরদৌস শ্রাবণী। তিনি ঢাবি উর্দু বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন কবি সুফিয়া কামাল হলে। আর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম জুলফা। তিনিও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। 

জুলফার আইডি কার্ড, সার্টিফিকেট ও মার্কশিট ব্যবহার করে শ্রাবণী ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’, বসুন্ধরা শুভসংঘ, পেইড ফরোয়ার্ড, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বিল্ডিং থেকেও আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

২০২৪ সালের মার্চে ‘জুলফা’ নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সিলেটের ভয়াবহ বন্যার ছবি ও ভুক্তভোগীর কাগজপত্র ব্যবহার করে শিক্ষা সহায়তার নামে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন শ্রাবণী। জুন মাসে একইভাবে পুনরায় আর্থিক সহায়তা নেন।  

পরে বসুন্ধরা শুভসংঘের মাসিক বৃত্তিও তিনি জুলফা সেজে গ্রহণ করেন। এভাবেই এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতারণা চালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

ঢাবি রেজিস্টার অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্রাবণী নিজের নামে ৩০ হাজার এবং জুলফার পরিচয়ে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এসব বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করা হয়েছে।  

শুধু জুলফা নন, উর্দু বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আয়েশার নামেও প্রতারণা করেন শ্রাবণী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথা বলে তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।  

এ বিষয়ে গ্রীন ফিউচারের সিইও খালিদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সে একজন প্রতারক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করার পর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। যেহেতু সে প্রতারণা করেছে, সেহেতু তাকে গ্রীন ফিউচার থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

পেইড ফরোয়ার্ডের বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া আবু বকর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌস শ্রাবণীকে হতদরিদ্র মনে করেই বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে যে প্রতারক তা আমাদের জানা ছিল না। সে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা নিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ভর্তির নাম করে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের কাছ থেকে ৮হাজার টাকা নিয়েছিল। প্রতারণা করে বৃত্তি নিয়ে ধরা পড়ার পর তার বৃত্তি বাতিল করা হয়। কান্নাকাটি করে মাফ চেয়েছিল বলে আর কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। এখন শুনতেছি সে আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে এরকম প্রতারণা করে টাকা নিয়েছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জুলফা বলেন, ‘আমার নামে ফেইক আইডি খুলে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিয়েছে। আমার ছবি, পরিচয় ব্যবহার করে আমাকে ছোট করেছে। আমি এর বিচার চাই।’  

অভিযুক্ত জান্নাতুল ফেরদৌস শ্রাবণী বলেন, ‘আমি অভাবের তাড়নায় এমন করেছি। যার বাবা নাই, সেই জানে অভাব কী জিনিস। আমি আমার ভুল স্বীকার করছি।’

কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সালমা নাসরিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এ বিষয়ে আমাকে অবগত করা হয়নি। ভুক্তভোগী আমাকে ফোন দিয়েছিল। যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাবির সহকারী প্রক্টর মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, সে তার প্রতারণার সকল কথা স্বীকার করেছে। আগামীকাল সকাল দশটার মধ্যে তাকে তার প্রতারণার বিষয় উল্লেখ করে রেজিস্টার বরাবর আবেদন করতে বলেছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আবার বসব, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

এমএমআই/এটিআর 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর