-67a1e9695617a.jpg)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় বটতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন তারা।
অবরোধকালে তাদের ‘সংস্কার না বাতিল, বাতিল বাতিল’, ‘জনে জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘হলে হলে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘এসো ভাই-এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। তারা ওয়ার্ড কোটায় ভর্তির জন্য আরোপিত সব নতুন শর্ত বাতিল এবং পূর্ববর্তী নীতিমালা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
এ সময় ইতিহাস বিভাগের ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নিবিড় ভূইয়া বলেন, ‘আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি এবং আমরা বিশ্বাস করি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কারোরই পোষ্য কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অজপাড়াগাঁয়ের একজন কৃষকের সন্তান যদি মেধার ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগরে পড়াশোনা করতে পারে, তাহলে একজন শিক্ষার্থী যে জাহাঙ্গীরনগরের ছোট থেকে বড় হয়েছে, ভালো স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছে, তার কোনো ধরনের প্রিভিলেজ লাগবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি কোটা একটি প্রিভিলেজ, এটি কোনো অধিকার না। এই প্রিভিলেজটা ততক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দরকার। কিন্তু এটা কোনোভাবেই দরকার না। আজ আমরা এই পোষ্য কোটা চিরতরে বাতিল করার জন্য আন্দোলনে নেমেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৫২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মেজবাহুল হক আপন বলেন, ‘আমাদের একমাত্র দাবি, অযৌক্তিক পোষ্য কোটার সম্পূর্ণ বাতিল। কারণ এই কোটার ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাই না। যারা এই কোটার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তাদের থেকে একরকম পৈত্রিক উত্তরাধিকার আর চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নতুন করে এসব পৈত্রিক উত্তরাধিকার দেখতে চাই না। পৌষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা রেজিস্ট্রার বিল্ডিং ছাড়ব না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী কাওসার আলম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দলনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্যকোটা বাতিলের যৌক্তিক দাবি উঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এরই ধারাবাহিকতায় পোষ্য কোটা বাতিল নিয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করি, এর এক পর্যায়ে সাধারন শিক্ষার্থীদের একাংশ আমরণ অনশনে বসে।’
তিনি বলেন, ‘তারপর মাননীয় ভিসি মহোদয় এবং সংশ্লিষ্টজনদের মাধ্যমে পোষ্যকোটার যৌক্তিক একটি সংস্কারের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন থেকে সরে আসে। তবে এই সংস্কারের বিপরীতে পোষ্যকোটার সুবিধাভোগীরা আজ অযোক্তিক আন্দোলন করে রেজিস্টার ভবনের সামনে অবস্থানের সময় তারা এক সাধারণ শিক্ষার্থী ভাইয়ের উপর চড়াও হয় এবং তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে। তারই প্রতিবাদে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা বাতিল এবং তাদের হামলার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।’
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে ওয়ার্ড কোটার সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে এক মতৈক্যে পৌঁছান।
সমঝোতা অনুযায়ী, পাস নম্বর ৩৫% থেকে বাড়িয়ে ৪০% করা হবে, কোটার সুযোগ কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য সীমিত থাকবে, একবারের বেশি এই সুবিধা নেওয়া যাবে না এবং প্রতি সেশনে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী এই কোটার আওতায় ভর্তি হতে পারবে।
এমজে