Logo

রাজধানী

ঈদযাত্রায় স্বস্তি, ফাঁকা বাসার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ২০:৪৬

ঈদযাত্রায় স্বস্তি, ফাঁকা বাসার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

গত বছরের জুলাই-আগস্টের পর থেকেই ভিন্নরকম এক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে দেশ। এরই মধ্যে রাত পোহালেই সারাদেশে উদযাপিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ঢাকার বাসিন্দারা বাড়ি ফেরায় ফাঁকা হয়ে গেছে ঢাকা।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষরা স্বস্তি পেলেও নগরবাসী বলছে, যেখানে জনসমাগমের ঢাকায় প্রকাশ্যে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে, সেখানে  ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বাড়বে-এটাই স্বাভাবিক। তবে অস্বস্তি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা অপরাধমূলক যেকোনো ঘটনা ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে তারা।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার বিশেষ এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে যেতে হচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রত্যাশা, তা পূরণ নাও হতে পারে। তাদের অনেকের পরামর্শ, নিরাপত্তার সংকট মোকাবিলায় অক্সিলিয়ারি ফোর্সকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

এরই মধ্যে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী রাজধানীকে নিরাপদ রাখার কাজ শুরু করেছে। এতে যারা বাড়ি গেছেন, নিরাপত্তা সংকটে ভুগছেন, তারা কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন, কিছুটা স্বস্তিতে থাকবেন।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীর সর্বত্র পুলিশের চলমান তৎপরতা তদারকি করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদের ছুটির সময়ও দেশের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটবে না বলেও প্রত্যাশা সরকারের।

গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীর সর্বত্র পুলিশের চলমান তৎপরতা তদারকি করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদের ছুটির সময়ও দেশের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটবে না।

সবশেষ বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ফলে তারা সব জায়গায় সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। ফলে ঈদ উপলক্ষে অন্যান্য সেক্টরে টানা ছুটি থাকলেও নিরাপত্তায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না বলে তিনি জানান।

ঢাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, এবার ঈদুল ফিতরে শুধু পুলিশের দিকে নিরাপত্তার জন্য তাকিয়ে থাকলে হবে না। নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিতে হবে। এর সঙ্গে পুলিশ তো আছেই। গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীতে ঘটে যাওয়া নানা অপরাধের খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এসব খবর দেখে এবারের ঈদে অনেকটাই শঙ্কা তাদের।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, তার সংগঠনের হিসাবে এবার ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে কমপক্ষে দেড় কোটি মানুষ ঈদের সময় গ্রামে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ছুটির কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আছে।

তবে নগরবাসীকে উদ্দেশ করে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করব।

এবার দীর্ঘ ছুটি বিবেচনায় নিয়ে সে অনুযায়ী ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তা দেওয়ার ছক কষছে ডিএমপি। ২৪ মার্চের সমন্বয় সভায় ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের জোর তৎপরতায় রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। পুলিশি তৎপরতায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনা অনেকাংশে কমে গেছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট- হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশকে বিশেষভাবে সক্রিয় করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মহাসড়কে ডাকাতি রোধে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এই সময়ে প্রতারক চক্র অনেক বেশি সক্রিয় হয়। সেদিকেও বিশেষ নজর রয়েছে পুলিশের।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তা ছকে থাকছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও (র‍্যাব)। রাজধানীসহ সারাদেশে র‍্যাব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বাহিনীটির মহাপরিচালক এ কে এম শহীদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে মানুষের নিরাপত্তায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এ সময় ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা তৎপর থাকবেন। ঈদে নিরাপত্তায় গোয়েন্দা, ফুট প্যাট্রল, মোবাইল প্যাট্রল ও সাইবার প্যাট্রল থাকবে।’

এনএমএম/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর