কুষ্টিয়ায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, পাঁচ মাসে ২১ হত্যাকাণ্ড

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০:২৯

ছবি : সংগৃহীত
গত পাঁচ মাসে কুষ্টিয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। খুন, গুম, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, বালি মহাল দখলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে জেলাজুড়ে। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গত ছয় মাসে ১৭টি পরিত্যক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ছয়টিতে।
এদিকে গত পাঁচ মাসে কুষ্টিয়ায় ২১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে দৌলতপুরে ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, একই এলাকায় দুই ভাই ও এক জামায়াত নেতাকে কুপিয়ে খুন এবং পদ্মায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ড সবচেয়ে আলোচিত।
শুধু হত্যাই নয়, ছিনতাই, লুটপাট, ডাকাতি, দখলদারিত্ব এবং চাঁদাবাজির মতো অপরাধও বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পরও অপরাধীরা একেবারে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে।
অপরাধীদের বেপরোয়া চিত্র
দৌলতপুরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এক তরুণকে হত্যার জের ধরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৪৬টি মহিষ লুট করা হয়। কুমারখালীতে ২২টি দোকানসহ একটি মার্কেট দখল করেন উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেও ভুক্তভোগী কোনো সহযোগিতা পাননি।
এ ছাড়া দিনেদুপুরে অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলির ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। গত ২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের সীমানা প্রাচীরের পেছনে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা গুলি চালায়। একই মাসের ১৮ তারিখে কুমারখালীতে বালুঘাটে হামলা চালিয়ে ম্যানেজার সবুজ আলীকে গুলি করে ২ লাখ টাকা লুট করা হয়।
ট্রিপল মার্ডার, দায় স্বীকার চরমপন্থীদের
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সীমান্তে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) নেতা হানিফসহ তিনজনকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর চরমপন্থি সংগঠন জাসদ গণবাহিনী নেতা কালু গণমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে দায় স্বীকার করে।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে মুখ খুলেছেন বিশিষ্টজনরা। সচেতন নাগরিক কমিটির কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্য মিজানুর রহমান লাকি বলেন, ‘পুলিশ এখনো উদাসীন। ৫ আগস্টের ঘটনার পর অনেক পুলিশ সদস্য মামলার মুখোমুখি হওয়ায় তারা গুটিয়ে রয়েছেন। পুলিশের কঠোর অবস্থান ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। একাধিক টিম কাজ করছে, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
জনমনে আতঙ্ক, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া অপরাধের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আকরামুজ্জামান আরিফ/এটিআর