Logo

সারাদেশ

স্কুলছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ

ধর্ষণে অভিযুক্তের সাথে ছিল প্রেমের সম্পর্ক, মিলল প্রেমপত্র

Icon

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৬:১৩

ধর্ষণে অভিযুক্তের সাথে ছিল প্রেমের সম্পর্ক, মিলল প্রেমপত্র

বরগুনার কালিবাড়ি এলাকায় প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযুক্ত সিজীব চন্দ্র রায়ের সাথে ওই স্কুলছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের কলরেকর্ড ও প্রেমপত্র পাওয়া গেছে। পুলিশি তদন্তেও প্রেমের সম্পর্কের সত্যতা মিলেছে।

গত ৫ মার্চ বরগুনার কালিবাড়ী এলাকায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে বরগুনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন তার বাবা মন্টু চন্দ্র দাস। অভিযুক্ত সিজীব চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এরপর ১২ মার্চ মামলার শুনানির আগের দিন রাত সোয়া ১টার দিকে মন্টুর মরদেহ তার বাড়ির পেছনের ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়।

মন্টুর পরিবার দাবি করে, কিছুদিন আগে মন্টুর মেয়ে স্থানীয় বখাটেদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তকে জেলহাজতে পাঠানো হলে মন্টু ও তার পরিবার হুমকির মুখে ছিলেন। মন্টুকে অভিযুক্তরাই হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আদালতে দেওয়া ২২ ধারার জবানবন্দিতে স্কুলছাত্রী দাবি করেন, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে অপহরণ করেছে সিজীব। তবে কলরেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্কুলছাত্রীর সঙ্গে সিজীবের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের ফোনালাপে শোনা যায়, তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কথা বলছেন এবং ‘আপত্তিকর’ কথাও বলেছেন। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিও তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন।

অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, স্কুলছাত্রী সিজীবকে বিভিন্ন সময় প্রেমপত্র লিখেছেন। চিঠির হাতের লেখার সাথে স্কুলছাত্রীর বর্তমান লেখা খাতার হাতের লেখার মিল পাওয়া গেছে। সিজীবের পরিবারও তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন।

সিজীবের মা কনিকা রানী বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটা এলাকার অনেকেই জানে। ওদেরকে অনেকেই পুকুরপাড়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসে থাকতে দেখেছে। ওই মেয়ে নিজেই আমার ছেলের কাছে এসেছিল। এটা জানার পর ওর পরিবার তাকে নিয়ে মারধর করে। তখনো মেয়েটি বলেছে, সে সিজীবের সাথেই থাকবে। এরপর আমার ছেলেকে মারধর করে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীকেও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের দাবি জানাই। আর মন্টুকেও যদি কেউ হত্যা করে থাকে, তাহলে তারও বিচারের দাবি জানাই।’

নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রী ও তার মা প্রেমের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তারা উভয়েই বলেন, সিজীব স্কুলছাত্রীকে উত্যক্ত করত এবং প্রেমের প্রস্তাব দিত। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে অপহরণ ও ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে মন্টুর। মন্টুই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে পরিবার চরম সংকটে পড়েছে। স্কুলছাত্রীর ভবিষ্যতও অনিশ্চিত।

পুলিশি তদন্তে স্কুলছাত্রী ও অভিযুক্ত সিজীবের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আবদুল হালিম বলেন, ‘মেয়েটি যেহেতু অপ্রাপ্তবয়স্ক, তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তদন্তে আমরা ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির গভীর সম্পর্কের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি। তদন্ত চলমান রয়েছে।’

অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন সিজীব, তার বাবা শ্রী রামসহ চারজন। অন্যদিকে, মন্টু দাসের পরিবারকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি ফোনে কথা বলে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

  • খান নাঈম/এমজে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

অপহরণ ধর্ষণ প্রেমপত্র অভিযুক্ত কলরেকর্ড

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর