পুলিশের হাতে ৩ জন গ্রেপ্তার
মৃত মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও এনআইডি ব্যবহার করে প্রতারণা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১৫:৫৪

ময়মনসিংহে মৃত মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সিম কার্ড তৈরি ও বিক্রি করে অনলাইনে প্রতারণা চালানো একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সিম কার্ড, বায়োমেট্রিক মেশিন, ফিঙ্গার প্রিন্টের ছাপসহ ২১ ধরনের যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ময়মনসিংহের ভালুকা গ্রামের নাজমুল ইসলামের ছেলে হাফিজুল ইসলাম প্রিন্স (২৫), টাঙ্গাইলের মধুপুরের আজিজুল হক (২৪), ময়মনসিংহের নাগপুরের শরিফ মোল্লার তানভীর রহমান কাব্য (২২)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চক্রটির মূল হোতা হাফিজুল ইসলাম প্রিন্স টাঙ্গাইলের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ২০২২ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে রবি সিম কোম্পানিতে চাকরি নেন। সেখানে দুই বছর চাকরি করার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে অনলাইন প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রিন্স অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে আজিজুল হক ও তানভীর রহমান কাব্যকে নিয়ে এই চক্র গঠন করেন।
চক্রটি ময়মনসিংহ শহরের গোহাইলকান্দি তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকার একটি বাসার তৃতীয় তলায় রুম ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃত মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সিম কার্ড তৈরি ও নিবন্ধন করত। এরপর এসব সিম কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে পণ্য বিক্রির নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করত। একটি সিম কার্ড ১৫ দিনের বেশি ব্যবহার না করে তারা নতুন সিম কার্ডে পরিবর্তন করত। এ ছাড়াও বিকাশ নগদ প্রতারণাসহ বিভিন্ন বেআইনি কাজে এসব সিম কার্ড ব্যবহার করত।
সম্প্রতি কোতোয়ালি থানায় এ ধরনের একাধিক প্রতারণার অভিযোগ আসলে পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি ল্যাপটপ, ১২টি মোবাইল ফোন, ৩টি ফিঙ্গার হিটার মেশিন, ১৬টি বায়োমেট্রিক স্ক্যানার মেশিন, ৩০টি মৃত মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্টের নেগেটিভ, ১৫ পাতায় বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও তথ্য, ৩০০টি গ্রামীণফোন সিম কার্ড, ২০০টি ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহারের রাবার টুকরা, ৮টি ফিঙ্গার প্রিন্টের রাবার প্লেট, ২ বোতল রাবার পরিষ্কার করার কেমিক্যালসহ ২১ ধরনের যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশের তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাতে আসামিরা মৃত ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করে সিম কার্ড নিবন্ধন করত। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, সিম কার্ডের মালিক অনেক আগেই মারা গেছেন। অবশেষে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা তদন্ত শেষে জানা যাবে।’
- নাজমুস সাকিব/এমজে