Logo

সারাদেশ

গভীর নলকূপে পানি উঠছে না, ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ

Icon

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৯

গভীর নলকূপে পানি উঠছে না, ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ

ভোলার চরফ্যাশনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এতে পৌর সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে গভীর নলকূপে পানি না উঠায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। চাহিদামতো পানি না মেলায় ব্যাহত হচ্ছে বোরোর আবাদ।

জানা যায়, এ উপজেলায় সুপেয় পানি সংকটের কারণে শহরের বাড়ি ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন পৌর সদরের বাসিন্দারা। কিন্তু গ্রামে গিয়েও বিপদে পড়েছেন তারা। গভীর নলকূপে পানি না উঠায় পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। পুকুরের পানি দূষিত হওয়ায় ওই পানি ব্যবহারে দেখা দিয়েছে নানা রোগ। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-কিশোর। অপরিকল্পিতভাবে খাল-পুকুর-জলাশয় ভরাট করায় এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভাসহ ২১টি ইউনিয়নে সরকারি উদ্যোগে ১০ হাজার ৭৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫০০ নলকূপ বিকল হয়ে গেছে। অন্য গভীর নলকূপগুলোর বেশির ভাগেই পানি উঠছে না। এ ছাড়া ব্যক্তিমালিকানায় উপজেলায় রয়েছে লক্ষাধিক গভীর নলকূপ। এগুলোর মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি নলকূপে উঠছে না পানি। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধলাখ গভীর নলকূপে পানি মিলছে না।

চরফ্যাশন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহিদা সিকদার জানান, কয়েক মাস ধরে বাসাবাড়িতে গভীর নলকূপে মোটর সংযুক্ত করার পরও পানি উঠছে না। এতে সুপেয় পানি সংকটের কারণে পরিবারের সদস্যদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। পৌর সদরে পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

জাহানপুরের জয়নব বিবি বলেন, নলকূপে পানি উঠছে না। তারা পানির সংকটে আছেন। রমজানে যখন পানির প্রয়োজন বেশি, তখনই সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে তারা আশপাশের পুকুরের পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধসহ শিশু-কিশোর।

হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, এখানে অধিক সংখ্যক নলকূপ স্থাপনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। এ কারণে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

জাহানপুর ইউনিয়নের বোরো প্রকল্পের ম্যানেজার সাজাহান জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বোরো জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে ফসল।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, গভীর নলকূপগুলোতে পানি না উঠায় উপজেলাব্যাপী বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ পুকুর-জলাশয়ের পানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন। এতে করে শুষ্ক মৌসুমে ডায়রিয়া-আমাশয়ের মতো পানিবাহিত রোগ মহামারি আকারে ছড়াতে পারে। এ বিষয়ে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) চরফ্যাশন উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, বিএডিসির উদ্যোগে উপজেলায় ৪২টি সেচপাম্প চালু আছে। কৃষি বিভাগের আওতায় চালু আছে ১ হাজার ৭১৮টি সেচপাম্প। এসব পাম্প ব্যবহার করে খাল থেকে পানি তোলা হচ্ছে। কিন্তু কিছু সেচপাম্পে গভীর নলকূপের সঙ্গে সাব-মার্সিবল পাম্প ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবু কিছু কিছু সেচ প্রকল্পে সাব-মার্সিবল পাম্প ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার কাজ চলছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে এখানে শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে গভীর নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। এ বছর সংকট প্রবল আকার ধারণ করেছে। অপরিকল্পিতভাবে খাল-পুকুর-জলাশয় ভরাট করার ফলে এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগ পর্যন্ত এ সংকট চলবে।

এমবি  

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর