Logo

সারাদেশ

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দুঃখের জীবন, কষ্ট গোপন করেই দ্বীনের খেদমত

Icon

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৫:৫৬

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দুঃখের জীবন, কষ্ট গোপন করেই দ্বীনের খেদমত

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেও কষ্টের জীবনযাপন করছেন দেশের বহু ইমাম-মুয়াজ্জিন। সমাজে সম্মানের স্থান থাকলেও তাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। নিজেদের দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করতেও তারা দ্বিধাগ্রস্ত। এমনই বাস্তবতার মুখোমুখি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বহু ইমাম-মুয়াজ্জিন।

ইমাম-মুয়াজ্জিনরা মুসল্লিদের নামাজ আদায় করানোর পাশাপাশি আজান দেওয়া, ইসলামি শিক্ষা প্রদান, জন্ম, বিয়ে এবং মৃত্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভূমিকা রাখেন। তবে তাদের বেতন-ভাতা অত্যন্ত কম এবং অনিয়মিত। ফলে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

মসজিদের ভিন্নতা ও আয়কৃত অর্থের ওপর নির্ভর করে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন নির্ধারিত হয়। সরকারি কোনো নির্ধারিত বেতন কাঠামো নেই, যার ফলে অধিকাংশ মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন অল্প সম্মানীর বিনিময়ে দায়িত্ব পালন করেন।

কথা হয় বাউফল সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম হাজি মাওলানা মোহাম্মাদ শাহজাহানের সাঙ্গে। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে সরকারি কলেজ মসজিদে ইমামতি করছেন। তার পরিবারে স্ত্রী-সন্তানসহ ৫ সদস্য রয়েছেন। মসজিদ থেকে তিনি ভাতা পান মাত্র ৭ হাজার টাকা।

মাওলানা শাহজাহান বলেন, সরকারি কলেজ মসজিদ বলা হয়, কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি কলেজের যে মসজিদ তার কারো বেতনই সরকারিভাবে হয় না। এটি আগের মতই আছে, বরং সরকারি হওয়ার পরে নির্ধারিত ফি থেকে যে বেতন দেওয়া হয়, সেগুলো অনেক সময় বকেয়া থেকে যায়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতনে একজন ইমাম এবং একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি তার পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করা খুবই দুর্বিষহ। ইমাম -মুয়াজ্জিনরা খুবই কষ্টে আছে, মুখ খুলে বলতে পারে নাহ। অন্যকোনো পেশায়ও যুক্ত হতে পারে না। ধর্মীয় অনূভুতি এবং ধর্মের খেদমতকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে মূলত এ পেশার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। এটাকে ছাড়তেও পারেন না,কারো কাছে বলতেও পারেন না। এ ব্যাপারে সরকারের মনোযোগ থাকা দরকার, ইমামরা একটি অবহেলিত পেশায় আছে বলা যায়।

উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের বায়তুন নাজাত জামে মসজিদের ইমামের দায়িত্ব রয়েছেন মাওলানা মো. রিয়াজুল ইসলাম। তিনি যৌথ পরিবারে বসবাস করেন, তার পরিবারে সদস্য ২৬ জন। সদ্য বিবাহিত এই ইমাম মসজিদ থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা বেতন পান।

তিনি বলেন, আমরা সম্মানের জায়গায় থেকেও অবহেলিত। মাস শেষে যখন বেতন হাতে নিয়ে বাজার করতে যাই, তখন দেখা যায় তেল কিনলে নুন কিনতে পারি না, নুন কিনলে চাল কিনতে পারি না, চাল কিনলে ডাল কিনতে পারি না। কোনো না কোনো বিষয়ে ঘাটতি থেকে যায়। ঈদের সময় অনেকই ১৫-২০ হাজার টাকার মার্কেট করে, সেখানে আমাদের বেতনই ৫০০০ টাকা। সেই বেতন দিয়ে মার্কেট করি কীভাবে।

বাউফল পৌর শহরের ৭ নং ওয়ার্ডের মুন্সি মুজাফ্ফার মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন হাফেজ মহিউদ্দিন। তার পরিবারের স্ত্রী,বাবা-মা,বোনসহ ৫ সদস্য রয়েছেন। তিনিও মাত্র ৫ হাজার টাকা পান মসজিদ থেকে।

মহিউদ্দিন বলেন, যা বেতন পাই তা দিয়ে কিছুই হয় না, কিন্তু আল্লাহতায়া চালাচ্ছেন। পাশাপাশি কিছু ছাত্র পড়াই, এটা দিয়েই চলতেছি।

বাউফল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত মডেল কেয়ার টেকার জানান, বাউফল উপজেলায় প্রায় ১,২৫০টি মসজিদ রয়েছে, যেখানে অধিকাংশ ইমামের বেতন ৫-৮ হাজার টাকা এবং মুয়াজ্জিনদের বেতন ২-৩ হাজার টাকা। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে এই অর্থে পরিবার চালানো খুবই কঠিন। তবে, সরকার যদি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কল্যাণে কোনো উদ্যোগ নেয়, তাহলে তাদের জীবনযাত্রা সহজ হবে।

আরিফুল ইসলাম সাগর/এটিআর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর