
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঈদের ছুটিকে ঘিরে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাবণী থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের প্রতিটি অংশ ছিল ভরপুর উচ্ছ্বাস ও আনন্দে মেতে ওঠা মানুষের পদচারণায়।
সাগরের নীল জলরাশি, শীতল বাতাস আর সূর্যের ঝলমলে আলোতে সৈকতে নামা পর্যটকরা যেন ভুলে গেছেন যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি। কেউ কিটকটে (বিচ ছাতা) বসে উপভোগ করছেন সাগরের ঢেউ, কেউ বা ছুটে বেড়াচ্ছেন বালিয়াড়িতে। রয়েছে বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক, ঘোড়ায় চড়া আর মুঠোফোনে স্মৃতিবন্দি করা মুহূর্তগুলোর ব্যস্ততা। পর্যটকদের এ ঢল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় হোটেল-মোটেলগুলো।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, শহরের সাড়ে ৫ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি পর্যটক অবস্থান করতে পারেন। বর্তমানে সব কক্ষই পূর্ণ।
তিনি আরও জানান, ঈদের প্রথম দিন সোমবার ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যটক এলেও দ্বিতীয় দিন তা লাখ ছাড়িয়ে যায়। শুক্রবার, ঈদের ৫ম দিনে, এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১ লাখ ৬০ থেকে ৭০ হাজারে। শনিবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত পর্যটকের ঢল অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ৫ দিনে ৭ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কক্সবাজার কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, বুধবার থেকে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল–রিসোর্টে থাকার জায়গা হচ্ছে না। মাঝারি আকারের কিছু হোটেলে ৫–৭ শতাংশ কক্ষ খালি থাকলেও তারকা মানের হোটেল–রিসোর্টের কোনো কক্ষ খালি নেই। এতে অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করতে পারেন। এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন।
সৈকতে ঘুরে বেড়ানো ঢাকা থেকে আসা এক সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সৈকতে ভ্রমণ যতটা আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের, অতিরিক্ত অর্থ আদায় ততটাই বিরক্তিকর। যে আবাসিক হোটেলে উঠেছেন, সেখানে গত ডিসেম্বর কক্ষভাড়া ছিল সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এবার অগ্রিম বুকিং দেওয়ার পরও তা সাড়ে ৬ হাজার টাকা নিয়েছে। একইভাবে রেস্তোরাঁগুলোতেও খাবারের দাম অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। তবে পর্যটকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এমনটা মেনে নিচ্ছেন।
শিক্ষক আবেদিন নাহিদ জানান, কক্সবাজারে আসা মানেই আনন্দ। এখানকার অথৈ নীল জলরাশি আর শীতল হাওয়া মন থেকে ক্লান্তির অবসান ঘটায়। ফিরে গিয়ে নিজের কর্মস্থলেও সজীবতা পাওয়া যায়।
রাজশাহীর ব্যবসায়ী রফিকুল আনোয়ার জানান, সমুদ্র, পাহাড়, ঝর্ণা, বৌদ্ধ বিহার আর প্রকৃতিতে কক্সবাজার সত্যিই মনকে বিমুগ্ধ করে।
এদিকে আগত পর্যটকদের বেশিরভাগই ব্যস্ত সমুদ্রস্নানে। তাই কোনো পর্যটক যেন স্নানের সময় বিপদাপন্ন অবস্থায় না পড়েন, সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন লাইফগার্ড সদস্যরা। সাগরে গোসলে নামার আগে নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শও দিচ্ছেন তারা। এমনটাই জানিয়েছেন ‘সী সেইফ’ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার ওসমান গনি।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। চুরি ও ছিনতাই রোধে শহরে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি যানজট নিরসন এবং পর্যটকদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া ও রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম বেশি আদায় করা না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। এ বিষয়টি তদারকির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন/এমবি