শরীয়তপুরে তুমুল সংঘর্ষ, শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ

হিমেল আহম্মেদ অপি, জাজিরা (শরীয়তপুর)
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৫

শরীয়তপুরের জাজিরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে দুপক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের দূর্বাডাঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। বোমের আঘাতে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ও গুরুতর আহত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গুরুতর আহত দুইজন হচ্ছে- বিলাশপুর ইউনিয়নের কাজিয়ারচরের বাসিন্দা কালাম মালের ছেলে মারুফ মাল (২৫) ও অন্যজন হাসান মুন্সি (৫০)।
এ ঘটনায় বাকি আহতরা হলেন- একই ইউনিয়নের জোৎস্না (২৫), ফাতেমা বেগম (৫৫), বিনা (৪৫), সজিব (২২), নাইম (১৯), সাকিব (১৯), কামাল (১৯), বিজয় (১৯), রেজাউল বেপারী (১৯), শহরআলী (৫০), রিফাত (১৯), আবু আলেম (৪২) ও শুভ বেপারী (১৯)।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জলিল মাদবরের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকালে দূর্বাডাঙ্গা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এ সময় শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে দুপক্ষের সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায় একটি খোলা মাঠে উভয় পক্ষের লোক মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে অনেকের হাতে বালতি ও হেলমেট পরিহিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। বালতি থেকে হাতবোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। পরে সেগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করছে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কুদ্দুস বেপারী ও জলিল মাদবরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে নাম্বার দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। হঠাৎ করে দুই পক্ষের লোকজন জড়ো হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বোমার শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠছিল। আমরা ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারিনি।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বিরোধের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তারা প্রশাসনের কাছে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
সংঘর্ষের বিষয়ে গুরুতর আহত মারুফ মালের বাবা কালাম মাল জানান, আমার ছেলে ঢাকায় চুরি তৈরির কারখানায় কাজ করে। আজ সকালে ওর ঢাকা চলে যাওয়ার কথা ছিল।কিন্তু স্থানীয় ঝামেলায় পড়ে ওর হাত চিরদিনের মতো নষ্ট হয়ে গেলো। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি চাই এই এলাকায় যেন আর কারো এমন ঝগড়া বিবাদে ক্ষতি না হয়।
এছাড়াও স্থানীয় এক বৃদ্ধা বলেন, ‘দল করে জলিল মাদবর আর কুদ্দুস ব্যাপারী। কিন্তু কাইজ্জা (মারামারি) লাগলে ক্ষতি হয় আমাগো মত বদলা কামলাগো। এই গেরামে জানি আর কোন কাইজ্জা লাড়াই না হয়, আমি এইডা চাই।’
জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এআরএস/এমবি