শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার পর ভয় দেখিয়ে বাড়িছাড়া করা হলো পরিবারকে

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৪৬

অভিযুক্ত আবুল বাশার ভূঁইয়া।
মানিকগঞ্জে মক্তবে পড়তে আসা ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মসজিদের মুয়াজ্জিন আবুল বাশার ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। ঘটনার পর বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে বাড়িছাড়া করেছেন ওই মুয়াজ্জিনের পরিবার ও স্থানীয় দুই ব্যক্তি।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত আবুল বাশার ভূঁইয়া (৩৬) পৌরসভার বান্দুটিয়া এলাকার আলপনা জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন। তিনি পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকার কেরামত আলী ভূঁইয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকালে মসজিদের ভিতরে ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী শিশু বাড়ি ফিরে তার মাকে জানালে ক্রমশ ঘটনাটি চাঞ্চল্যে রূপ নেয়। এরপর দুপুরে স্থানীয় লাভলু মিয়া এবং ইসহাক ঘটনাটি মীমাংসার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারকে চাপ দেয়। ভুক্তভোগী পরিবার একপর্যায়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন।
ভুক্তভোগী শিশু বলেন, ‘বুধবার সকালে কাকি আমাকে মক্তবে দিয়ে আসছেন। তার কাছে সব পড়া দিছি। সবার পড়া শেষ হলে সবাইকে ছুটি দিছে আমাকে বাদে। আমি বলেছি আমার স্কুল আছে। আমাকে বলে তুমি একটু পরে যাও। আমার সাথে আরও দুইজন মেয়ে ছিল। ওদেরকে বারান্দা ঝাড়ু দেওয়ার কথা বললে ওরা ঝাড়ু দিতে যায়। পরে আমাকে বলে পা ফাঁক কর। আমি বলেছি কীসের জন্য? তিনি বলে, কর। পরে করছি। ওমনি আমার প্যান্টের ভিতরে হাত ঢুকাইছে। যখন দেখছে মানুষ আসছে, তখন আবার হাত সরাইছে। পরে আবারও হাত ঢুকাইছে। যখন ওদের বারান্দা ঝাড়ু দেওয়া শেষ হয়েছে তখন আবার ছেড়ে দিয়েছে।’
শিশুর দুলাভাই জানান, শিশুর বাবা প্রবাসী। মা ও তিন বোন বান্দুটিয়ায় থাকেন। শিশুর নানি অসুস্থ থাকায় তার মা ঢাকায় হাসপাতালে ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সকালে শিশুটির খালা ফোন করে জানায় মোয়াজ্জেম বাশার তার সাথে খারাপ কাজ করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুনি, বাশারের মামা ইসহাক ও লাভলু শিশুটির আত্মীয়দের বাসায় গিয়ে বাশারকে চড়থাপ্পড় মেরে মাফ চাইয়ে ঘটানাটির মীমাংসা করে। মীমাংসার আধাঘণ্টার মধ্যেই ভয় দেখিয়ে ওদের তিনবোনকে নানির বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ঘণ্টা খানিকপর বাশারের মা আমার কাছে এসে আমার পায়ে পড়ে মাফ চায়। বলে, ছেলেটা ভুল করে ফেলেছে। তুমি তো জানই ও আগে থেকেই একটু পাজি।’
মীমাংসার পর ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এলাকাবাসী বান্দুটিয়া বাজারে ইসহাক ও লাভলুকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে তারা মীমাংসার কথা স্বীকার করেন।
লাভলু জানান, সকালে ইসহাক আমাকে ডাকলে আমি যাই। ইসহাক তার ভাগিনাকে মারধর করে মীমাংসা করেন। মীমাংসার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ধর্ষণ হয়নি, তাই সামাজিক কারণে মীমাংসা করা হয়েছে।’
কিন্তু মীমাংসার বিষয়ে ইসহাক হোসেন বলেন, ‘আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল এমন রটনা রটাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি সেখানে যাইনি।’
এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ সদর থানার এএসআই তারিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটা শোনার পর আমরা ঘটনাস্থলে আসি। কিন্তু এখানে ভুক্তভোগী পরিবারের কাউকে পাইনি। তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত আবুল বাশারের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমাদের টিম পাঠানো হয়েছে। সেখানে ভুক্তভোগী পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। ভুক্তভোগী পরিবার আইনি সহযোগিতা চাইলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আফ্রিদি আহাম্মেদ/এমজে