বান্দরবানে শেষ হলো মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব

বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৪৬

ছবি : বাংলাদেশের খবর
পার্বত্য জেলা বান্দরবানে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব ‘সাংগ্রাই’। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের শেষ দিনে রাজার মাঠে অনুষ্ঠিত জলকেলি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভিড় জমায় হাজারো পাহাড়ি-বাঙালি নাগরিক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকসহ উপস্থিত ছিলেন বিদেশি অতিথিরাও।
পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মারমাসহ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ উৎসবের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। গত ১৩ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় সাংগ্রাই। আর ১৪ এপ্রিল সাঙ্গু নদীর তীরে উজানী পাড়ায় বৌদ্ধ মূর্তি স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। এরপর চলে পূজা-অর্চনা, ছোয়াইং দান, হাজার প্রদীপ প্রজ্বালন, বয়স্কদের পূজা, বিশেষ প্রার্থনাসহ নানা ধর্মীয় আচার।
১৫ এপ্রিল রাজার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা, তৈলাক্ত বাঁশে আরোহণ, দড়ি টানা, বালিশ খেলা ও যুবতীদের অংশগ্রহণে নানা লোকজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।
সর্বশেষ শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে রাজার মাঠেই জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় জলকেলি ও সাংস্কৃতিক উৎসব। মারমা তরুণ-তরুণীরা এ আয়োজনে একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে পুরোনো গ্লানি ও পাপাচার ধুয়ে ফেলার প্রতীকী উৎসবে মেতে ওঠে। এ সময় পরিবেশনা হয় মারমা ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, পালাগান ও নিজস্ব সংস্কৃতির নানা প্রদর্শনী।
এবারের সাংগ্রাই উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল। যার মধ্যে ছিলেন- ইইউ অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার, ক্যাটরিনা মিলার, ইতালির প্রতিনিধিত্বকারী আন্তেনিও আলেসান্দ্রো, পাওলা বেলফিওরে ও নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধি আইনজীবী আন্দ্রে কেরস্টেনস। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমা, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাউছার ও সেনা জোন কমান্ডার এসএম মাহমুদুল হাসান।
সার্বিকভাবে বান্দরবান পরিণত হয়েছিল এক বৈচিত্র্যপূর্ণ উৎসবের নগরীতে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে উদযাপন করেছে পাহাড়ি এ সংস্কৃতির প্রাণবন্ত উৎসব। সপ্তাহব্যাপী এ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ছিল সমবেত প্রার্থনা, তিনদিনব্যাপী জলকেলি, পিঠা উৎসব, বয়স্ক পূজা ও সাংগ্রাই মেলা।
সোহেল কান্তি নাথ/এমবি