মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘ভুল রক্ত পুশ’ করায় মো. বিল্লাল (৫৫) নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতিকে দায়ী করে স্বজনরা বিচার দাবি করেছেন।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে মো. বিল্লালের দেহে ‘ও’ পজিটিভের পরিবর্তে ভুল করে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিহত বিল্লাল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় হাসপাতালে ভর্তি হন।

রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আমাদের কাছে ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটি এনে নার্সের কাছে দেওয়ার পর নার্সরা বলেন, ডাক্তারের অর্ডারপত্র লাগবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর তিনি রক্ত দেখে অর্ডারপত্র দিয়েছেন। এরপর নার্সরা রোগীর শরীরে সেটি পুশ করেন। এরপর থেকেই রোগীর সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আমরা তখনও বুঝিনি যে রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। পরে বাইরের একজন লোক দেখে আমাদের বলেন, রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হচ্ছে।

এরপর আমরা হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তারদের অনেক ডাকাডাকি করলেও তারা এসে রোগীর কোনো চিকিৎসা দেননি। তারা তড়িঘড়ি করে সেই রক্তের ব্যাগ ও রক্তসংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে যান। পরে রাত ৮টার দিকে আরেকজন ডাক্তার এসে আমাদের রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। আমরা বলেছি, রোগীকে ঢাকায় নেওয়ার মতো অবস্থায় আমরা নেই। এটি একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ, আমাদের রোগীর চিকিৎসা এখানেই করুন। তারপর তারা আর কোনো চিকিৎসা দেয়নি। আপনারা আসার পর হাসপাতালের লোকজন রোগী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। আপনারা আসার আগে আমাদের কথায় তারা কানই দেয়নি।

রোগীর স্বজনরা আরও বলেন, এটি ভুল রক্ত না সঠিক রক্ত, সেটি বোঝার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। তারা তিন জায়গায় চেক করে রক্ত দিয়েছেন। এক জায়গায় ভুল হতে পারে। কিন্তু তিন জায়গায় তো ভুল হওয়ার কথা নয়। তাদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণেই আমাদের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ জানান, বিকেল ৪টার দিকে ডিউটিতে ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান। সে সময় রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়। এরপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। আমি রাত ৮টায় ডিউটি শুরু করি। ডিউটি শুরুর পর যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি। এরপরও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে কাগজপত্র না দেখে রক্ত পুশ করা ঠিক হয়নি। এটি একটি মারাত্মক ভুল। 

রোগীর মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ হিসেবে কী লেখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। 

ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি উল্লেখ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও ঘটনাকালীন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নূরজাহানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আফ্রিদি আহাম্মেদ/এমবি