Logo
Logo

সারাদেশ

আটকে আছে দেশের প্রথম আর্চ স্টিল ব্রিজের নির্মাণকাজ

Icon

মাল্টিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৪

আটকে আছে দেশের প্রথম আর্চ স্টিল ব্রিজের নির্মাণকাজ

পড়ে আছে সেতুটির নির্মাণসামগ্রী। ছবি : বাংলাদেশের খবর।

এক বছর পেরিয়ে গেলেও ময়মনসিংহ নগরের ব্রহ্মপুত্র নদের উপর প্রস্তাবিত রহমতপুর স্টিল আর্চ ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে গেছে নির্মাণকাজ। পড়ে আছে ব্লকসহ সেতু ও সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। বড় ক্ষতির মুখে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়ক বিভাগ বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসন হবে।

সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১০ মে রহমতপুর স্টিল আর্চ ব্রিজ প্রকল্প অনুমোদন হয়। পরের বছরের নভেম্বরে সম্পন্ন হয় টেন্ডারপ্রক্রিয়া। নগরের রহমতপুর বাইপাস সড়ককে ব্রহ্মপুত্রের অপর প্রান্তের চর জেলখানা এলাকার সড়কে সংযুক্ত করবে সেতুটি। প্রকল্পে ১ হাজার ৪৭১ দশমিক ৬৬ মিটার দীর্ঘ ২ লেনের স্টিল আর্চের পাশাপাশি থাকবে ৩৩০ মিটার স্টিল ট্রাস। 

এ ছাড়াও ৭৮৫ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ফুটপাত ও সসার ড্রেনসহ থাকবে স্ট্রিট লাইটিং। প্রকল্পের আওতায় রহমতপুর সেতুসহ নতুন ৪৩ কিলোমিটার সড়কটি নির্মিত হলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি শেরপুর ও ময়মনসিংহের যোগাযোগব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়, ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গত এক বছরে শেরপুর অংশের ৪০ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সাত মাস বাকি থাকলেও শুধু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ময়মনসিংহ অংশে এখনো কাজ শুরুই হয়নি। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

স্থানীয়রা বলছেন, তারা জমি দিতে প্রস্তুত আছেন। তবে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ক্ষতিপূরণ না পেলে বসতভিটা ছাড়বেন না কেউ।

কৃষক আলতাব আলী বলেন, ‘আমার ১৩ শতাংশ জমি চাষ করে সংসার চালাই। সবটুকু জমিই ব্রিজের কাজের জন্য দিতে হবে। সরকারি কাজে আমরা কখনোই বাধা দেবো না। কিন্তু আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে তারপর কাজ শুরু করতে হবে।’

দিনমজুর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১ শতাংশ জমিতে ছোট একটি ঘর। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে বসবাস করি। এই জমিটুকু ব্রিজ নির্মাণের জন্য নিয়ে যাবে। আমার থাকার আর কোনো জায়গা নেই। যদি টাকা না পাই, তাহলে অন্য জায়গায় ঘর করব কী করে। টাকা না পেলে আমরা জায়গা ছাড়ব না।’

৫ সন্তান নিয়ে মৃত নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী নুরজাহান ১ শতাংশ জমির উপর নির্মিত ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই দুটি নোটিশ পেলেও আমি এখনো নোটিশ বা টাকা কোনোটাই পাইনি। আমাদের যদি অন্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা না করে দেয়, তাহলে আমরা জায়গা ছাড়ব না।’

সেতু প্যাকেজের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলভমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড-এনডিই। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেন। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে কাজ। ১ বছর ধরে পড়ে আছে ব্লকসহ সেতু ও সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। বড় ক্ষতির মুখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এনডিই’র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সেলিম মিয়া বলেন, শতভাগ প্রস্তুতি নিয়েই আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। অলরেডি আমরা দুটি ক্যাম্প স্থাপন করেছি। সড়ক ও জনপদ থেকে আমাদেরকে দুই মাসের সময় দিয়েছে। এর মধ্যে অধিগ্রহণ জটিলতা শেষ হলেই কাজ শুরু করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকদিন ধরে পড়ে থাকায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। জায়গা ভাড়া, স্টাফদের বেতন, থাকা-খাওয়াসহ প্রতিমাসে ১০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ ছাড়াও টুকটাক আরও অনেক খরচ আছে।’

অল্প সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্নের কথা জানিয়েছেন ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। ইতিমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আমাদের প্রস্তাবনাটি প্রেরণ করা হয়েছে। এটি অনুমোদন হয়ে আসলেই, ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ প্রদানের মাধ্যমে আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করব।’

এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর