Logo
Logo

সারাদেশ

সিলেটে পাথর কোয়ারি না খুললে হরতাল

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক, সিলেট

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৩

সিলেটে পাথর কোয়ারি না খুললে হরতাল

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি খুলে না দিলে হরতালের ডাক দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। কোয়ারি খোলার দাবিতে উপজেলার বিছানাকান্দি পার্শ্ববর্তী হাদারপার বাজারে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসম্বর) দুপুরে মানববন্ধন ও সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিছানাকান্দি পাথর ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান উপদেষ্টা এম এ হকের সভাপতিত্বে এবং বিছনাকান্দি পাথর সাপ্লাইয়ার সমিতির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য বদরুজ্জামান বদরুলের যৌথ পরিচালনায় সভাটি হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে কোয়ারি থেকে যন্ত্র ছাড়া হাত দিয়ে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে আমাদের দাবি পূরণ করা হচ্ছে না। একাধিকবার হাইকোর্ট অনুমতি দিলেও পরবর্তীকালে আবার উদ্দেশ্যমূলকভাবে রিট করে আগের রায় স্থগিত করা হয়।’

বক্তরা আরও বলেন, ‘ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে পাথর ক্রয়ের লক্ষ্যে গত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিছনাকান্দিসহ সিলেটের সব পাথর কোয়ারি থেকে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ করে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বর্তমান নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যৌক্তিকতা বিবেচনায় পাথর বিছানাকান্দিসহ সব পাথর কোয়ারি খুলে দেবে। তা না হলে আমরা হরতালের ডাক দিতে বাধ্য হব।’

‘কোয়ারি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী-শ্রমিকসহ এ সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে আছেন বছরের পর বছর। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।’

সমাবেশে বক্তব্য দেন, বিছনাকান্দি পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, ব্যবসায়ী আব্দুন নুর, সাবেক মেম্বার ওসমান গনি, বিএনপি নেতা ইউনুস আলী ও আব্দুস শহীদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপুর দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনপদ সিলেট। ভারত সীমান্তঘেষা এ জেলায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম উৎস পাথর কোয়ারি। গেজেটভুক্ত বালুমিশ্রিত সিলেটের কোয়ারিগুলো হচ্ছে- গোয়াইনঘাটের জাফলং ও বিছনাকান্দি, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, উৎমা, শাহ আরেফিন টিলা ও রতনপুর এবং কানাইঘাটের লোভাছড়া ও শ্রীপুর।

ভারত থেকে বয়ে আসা নদ-নদীর উৎসমুখে থাকা এসব কোয়ারিতে প্রতি বছর জমা হয় বালু-পাথরের বিশাল ভান্ডার। বিশেষ করে জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ ও লোভাছড়া এসব ভান্ডারের দেখা মেলে। আগে এসব কোয়ারি ইজারা নিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন করা হতো। একপর্যায়ে যান্ত্রিকভাবে পাথর উত্তোলন শুরু হলে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০১০ সালে পাথর উত্তোলন বন্ধের রায় দেন। 

পরে একাধিকবার আদালত ম্যানুয়ালি পাথর তোলার নির্দেশনা দিলেও পাল্টা আবেদনের প্রেক্ষিতে আবার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

কোয়ারিসংশ্লিষ্টদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন সরকারের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নায়েব আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করেন। পরে তারা প্রতিবেদনে শর্তসাপেক্ষ পাথর কোয়ারি খোলা যেতে পারে মত দেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তবে সিলেটের সব কোয়ারি বালু-পাথর লুট হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এদিকে, খনিজসম্পদ ব্যুরো গত অক্টোবরে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভূতত্ত্ব) আশরাফ হোসেন ও উপ-পরিচালক (খনি ও খনিজ) মাহফুজুর রহমানকে কোয়ারি এলাকার পাথরের ফুটের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই দুই কর্মকর্তা সিলেট ও সুনামগঞ্জের কোয়ারিগুলো পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেন। এর গেজেট এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সর্বশেষ ২০ নভেম্বর একটি সূত্র জানায়, কয়েকজন ব্যবসায়ীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত জাফলং, বিছানাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে হাত দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে অবগত নয় বলে জানায়।

পরে জানা যায়, পাল্টা একটি রিট আবেদন পড়ায় আগের আদেশ স্থগিত করেছেন আদালত। ফলে কোয়ারি সংশ্লিষ্টদের আশার আলো জ্বলে উঠতে না উঠতেই দপ করে নিভে যায়।

রেজাউল হক ডালিম/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর