সোনাগাজীতে মৎস্য চাষের নামে চর দখল
মাল্টিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪২
ছবি : প্রতিনিধি
ফেনীর সোনাগাজীর দক্ষিণাঞ্চলে ফেনী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা বিশাল চরাঞ্চল মৎস্য চাষের নামে দখল করে নিয়ে গেছে ভূমি দস্যুরা। আবহমানকাল থেকে চরাঞ্চলে বসবাসকারী গরু-মহিষ ও ভেড়ার শতাধিক খামারিরা চারণভূমি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। ফলে আশার আলো নিভে গেছে চরবাসীর।
অপরদিকে নদী ও খাল দখল হয়ে যাওয়ায় জেলে পাড়ার শত শত মৎস্যজীবী জেলে পরিবারগুলো তাদের আদিপেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
জানা গেছে, ২০১২ সালে বড় ফেনী নদীর বাঁকা নদী সোজা করণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ফেনী নদীর দু’তীরে পলি জমে হাজার হাজার একর জায়গায় নতুন চর জেগে ওঠে। নতুন চর জেগে ওঠায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সোনাগাজীর দক্ষিণাঞ্চলে চরাঞ্চলের দৃশ্যপট ও পাল্টে যায়। দেখা দেয় আশার আলো। চরাঞ্চলের খোয়াজের লামছি, চর খোয়াজের লামছি, চর খোন্দকার, দক্ষিণ চর খন্দকার, চর রাম নারায়ণ, চর এলেন, বাহির চর, পূর্ব বড়ধলী মৌজায় প্রায় ৪০ হাজার একর ভূমি (নতুন চর) জেগে ওঠে। নতুন চর জেগে ওঠায় এ সব চরাঞ্চলে সরকার ‘সোনাগাজী শিল্পাঞ্চল’ ঘোষণা করে বেশ কিছু ভূমি স্থানীয় ভূমি মালিকদের থেকে অধিগ্রহণ করে নেয়।
৫ আগস্টের পূর্বে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের জেলা, উপজেলার নেতা কর্মীরা সন্ত্রাসীও তাদের দলীয় বাহিনী নিয়ে এমপি প্রকল্প, এসপি প্রকল্প, ওসি প্রকল্প, মেয়র প্রকল্প, চেয়ারম্যান প্রকল্প, প্রবাসী প্রকল্প, আমেরিকা প্রকল্প, ফেনী মৎস্য প্রকল্প ইত্যাদি নাম না জানা নানা মৎস্য প্রকল্পের সাইন বোর্ড লাগিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি সহ বিশাল নদী-খাল ও চরাঞ্চলে পুকুর খনন করে দখল করে নিয়ে যায়। দখল-পাল্টা দখলের ঘটনায় চরাঞ্চলে বেশ কয়েকবার রক্তপাত ও সংঘর্ষের ঘটনায় তখন অশান্ত হয়ে ওঠে সোনাগাজীর চরাঞ্চল।
ভূমি দস্যুদের চরাঞ্চল দখলের ফলে গরু, মহিষ ও ভেড়ার চারণভূমির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। সোনাগাজীর দক্ষিণাঞ্চলের প্রবীণ খামারি রুহুল আমিন ভূঁঞা, আনোয়ারুল কবির প্রকাশ কাবির মিয়া, ফকির আহম্মদ, নাজমুল হক, শামছুল হক, লাতু মিয়া, সমুন, বাহার মিঞাসহ শতাধিক খামারি ও বাথাাইন্যারা তাদের এ সকল পশু খামার নিয়ে বর্তমানে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
চরাঞ্চলের খামারিরা জানান, ‘চরাঞ্চলের খামারের গরু, মহিষ ও ভেড়ার মাংস এবং দুধ বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। সোনাগাজীর চরাঞ্চলের বিলুপ্তি ঘটলে ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে মাংস ও দুধের সংকট দেখা দেবে। ফলে এটি জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। থমকে দাঁড়াবে দেশের অর্থনীতির চাকা।’
সোনাগাজীর চর খোন্দকার গ্রামের জেলে পাড়ার কয়েকজন জেলে বলেন, ‘আদিকাল থেকে আমরা ফেনীর নদী ও খালে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য গত ২-৩ বছরে ফেনী নদীর একাংশ, শাখা খালগুলো ভূমি দস্যুদের দখলে চলে যাওয়ায় আমাদের এখন চরম দুর্দিন চলছে। অনেকের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে।’
স্থানীয়রা জানান, ‘ভূমিদস্যুরা জোর করে চরাঞ্চলে মৎস্য ঘের তৈরি করে পুকুর খনন করে হাজার হাজার একর জমি জবর দখল করে নেয়। এতে মৎস্যজীবী ও খামারিদের মাথায় হাত পড়ে। ইতোমধ্যে ভূমিদস্যুদের হামলা ও হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য মৎস্যজীবীরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘সোনাগাজীর চরাঞ্চলের ভূমিদস্যুদের কবল থেকে সরকারি খাস এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এমআই