মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
পতিত জমির ঘাস খেয়েছে গরুতে; ঠুকে দিয়েছেন মামলা। ধানক্ষেতে যাওয়ার রাস্তায় তারা বেড়া দিয়েছেন; আপত্তি জানাতেই মামলা ঠুকেছেন। বন্ধক দেওয়া জমি দখলে নিয়েছেন, টাকা ফেরত চাইতেই মামলা ঠুকেছেন পাওনাদারের নামে। এমনই কথায় কথায় মামলা ঠোকেন তারা পাঁচ বোন।
‘মামলাবাজ’ এই বোনদের বাড়ি জামালপুরের সদর উপজেলার নুরুন্দী তারাগঞ্জে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মৃত ছফর উদ্দিনের মেয়ে খুশি বেগম, আন্না বেগম, তন্না বেগম, তৃপ্তি ও বিপাশা মিলে এলাকায় মামলার ত্রাস সৃষ্টি করেছেন।
শুধু মামলাই নয়- যাতায়াতের পথ বন্ধ করা, পথে গোবর ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিরও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। কামরুল ইসলাম নামে এক কৃষকের অভিযোগ, অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে জমি সাব কবলা নিয়েছিলেন। পরে ঢাকায় গিয়েছিলেন কাজে। এলাকায় ফিরে দেখেন জমি বেদখল হয়ে গেছে। এ নিয়ে কথা বলতে যাওয়ায় মামলা হয়েছে তার নামে।
৭১ বছরের বৃদ্ধ হযরত আলী ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন বাড়ির সামনে গোবর রাখা। শুধু গোবর না। বাড়ির সকল আবর্জনা তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথে ফেলে দিনের পর দিন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন খুশি ও তার বোনেরা।
সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা পল্টনের মেশিনের পানি দিয়ে ১০০ একর জমি আবাদ করেন। কিন্তু খুশি বেগম এই ধানক্ষেতে যাওয়ার একমাত্র রাস্তায় বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। এ কারণে ধানসহ নানা শস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি জমিতে যেতে পারছেন না শতাধিক কৃষক। এ নিয়ে কথা বলতে গেলেও মামলা দেওয়া হয় হাফিজুর রহমান নামের এক কৃষককে।
এলাকাবাসী বলছেন, অনেক জায়গাজমি থাকায় এই বোনের দল ও তাদের স্বামী-সন্তানরা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। ৭ লাখে বন্ধক দেওয়া জমির টাকা ফেরত না দিয়েই জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ জানানো স্থানীয় জয়নাল আবেদীন জমি ফেরত চাওয়ায় একাধিক মামলা খেয়েছেন।
গৃহপালিত পশু ও অসহায় কৃষক মন্নেস আলীও ছাড় পাননি খুশি-বোনদের হাত থেকে। মন্নেস বলেন, পতিত জমিতে গরু-ছাগল লালন-পালন করেন তিনি। খুশি বেগম ও তার বোনদের জমি থেকে ঘাস খেয়েছিল তার একটি গরু। এতে মামলা খেতে হয়েছে তাকে।
মামলা থেকে রক্ষা পাননি খুশিদের একমাত্র ভাই সোহাগও। গত ৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী ভাই তার মামলাবাজ বোন ও ভগ্নিপতিদের বিরুদ্ধে জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ করেন, তার বাবা ছফর উদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকেই বোনেরা মিলে তার জমিজমা দীর্ঘদিন ধরে জোরপূর্বক দখল করে আছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীসহ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে অর্ধশতাধিক সালিশি বৈঠক করলেও এর কোনো সমাধান হয়নি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোহাগের সম্পত্তি জবরদখলের পরেও তিনটি মিথ্যা মামলা ও এক ডজন অভিযোগ থানায় জমা দিয়েছেন বোন ও বোনের পরিবারের লোকজন। নিয়মিত প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তার কয়েক একর জমি, তারাগঞ্জ বাজারে বড় একটি মার্কেট দখল করে আছে এই মামলাবাজরা।
এ বিষয়ে অভিযুক্তরা মুখ খোলেননি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও এই মামলাবাজদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এইচকে/