Logo
Logo

সারাদেশ

রাস্তা সংস্কার

তিন মাসের কাজ শেষ হলো না দুই বছরেও

Icon

খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:১৮

তিন মাসের কাজ শেষ হলো না দুই বছরেও

খুলনার কয়রা উপজেলায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে ঠান্ডা মিশ্রণ দিয়ে রাতের আঁধারে পিচ ঢালাইয়ের কাজ করেছে ঠিকাদারের লোকজন। প্রভাবশালী নেতার আস্থাভাজন পরিচয় দিয়ে স্থানীয়দের বাধাও উপেক্ষা করেছেন তারা। কয়রা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী আঠারো মাইল থেকে ঠান্ডা মিক্সার (পিচ ও পাথর) এনে কাজ করায় কাজের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দেয়াড়া থেকে বাগালী ইউনিয়নের হোগলা অভিমুখী রাস্তা সংস্কার কাজের মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় অর্ধেক কাজ এখনো বাকি রয়েছে। কাজের ধীরগতি ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। 

ডব্লিউবিএম এ নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার, হেজিংয়ে দুই নম্বর ইটের ব্যবহার এবং প্যারাসাইডিং তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এসব বিষয়ে স্থানীয়রা প্রশাসনকে জানালেও সুফল পাননি। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তবু গুণগত মান বজায় না রেখে পিচ ঢালাই করা হয়েছে।

কয়েক মাস কাজ বন্ধ রাখার পর ১৭ ডিসেম্বর বিকালে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করা হয়। আঠারো মাইল থেকে পিচের মিশ্রণ আনা হয়। পিচের মিশ্রণ রাস্তায় দেওয়া শুরুর পর একপর্যায়ে সন্ধ্যা নেমে আসে এবং তিনটি গাড়িভর্তি পিচের মিশ্রণ ঠান্ডা হয়ে যায়। স্থানীয় কিছু মানুষ সেখানে গিয়ে মিশ্রণ গরম করার পরামর্শ দিলে তারা কর্ণপাত করেননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান এ বিষয়ে এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেনের কাছে কাজের মান বজায় রাখার অনুরোধ করেন, কিন্তু তিনি বিষয়টি আমলে নেননি।

এ ঘটনার পর স্থানীয় চেয়ারম্যান, সংবাদকর্মী, আইনজীবী ও বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাসকে অবহিত করেন। এরপর উপ-সহকারী প্রকৌশলী গুণগত মান ঠিক না থাকায় ঠিকাদারের লোকজনকে কাজ করতে নিষেধ করেন এবং ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। 

কিন্তু পরবর্তীতে ঠিকাদারের লোকজন ফের ঠান্ডা পিচের মিশ্রণ দিয়ে কাজ শুরু করেন। স্থানীয়রা ফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠানোর আশ্বাস দেন, তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য ঘটনাস্থলে আসেননি। স্থানীয় সচেতন মহল প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করেও ঠান্ডা পিচ দিয়ে কার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলার আরএন্ডএইচ দেয়াড়া থেকে হোগলার হাট জিসি ও গড়ইখালী জিসির চারশ মিটার রাস্তা সংস্কারের কাজের টেন্ডার পেয়েছে খুলনার মেসার্স রওশনারা এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর কাজ শুরু করার শর্তে কাজটি শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রওশনারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনা জেলা ছাত্রদল নেতা রুবেল আমার ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি করছেন, আমি কিছু জানি না।’ 

সাব-কন্ট্রাক্টর ও কাজের তদারককারী রুবেল বলেন, ‘কিছু সমস্যার কারণে কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। দেশের পট-পরিবর্তনের পরে কাজটি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি।’

কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী মো. দারুল হুদা বলেন, ‘কার্পেটিংয়ের সময় উপ-সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অনুপযুক্ত পিচ দিতে চাইলে তিনি নিষেধ করেন এবং কাজ বন্ধ রাখতে বলে চলে আসেন। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। আমরা ত্রুটিপূর্ণ কাজ হলে তার বিল আটকিয়ে রাখব।’

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, ‘রাতে উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে কাজ বন্ধের ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। গ্রামপুলিশ ও ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় কাজটি এখন বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে ত্রুটিপূর্ণ কার্পেটিং উঠিয়ে নতুন করে কার্পেটিং করার নির্দেশ দিয়েছি।’

এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর