ছবি : বাংলাদেশের খবর
জামালপুরের মাদারগঞ্জে আয়োজন করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা, যেখানে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পলাশপুর কালার মোড় এলাকায় বিশাল মাঠজুড়ে আয়োজিত এ মেলা ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। মেলাকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে আশপাশের গ্রামগুলোতে।
মেলায় স্থান পেয়েছে হরেক রকম মিষ্টান্ন, বড় বড় মাছ, কাঠের আসবাবপত্র, ঘোড়দৌড় এবং নানা ঐতিহ্যবাহী খেলার আয়োজন। বিভিন্ন ধরনের দেশীয় মাছের পাশাপাশি চিতল, বোয়াল, কোরাল, রুই-কাতলার মতো মাছ, যেগুলোর ওজন ৫ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত। এসব দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। এ ছাড়া নাগরদোলা, চরকি, দোলনার মতো বিনোদনমূলক আয়োজন শিশুদের মন কেড়েছে।
মিষ্টির পসরা থেকে শুরু করে কসমেটিক সামগ্রী ও প্রসাধনীর দোকানে নারীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। খাবারের দোকানে রয়েছে চটপটি, ফুচকা, আচারসহ নানা মুখরোচক পদ। এবারের মেলায় প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক দোকান বসেছে, যেখানে জামাইরা তাদের শ্বশুরবাড়ির জন্য পছন্দের জিনিসপত্র কিনছেন।
মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামের বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। শ্বশুর-শাশুড়িরা জামাইদের হাতে মেলার জন্য অর্থ তুলে দেন। জামাই সোজা মিয়া জানান, ‘মেলার আগেই শ্বশুরবাড়িতে এসে মেলায় অংশ নিয়েছি। এই আয়োজন খুবই আনন্দদায়ক।’
১৭ ডিসেম্বর মেলার উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি ড. মো. আশরাফুর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম এবং মেলা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
মেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রয়েছে ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সিসি ক্যামেরা। গাড়ি পার্কিংয়ের বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
মিষ্টি ব্যবসায়ী সোলাইমান কবির বলেন, ‘মেলায় সবচেয়ে বেশি মিষ্টি বিক্রি হয়, কারণ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জামাইদের আপ্যায়নের জন্য এখান থেকে মিষ্টি নিয়ে যান।’
মাছ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বড় বড় মাছ ভালো বিক্রি হচ্ছে এবং দর্শনার্থীদের উপস্থিতি আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি।’
জামাই মেলা শুধু বিনোদনের উৎস নয়; এটি একটি ঐতিহ্যবাহী আয়োজন, যা পারিবারিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করে।
মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেল বলেন, ‘মেলায় সব ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে এবং প্রতিদিন মানুষের সমাগম বাড়ছে। মেলা সফল করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
জামাই মেলা শুধু একটি আয়োজন নয়; এটি মাদারগঞ্জবাসীর গর্ব এবং তাদের সংস্কৃতির অংশ। পারিবারিক মিলনমেলা ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে এই মেলা হয়ে উঠেছে সবার জন্য আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু।
মাহমুদা আক্তার/এমজে