নিখোঁজের ১৭ বছর পর ভারত থেকে ফিরলেন বীরগঞ্জের সাদেকুল
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৫
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার দলুয়া গ্রামে ১৭ বছর পর ফিরে এসেছেন কৃষক পরিবারের সাদেকুল ইসলাম (৪২)। তার ফিরে আসায় গ্রামে চলছে নানা ধরনের কৌতূহল। অনেক মানুষ তাকে এক নজর দেখতে ছুটে আসছেন। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করে তিনি আবেগাপ্লুত হচ্ছেন।
১৭ বছর ধরে তার কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। দীর্ঘ এই সময়ে সাদেকুল ইসলাম ভারতে ছিলেন। সেখানে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন। পরবর্তীতে তাকে একটি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে নিখোঁজ হওয়া সাদেকুল ইসলাম ২০১৫ সালের ১১ জুলাই থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কলকাতার একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৪ ডিসেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
২৪ ডিসেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি। অবশেষে দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টার ফলে ২৫ ডিসেম্বর সাদেকুল ইসলাম তার নিজ জন্মভূমি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামে ফিরে আসেন। সাদেকুল ইসলামের বাবা মো. আকবর আলী একজন কৃষক এবং মা মোছা. সিদ্দিকা বেগম গৃহিণী। ৪ ভাই, ১ বোনের মধ্যে সবার বড় সাদেকুল ইসলাম।
২০০০ সালে পাশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী কোটাপাড়া গ্রামে বিয়ে করেন সাদেকুল। বিয়ের পর এক ছেলের বাবা হন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পরিবারের সঙ্গে সুখেই কাটছিল তাদের পরিবার। কিন্তু হঠাৎ ২০০১ সালে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বাড়তে থাকে তাঁর এ সমস্যা।
এ পরিস্থিতিতে স্ত্রী দুই বছরের সন্তান সঙ্গে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যান বাবার বাড়ি। সাদেকুলের পাশে এসে দাঁড়ান পরিবারের লোকজন। তাকে সুস্থ করে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে ২০০৭ সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন সাদেকুল। এরপর সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অপেক্ষা করতে করতে আর জীবিত নেই ধরে নেয় পরিবার।
সাদেকুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ হয়ে ভারতে যাওয়ার বিষয়টি তার মনে পড়ে না। তবে যখন কিছুটা সুস্থ হন তখন জানতে পারেন তিনি কলকাতায় এক মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে সুস্থ হলে বাড়ির ঠিকানা মনে পড়ে তার। শুক্লা নামে হাসপাতালের এক কর্মকর্তার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। তাকে বাড়ির ঠিকানা জানালে তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন।
আকবর আলী জানান, মেধা না থাকায় চতুর্থ শ্রেণি লেখাপড়ার পর তার সঙ্গে সংসারের কাজে যোগ দেন সাদেকুল। এরপর বিয়ে করে ভালোই দিন কাটছিল। কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পর নিখোঁজ হন।
ছেলের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সমাজের সকলের কাছে দাবি জানান আকবর আলী।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন পেলে বিধি মোতাবেক সরকারি সুযোগ-সুবিধার জন্য পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।
প্রদীপ রায় জিতু/এমএইচএস