কচুয়ায় অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন
চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৬
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল মডেল ইউনিয়নের তেগুরিয়ায় স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ওবায়েদুল হক উচ্চ বিদ্যালয়। এ নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলেও ২০০৮ সালে এসে বিদ্যালয়ের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ নাম পরিবর্তন করে তেগুরিয়া উচ্চবিদ্যালয় নামকরণ করেন। দীর্ঘ বছর পর কোনো রকম দাপ্তরিক অনুমোদন ছাড়াই আবারও পূর্বের নামে ফিরে এসেছে বিদ্যালয়টি। এটিকে স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান গেট ও বিদ্যালয়ের ভবনে লেখা আছে ‘ওবায়েদুল হক উচ্চ বিদ্যালয়, তেগুরিয়া’।
নাম পরিবর্তন নিয়ে এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা হয় বিদ্যালয় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও ভূমিদাতা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালীন নাম কেন পরিবর্তন করা হলো, সে জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন কচুয়ার বাসিন্দা ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন। তার রিট খারিজ করে দেয় উচ্চ আদালত। এরপর উচ্চ আদালতে রিটের পর বিদ্যালয়ের নামের বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের নিয়মানুযায়ী তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন তৎকালীন কচুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি শিক্ষাবোর্ডের নিয়মানুসারে কোনো ব্যক্তির নামে বিদ্যালয়ের নামকরণের জন্য যেসব বিধি অনুসরণ করতে হয়, তার কোনোটিই পাননি। ফলে তিনি বিদ্যালয়ের নাম তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় রাখার জন্য সুপারিশ করেন।
দীর্ঘ বছর বিদ্যালয়টি তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচালিত হয়ে আসলেও গত ৬ আগস্ট স্থানীয় বাসিন্দা ও কচুয়া উপজেলা ছাত্রদলের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক সাইফুল নিজ অর্থায়নে তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ওবায়েদুল হক উচ্চ বিদ্যালয় লিখেন।
এ বিষয়ে সাইফুল বলেন, ‘আমি নিজ অর্থ খরচ করে গত ৬ আগস্ট বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছি। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করেন। আমার মতে, তারা একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এটি করেছিলেন।’
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও তেগুরিয়া গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে মো. সুলতান আহমেদ জানান, বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেন তৎকালীন এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে তার সঙ্গে কমিটির অন্যান্য লোকজনও জড়িত ছিলেন।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের পাটোয়ারীর কক্ষে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ। তিনদিনের ছুটিতে আছি। এ বিষয়ে আমি বক্তব্য দিতে পারব না। সভাপতির সঙ্গে কথা বলেন।’
বর্তমানে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কী নাম- তা যাচাই করার জন্য যাওয়া হয় কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। উপজেলা সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইমরান বলেন, ‘আমাদের কাছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে দেওয়া তথ্যে ‘তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’নাম লেখা আছে।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন সম্পর্কে বলেন, ‘আমার সঙ্গে তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন সম্পর্কে কেউ যোগাযোগ করেননি। কিন্তু ফোন করে আমাকে অনেকে জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষককে ডেকে বিষয়টি জানার পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
এমজে/ওএফ