মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি তদন্তে দুদকের অভিযান

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯
-678601dba7c79.jpg)
মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিন্ডিকেট ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কুষ্টিয়া বিএডিসির (সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল অভিযানের নেতৃত্ব দেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪৮ কোটি টাকার প্রাক্কলন ব্যয় ধরে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নামে গত চার বছরে ১৯২ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৭৫ শতাংশ। তবে মাঠচিত্রে এই কাজের সিংহভাগের কোনো অস্তিত্ব নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি তদন্তের দাবিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। নিজ পছন্দের ঠিকাদার সিন্ডিকেট, প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে তিনজেলার স্থানীয় নেতাদের কারসাজিতে এই অর্থের বেশিরভাগই আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে অতিউর্বর মাটির জেলা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলকে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে নিষ্কাশন সুবিধাসহ সেচব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে বিএডিসি। এতে সুবিধা সৃষ্ট জমিতে প্রতি বছর ৫১ হাজার টন ধান, গম, ভুট্টাসহ খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে গৃহীত হয় প্রকল্পটি। ২৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার প্রাক্কলন ব্যয় ও পাঁচ বছর বাস্তবায়নকাল ধরে অনুমোদন লাভ করে ‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’।
প্রকল্প বাস্তবায়নের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১৩০টি সৌরচালিত ডাগওয়েল নির্মাণ; যার প্রতিটি নির্মাণ ব্যয় ১২লাখ টাকা, প্রতি কিলোমিটার ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮০ কিমি খাল পুনঃখনন, ২৫৫টি পাম্প হাউজ নির্মাণ; যার প্রতিটির ব্যয় ১৫ লাখ টাকা, ৯৫টি ২ কিউসেক ফোর্সমোড পাম্প সেট স্থাপন; যার প্রতিটির ব্যয় ১৫ লাখ টাকা, ৫ কিউসেক সোলার পাম্প ২৫টি; যার প্রতিটি নির্মাণ ব্যয় ১৫ লাখ টাকা, ১৫টি বড় আকারের সেচ অবকাঠামো; যার প্রতিটিতে ব্যয় ৪০ লাখ টাকা, ১২০টি মাঝারি আকারের সেচ অবকাঠামো; যার প্রতিটি ব্যয় ২৫ লাখ টাকা, ৩০০ ছোট আকারের সেচ অবকাঠামো; যার প্রতিটির ব্যয় সাড়ে ৭ লাখ টাকা এবং ২১৫টি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ; যার প্রতিটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নীলকমল পাল বলেন, দুদকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএডিসি কুষ্টিয়া সদরে অভিযান চালানো হয়েছে। ২৪৮ কোটি টাকার মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম, সিন্ডিকেট, দুর্নীতি এবং প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে প্রকল্পের রেকর্ডপত্র যাচাই বাছাইয়ের জন্য চেয়েছিলাম। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালক বা সহকারী প্রকৌশলী কেউ অফিসে উপস্থিত না থাকায় আমরা শুধু তালিকা পেয়েছি। সেই তালিকানুযায়ী মাঠে সরেজমিনে তদন্ত নেমেছি।
দুদকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া মুজিব নগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এর পাশাপাশি প্রকল্পে পছন্দের ঠিকাদারের কাছে শিডিউল বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। সেখানে কোনো অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। যেহেতু তিনটি জেলা মিলে প্রকল্পটি বিস্তৃত। সেহেতু তিন জায়গাতেই দুদকের অভিযান চালবে। সরেজমিন ও রেকর্ডপত্র যাচাই করে আমরা অবশ্যই তথ্য উদঘাটন করতে পারবো। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে যারাই জড়িত থাক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে বিএডিসি(সেচ) কুষ্টিয়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আলী আশরাফ বলেন,আমি ৮ মাস কুষ্টিয়া যোগদান করেছি। এই প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। দুদকে কারা অভিযোগ করেছে জানি না। দুদক আমার কাছে নথিপত্র চেয়েছে। জানতে পেরেছি আজ দুদক অভিযান চালিয়েছে।
আকরামুজজামান আরিফ/এমএইচএস