সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
অটোরিকশার মালিককে ছিনতাইকারী বানিয়ে দিল পুলিশ

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৯
-679633f34f6a8.jpg)
সিলেটে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সংঘটিত ছিনতাইকাণ্ডে ওই গাড়ির মালিককেই ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলে ধরেন সিলেট মহানগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার কলবাখানি ৫৭ নং বাসার মৃত আজমল হোসেনের ছেলে মো. আজহার হোসেন উজ্জল।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আজহার জানান, গত ২০ জানুয়ারি রাতে সিলেট মহানগরের আম্বরখানা থেকে পাঠানটুলাস্থ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে যাওয়ার পথে দুই নারী (মা-মেয়ে) ছিনতাইয়ের শিকার হন। যে অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন সেটি তার (আজহার) মালিকানাধীন। কিন্তু ঘটনার আগে ১৭ জানুয়ারি তিনি গাড়িটি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকার রাধানগর গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে সাইফুল আলম লখনকে ভাড়ায় চালাতে দেন। তবে ছিনতাই ঘটনার পর আজহার জানতে পারেন- সেদিন গাড়িটি হামিদ নামে একজনকে ভাড়ায় চালাতে দেন লখন।
এদিকে, ২০ জানুয়ারি রাতে সাবিনা ইয়াসমিন নামে এক নারীর অভিভাবক পরিচয়ে একজন আজহারের মুঠোফোনে কল দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি অবগত করে বলেন- রাত ৯টার দিকে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার (আজহারের) অটোরিকশাযোগে যাওয়ার পথে সাবিনা ও তার মায়ের কানের স্বর্ণের দুল ও টাকা ছিনতাই করেছেন চালকসহ ৪ জন। এ ঘটনায় হামিদ নামে এক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গাড়ির মালিক হিসেবে সিলেট কোতোয়ালি থানায় যোগাযোগ করতে আজহারকে বলেন ফোনকারী ব্যক্তি।
খবর পেয়ে ওই রাতেই (২০ জানুয়ারি) কোতোয়ালি থানায় গেলে সেকেন্ড অফিসার আব্দুল আলীম আজহারকে অভিযোগকারীদের সঙ্গে দেখা করে সমাধান করার জন্য বলেন। পরে বাদীপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আজহার দেখা করলে তারা তাকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটমাট করার জন্য বলেন। কিন্তু আজহার অসম্মতি জানিয়ে বলেন- ‘ছিনতাইকাণ্ডের সঙ্গে আমার গাড়ির চালক জড়িত থাকলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। ছিনতাইয়ের শিকার ভিকটিমকে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। কিন্তু আমি কেন টাকা দেবো? আমাকে কেন হয়রানি করা হচ্ছে? আমি তো ছিনতাইয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই।’
টাকা দিতে অসম্মতি করায় এ সময় আজহারকে মামলার হুমকি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আজহার হোসেন উজ্জল আরও জানান, ওই রাতে (২০ জানুয়ারি দিবাগত) অজ্ঞাত একটি ফোন নম্বর থেকে ফোন করে তাকে বলা হয়- সিলেট মহানগরের সোবহানীঘাট এলাকায় গিয়ে ২ লাখ টাকা দিয়ে গাড়িটি নিয়ে যেতে। কিন্তু আজহার বিষয়টি ফাঁদ মনে করে সোবহানীঘাট যাননি। ওই রাতে লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. মিজানুর রহমান আহজারকে ফোন করে দিনের বেলা কোতোয়ালি থানায় যেতে বলেন। পরদিন (২১ জানুয়ারি) আজহার তার ভাইকে নিয়ে কোতোয়ালি থানায় গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে গ্রেপ্তার করেন এসআই মিজান। এ সময় আজহারকে তিনি বলেন- ‘আপনি এই ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত, তাই আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলো।’
এদিন বিকাল ৪টার পর আজহারকে আদালতে প্রেরণ করলে পরদিন তার আইনজীবির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ বিচারক তাকে জামিনে মুক্তি দেন।
আজহার হোসেন উজ্জল এসআই মিজানের প্রতি অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তিনি (মিজান) আমার কাছ থেকে টাকা আদায়ের লক্ষ্যে বাদীর সঙ্গে যোগসাজশ করে ইচ্ছাকৃতভাবে হয়রানি করেছেন। এসআই মিজান আমার ছবি তুলে সংবাদমধ্যমে দিয়েছেন। এতে আমার চরম মানহানি ঘটেছে। পুলিশ সত্যটা জেনেও আমার কাছ থেকে টাকা না পেয়ে এমনটি করেছে। এ বিষয়ে আমি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও উপ-কমিশনার (উত্তর) বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। তারা তদন্তসাপেক্ষে আমার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
আজহার হোসেন উজ্জল বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ সংবাদমাধ্যমে যে প্রেস রিলিজ দিয়েছে এতে উল্লেখ করেছে, তারা আমাকে ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু কোর্টে প্রেরণের নথিতে আমাকে কোতোয়ালি থানার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করেছে বলে উল্লেখ করেছে। মূলত আমি থানায় যাওয়ার পরই তাৎক্ষণিক আমাকে ধরে ওই মামলায় আসামি দেখিয়েছে পুলিশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাকা না দেওয়ায় আমার প্রতি এমন অন্যায় করা হয়েছে। আমি সঠিক বিচার চাই।’
লামাবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ ও এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মিজানুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছিল। আদালত থেকে একজন জামিন নিয়েছেন। অপরজনকে আগামীকাল (সোমবার) আদালতে তুলে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে। এ মামলায় আর কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো তথ্য পেলে এর ভিত্তিতে পরবর্তীতে বাকিদের ধরতে অভিযান চালানো হবে।’
তার বিরুদ্ধে আজহারের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে এসআই মিজান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’
পরে এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বাদীপক্ষ হয়তো টাকা দাবি করেছে গাড়ির মালিকের কাছে। পুলিশ এ বিষয়ে কিছু বলেনি। তারপরও তার অভিযোগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ের মামলার বাদী সাবিনা ইয়াছমিনের স্বামী করিম উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘গাড়ির মালিককে আসামি করার কথা আমরা কখনো পুলিশকে বলিনি। এমনকি কোনো আসামির বিষয়েই অবগত নই। পুলিশ আমাদেরকে বলেছে- তারা আগে অভিযান চালিয়ে ধরবে তারপর আসামি দিবে।’
টাকা দাবির বিষয়ে তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও শাশুড়ির সঙ্গে ৫৫ হাজার টাকা ও পরনে যে স্বর্ণালঙ্কার ছিল, এগুলো হিসাব করে ক্ষতিপুরণ হিসেবে ২ টাকা চেয়েছি। কিন্তু না দিলে যে মামলায় আসামি করব- এটি বলিনি।’
রেজাউল হক ডালিম/এমজে