Logo

সারাদেশ

সোনারগাঁয়ে মান্নান ও তার ছেলের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫২

সোনারগাঁয়ে মান্নান ও তার ছেলের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা

ছবি : সংগৃহীত

গত ৮ জানুয়ারি ‘দৈনিক বাংলাদেশের খবর’ পত্রিকায় ‘সোনারগাঁয়ের অঘোষিত সরকার মান্নান’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন সময় ‘দৈনিক বাংলাদেশের খবর’ পত্রিকায় ফোনে এবং পত্রিকাটির অফিসে এসে প্রতিবেদকের কাছে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার ছেলে খাইরুল ইসলাম সজিবের দখল, চাঁদাবাজি ও অপকর্মের বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ সরবরাহ করেন তারা। ‘দৈনিক বাংলাদেশের খবর’ কর্তৃপক্ষের কাছে আসা তথ্য ও প্রমাণ পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপি এর অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতার দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের পর এক প্রকার খালি মাঠে গোল করার কাজে আদা-জল খেয়ে নামেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার ছেলে জেলা যুবদল নেতা খাইরুল ইসলাম সজিব। 

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার শুধু পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা শিল্পাঞ্চল ও আশপাশের এলাকায় কমপক্ষে ৫০টির বেশি ছোট-বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশিরভাগই দেশ সেরা বা বাঘা বাঘা শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর ৫ আগস্টের পর এ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নেয় দিন মজুর থেকে হঠাৎ ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বনে যাওয়া বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নান। পরে স্থানীয় গুটিকয়েক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা-কর্মীকে হাতে রাখতে এবং তার একচ্ছত্র রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে মাত্র ৫জন ব্যক্তিকে ৭টি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। আর মান্নান ও তার ছেলে খাইরুল ইসলাম সজিব নিয়ন্ত্রণে নেন ৪৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের। 

সূত্র মতে, ৫ নেতাকে দেওয়া ৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উপজেলা বিএনপি নেতা ঝাউচর এলাকার আশরাফ প্রধানকে দেওয়া হয়েছে আনন্দ শিপইয়ার্ড, মাগুরা পেপার মিল এবং মেঘনাঘাট স্যামসাং ৭১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সভাপতি ও স্ত্রীসহ ফোর মার্ডারের সাবেক আসামি রফিকুল ইসলাম বিডিআরকে দেওয়া হয়েছে লাফার্জ সিমেন্ট -১ ও ২, তমিজ উদ্দিনকে দেওয়া হয়েছে ওয়েষ্টার্ন-১ ও ২, আবুল হাসেমকে দেওয়া হয়েছে বালুর মাঠ এলাকার প্যাকেজিং কোম্পানি, স্থানীয় জয়নাল মেম্বারকে দেওয়া হয়েছে তাসনিম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

অপরদিকে, মান্নান ও তার ছেলে নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ সিমেন্ট, ফ্রেশ ফিড, ফ্রেশ ডালডা, ফ্রেশ ফাইবার, ফ্রেশ চা, ফ্রেশ বলপেন, মেঘনা সুগার, মেঘনা সিরামিকস, তানভীর পেপার মিল, সোনারগাঁ সল্ট, মেঘনা সীড ক্রাসিং, সোনারগাঁ সীড ক্রাসিং, জনতা ফ্লাওয়ার মিল,তাসনীম কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা এডিবল অয়েল, মেঘনা পেপার মিল, মেঘনা টিস্যু, মেঘনা ডায়াপার, হামদর্দ, মেঘনা পাম্প এন্ড পেপার, আব্দুল মোনায়েম লিমিটেড,  সান ফ্যাব্রিক্স,  এভারেস্ট পাওয়ার প্লান্ট, এম,এস,আর,এল পাওয়ার প্লান্ট, এম,পি,পি,এল পাওয়ার প্লান্ট, সুরমা মাস্টার্ড ওয়েল, বসুন্ধরা পেপার মিল, বসুন্ধরা মাল্টি পেপার, বসুন্ধরা ফুড এন্ড বেভারেজ, বসুন্ধরা কেমিক্যাল, বসুন্ধরা সীড ক্রাসিং, মেঘনা ঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট, মেঘনাঘাট সামিট ৩০৫/৩৩৭ মেগাওয়াট -১, মেঘনাঘাট সামিট ৭৫০ মেগাওয়াট -২ এর মতো ৪৩ টি বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠান। 

শুধু মেঘনা শিল্পাঞ্চলই নয়, অভিযোগ রয়েছে-পিরোজপুর ইউনিয়নের কান্দারগাঁও এলাকায় ছয়হিস্যা মৌজায় মেঘনা গ্রæপের বালু ফেলা জায়গায় মান্নানের নির্দেশে ইট, বালু এনে জোর পূর্বক সম্প্রতি কাজ শুরু করার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয় কৃষকদের জমি পুরোপুরি ক্রয় না করায় প্রতিষ্ঠান থেকে বাঁধা দেওয়া হলে কাজ বন্ধ থাকে। তবে, আগের ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, মান্নান ও তার ছেলের নির্দেশ ছাড়া অন্য কেউ কাজ করতে গেলে মেরে সে খানেই বালুর নিচে পুঁতে রাখা হবে।  

সূত্র আরও জানায়, চলতি মাসের প্রথম দিকে উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের জাইদেরগাঁও এলাকায় বাংলা ফুড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ৪২ শতাংশ জমি ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ডিপলেড ওয়্যার ল্যাবরটরি লিমিটেডকে দখল করে দেয় মান্নান পন্থি তিন নেতা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাফিউদ্দিন মজনু, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক ও মজনুর ভাই মুশফিকুল ইসলাম মোহন এবং যুবদল সদস্য সেলিম মিয়া। 

অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্টের পর মোগরাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ও মান্নান সমর্থক আতাউর রহমান ডিপলেড ওয়্যার ল্যালরেটরি লিমিটেডের পক্ষে কাজ শুরু করার কথা ছিল কিন্তু আজহারুল ইসলাম মান্নান আতাউরকে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবগত। তাই এখানে গিয়ে কাজ করলে আতাউরের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারেক রহমানের কথা বলে আতাউরকে থামিয়ে সেখানে মান্নানের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত ওই তিন নেতাকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নেন মান্নান। যদিও এ নিয়ে মান্নানের সাথে আতাউরের দূরত্ব তৈরি হয় বলে সূত্রটি দাবি করে।

এ ঘটনার পর বাংলা ফুডের কার্য নির্বাহী পরিচালক এস.এম জামাল বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন। 

এদিকে, মান্নানের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে ছেলে সজিবতো রয়েছেই। তার ওপর সকল কাজের কাজি যুবদল নেতা খাইরুল ইসলাম সজিবের প্রতিদিন সর্বনিম্ন আয় ৪ লাখ টাকা রয়েছে বলে সূত্র জানায়। তা-ও শুধুমাত্র একটি স্থান থেকে। সেই হিসেবে তার ছেলের একটি খাত থেকে মাসে আয় কোটি টাকার ওপরে। 

সূত্র জানায়, মেঘনা শিল্পাঞ্চলের মেঘনা পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় বেশ কয়েকটি বালুর গদি রয়েছে। যে গদির মাধ্যমে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লাখ ঘনফুট বালু বিক্রি হয়। আর সে বিক্রি হওয়া বালুর প্রতি ফুট থেকে মান্নানের ছেলে যুবদল নেতা সজিবকে দিতে হয় প্রতি ফুটে দুই টাকা। সে হিসাবে শুধু বালু ঘাট থেকে সজিবের প্রতিদিন আয় ৪ লাখ, মাসে দাঁড়ায় এক কোটি বিশ লাখ টাকা। সূত্র এও জানায়, এর কোন নড়চড় হলে বালুর গদিতে ঘু-ঘু চড়ায় সজিব। 

এদিকে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাপ-বেটার একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সাথে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসা বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা পড়েছেন চরম বিপাকে। যা মালিক পক্ষকেও অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সোনারগাঁয়ের স্থানীয় রাজনীতির মাঠে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের চেয়েও ভয়ংকর একটি দল। এমনই প্রভাব পড়েছে স্থানীয় রাজনীতিতে।

সূত্র জানায়, মান্নান ও সজিবের একচ্ছত্র আধিপত্যের পিছনে কলকাঁিঠ নাড়ছে তার পা চাটা গুটিকয়েক নামধারী বিশেষ পেশার ব্যক্তি। যারা মান্নানের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়ে তাদের সাহস যুগিয়ে থাকে। চাউর আছে, বিশেষ পেশার ওই সকল ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক মাসোয়ারার ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা করার সুযোগও দেয় মান্নান। 

সূত্রের জোর দাবি, মাঠ পর্যায় প্রশাসনিক ও দলীয় উচ্চ পর্যায় ক্ষমতা সম্পন্ন নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই পাওয়া যাবে এ সকল অভিযোগের সত্যতা।

বিকেপি/এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর