ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বুইজ্জার স্বাক্ষর জাল করে জাল নাগরিক সনদ তৈরির মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার অভিযোগ উঠেছে তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তা রাজিবের বিরুদ্ধে।  

স্থানীয়দের অভিযোগ, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য নাগরিক সনদের প্রয়োজন হলে তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তা রাজিব ৫ আগস্টের আগে বঙ্গবন্ধুর লোগো সংযুক্ত প্যাড ব্যবহার করে জাল সনদ সরবরাহ করছেন।  

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বুইজ্জার স্বাক্ষর জাল করে জাল নাগরিক সনদ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে বঙ্গবন্ধুর লোগো সংযুক্ত প্যাড ব্যবহার করা হয়েছে।  

রাজিব রাজষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষকের দাবি, তিনি জামায়াতের নেতা ছিলেন।  

এ বিষয়ে সুপারভাইজার মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, ‘আমি চিথলিয়া ইউনিয়নের ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হালনাগাদের দায়িত্বে রয়েছি। রাজিব আমার টিমের একজন তথ্য সংগ্রহকারী কর্মী। আজ (মঙ্গলবার) তার তথ্য জমা দেওয়ার দিন ছিল। তথ্য জমা দেওয়ার সময় টিম লিডার নুরুল হকের কাছে ১৫ থেকে ২০ জন ভোটারের কাগজপত্র জমা দিলে সেখানে দেখা যায়, সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বুইজ্জার স্বাক্ষর জাল করে ২০ জুলাই ২০২৫ ও ৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর লোগো সংযুক্ত জাল নাগরিক সনদ ব্যবহার করা হয়েছে।’  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন স্থানীয় গ্রাহক জানান, ‘১০০ টাকা দিয়ে আমরা রাজিব স্যারের কাছ থেকে নাগরিক সনদ নিয়েছি।’ 

এদিকে, জাল সনদের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে টিম লিডার নুরুল হক শুভ তৎক্ষণাৎ ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য কর্মকর্তা নাজমুল কবির রাজিব বলেন, ‘আমার জমা দেওয়া কিছু তথ্যের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বুইজ্জার স্বাক্ষর সংযুক্ত ১৫-১৬টি নাগরিক সনদ পাওয়া গেছে। তবে এগুলো কিভাবে এসেছে, তা আমি জানি না।’  

১০০ টাকা করে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নিলে আরও বেশি নিতাম! এত কম টাকা আমি নেব?’ 

চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, ‘৫ আগস্টের পর সাবেক চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা নাগরিক সনদ এবং বঙ্গবন্ধুর লোগো সংযুক্ত সরকারি কাগজপত্র আমরা বাতিল করেছি। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল জালিয়াতির মাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করে ভোটার হালনাগাদের কাজ করছে। এতে আমাদের কাজের গতি নষ্ট হচ্ছে। আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’  

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাসের নাফিস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘জাল নাগরিক সনদ পাওয়া গেছে। দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান জানান, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  

এম. এমরান পাটোয়ারী/এমএইচএস