ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে কলামিস্ট, সংগঠক ও শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের ট্রাস্টি নাহিদ হাসান নলেজের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চিলমারী থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।

চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশাহেদ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নাহিদ হাসান নলেজ চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের রমনা মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি একাধারে শিক্ষক, সংগঠক, কলাম লেখক ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড আব ট্রাস্টি।

মামলার বাদীর নাম গোলাম মোস্তফা। তিনি চিলমারীর থানাহাট ইউনিয়নের ছোটকুষ্টারি গ্রামের বাসিন্দা। মামলায় নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দিয়ে জনরোষ সৃষ্টি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নাহিদ হাসানকে ‘রাসূল (সা.)কে অবমাননাকারী’ আখ্যা দিয়ে তার গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি তুলে চিলমারীতে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘তৌহিদী মুসলিম জনতা’। নাহিদ হাসান ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে এই ‘অবমাননা’ করেছেন বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। একই দাবিতে রোববার সন্ধ্যায় আবারও মিছিল করেন বিক্ষোভকারীরা। তবে বিক্ষোভকারীদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন নাহিদ হাসান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘নাহিদ হাসান তার ফেসবুক আইডি থেকে মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট করেন। আসামি তার অনুসারী রাখাল রাহার ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশর্ট দিয়ে মুহাম্মদকে (সা.) আবারো কটূক্তি ও হাদিসকে ভুয়া ও জাল হাদিস বলে পোস্ট করে। আসামি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে রাখাল রাহার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় উদ্দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যবহৃত মোবাইল বা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তিমূলক মানহানিকর পোস্ট করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আক্রমণাত্মক মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শনমূলক পোস্ট করেছেন।’

কী পোস্ট করেছিলেন নাহিদ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশর্ট শেয়ার দিয়েছিলেন নাহিদ হাসান। ওই পোস্টে ইসলামি বক্তা ত্ব-হা আদনান লিখেছিলেন, ‘শাতিমে রাসুলের কোনো ক্ষমা নেই! কোনো তাওবা নেই। এটাই ৪ মাজহাবের ফতোয়া। উম্মাহর ইজমা! মান সাব্বা নাবিয়্যান ফাক্বতুলুউহ!

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলকে গালি দিবে তার একটাই শাস্তি! কতল! মৃত্যুদণ্ড! অনতিবিলম্বে রাষ্ট্র কর্তৃক এই বিচার বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এহেন জাহান্নামের কীট দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পদে বহাল থাকা তো দেশের জন্যই অভিশাপ! আর রাষ্ট্র যদি তার দ্বায়িত্ব পালন না করে (যেমনটা কখনোই করা হয়নি) তবে এসব কা'ব বিন আশরাফ ইবনে খাতাল, আবু রাফের জন্য এ যুগের মুহাম্মাদ বিন মাসলামা, আব্দুল্লাহ বিন আত্বিক, আলি হায়দার গণই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ! এই বাংলায় কোনো শাতিমের জন্ম দেয়াও আমরা হারাম করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ! আল্লাহু আকবার।’

ত্ব-হার ওই পোস্টটির স্ক্রিন শর্ট শেয়ার করে নাহিদ হাসান ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘কওমি জননী ডাকা কুলাঙ্গাররা হত্যার হুমকি দিয়েই চলছে। এদের গ্রেপ্তার করা হবে না?’

তবে ‘তৌহিদী মুসলিম জনতার’ সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে কিছু সময় পর পোস্টটি সরিয়ে নেন নাহিদ। কিন্তু ততক্ষণে পানি বহুদূর গড়িয়ে যায়। শেয়ার করা পোস্টের ক্যাপশনটি ‘রাসুলকে (সা.) অবমাননার’ শামিল আখ্যা দিয়ে নাহিদ হাসানকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি তোলেন আন্দোলকারীরা। এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রশাসনকে আল্টিমেটামও দেওয়া হয়। পরে রোববার চিলমারী থানায় নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

তবে বিক্ষোভকারীদের এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে একজন বিশ্বাসী মুসলিম। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আল্লাহ ও প্রিয় রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধে কোথাও কিছু লিখেছি এটা কেউ দেখাতে পারবে না। এমন কিছু কখনো বলিনি, লিখিনি। তাই কেউ দেখাতেও পারবে না।’

ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ও পরে সরিয়ে নেওয়া প্রশ্নে নাহিদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা, প্রিয় মাতৃভূমিকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া একটি পক্ষের আইন হাতে তুলে নিতে চাওয়ার বিপক্ষে আমি মত দিয়েছি। এটা কি অপরাধ হতে পারে? তবুও সেই পোস্ট আমি ডিলিট করেছি। এই দুঃখিনী বাঙালি মুসলমানরা যাতে একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়তে পারে, আমি বরং এই চেষ্টা সবসময় করে গেছি।’

চিলমারী থানার ওসি মুশাহেদ খান বলেন, ‘মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

রোববার সন্ধ্যার পর থেকে নাহিদ হাসানের চিলমারীর পৈতৃক নিবাস ও কুড়িগ্রামের বাসার আশপাশে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর টহল দল দেখা গেছে।

ওএফ