বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে আইএমএফের সন্তোষ প্রকাশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:২৭
-67f257190dd25.jpg)
প্রতীকী ছবি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণের চতুর্থ কিস্তির ২৩৯ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ। সেই অর্থছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনা করতে রোববার (৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক করছেন আইএমএফ প্রতিনিধি দল। বৈঠকটি বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের রেটিং কমে যাওয়া ও ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণ না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছে আইএমএফ। পাশাপাশি জিডিপির রেশিও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দলটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া ব্যাংক সংস্কার পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে আইএমএফ আলোচনা করছে। তবে তারা ১৭ তারিখ ফাইনাল মিটিংয়ের পর আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করবে আইএমএফ। আজ তারা বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের রেটিং কমে যাওয়া ও ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণ না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছে আইএমএফ। পাশাপাশি জিডিপির রেশিও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দলটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া ব্যাংক সংস্কার পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে, আইএমএফ অর্থ উপদেষ্টার সালেহউদ্দিন আহমেদ এর সঙ্গে বৈঠক করেন।
জানা গেছে, বেলা ১২টায় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করছেন আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে এই বৈঠক।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইএমএফ বড় কোনো দলের ঢাকায় এটি দ্বিতীয় সফর হবে।
জানা গেছে, আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আইএমএফের প্রতিনিধি দলটি আগামী ৬ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে।
অর্থ বিভাগ আরও জানায়, এ সফরে আইএমএফ দলটির সঙ্গে অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে ১৭ এপ্রিল প্রেস ব্রিফিং করবে সফররত আইএমএফ দল। দলটি শেষ দিন ১৭ এপ্রিল ফের বৈঠক করবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর তিনটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ডিসেম্বরে পেয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আর ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার। ঋণের অর্থছাড় বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে কিস্তি পেতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ
আইএমএফের দেয়া শর্ত। এই শর্তগুলো প্রতিপালনে দেয়া বেশকিছু শর্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর পালন করতে অস্বীকৃত্রি জানান। এ নিয়ে গভর্নর সাংবাদিক সম্মেলনেও খোলামেলা কথা বলেছেন, তিনি বলেন, আইএমএফের কঠিন শর্ত মেনে ঋণ নেয়ার খুব প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কারণ এখন আমাদের রেমিট্যান্সই প্রতিমাসে তিন বিলিয়নের কাছাকাছি আসে। এর আগে আইএমএফ ভর্তুকি কমানো, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের পর ছেড়ে দেওয়ার মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশকে চাপ দেয়।
শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ও আইএমএফ যদি নিজ নিজ অবস্থানে অনমনীয় থাকে, তাহলে আর কোনো কিস্তি না–ও মিলতে পারে। তখন বাংলাদেশের জন্য দেখা যাবে নতুন জটিলতা। অর্থাৎ অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও তখন বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে রক্ষণশীল হয়ে যেতে পারে।
এএইচএস/এমআই