মার্কিন শুল্কনীতি
কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর আহ্বান বিজিএমইএর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০২

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যের উপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় দেশের রপ্তানিমুখী খাতগুলোতে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৬ এপ্রিল) বিজিএমইএ ঢাকায় স্থানীয় এক হোটেলে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সংলাপের আয়োজন করে
সভায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের উপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ফলে বিভিন্ন খাতে কি কি প্রভাব পড়বে, সেগুলো মূল্যায়ন করা হয়। করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিকেএমইএর সভাপতি মো. হাতেম, সাবেক সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, পিআরআইর ড. জাহিদী সাত্তার, র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, চৈতি কম্পোজিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম, ড. মোস্তফা আবিদ খানসহ প্রমুখ।
সভায় রপ্তানিকারকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ আরোপের ফলে পোশাক শিল্পসহ রপ্তানিখাতগুলো চরম সংকটের মুখে পড়বে। পাশাপাশি, শুল্ক বাড়ানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের পণ্যগুলোর দাম বাড়বে, ফলে পণ্যের চাহিদা কমবে ও বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হবে।
সংলাপে রপ্তানিকারকরা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার জন্য এর যৌক্তিক সমাধানের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্ভাব্য করণীয়গুলো নিয়েও মতবিনিময় করেন।
তারা বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার উপদেষ্টা, শীর্ষ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সংলাপে সকলেই আশা করেন যে, সরকার দ্রুততার সাথে একটি একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের উপায় বের করবে।
সংলাপে বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা মত প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো ইতোমধ্যেই সমন্বয় প্রক্রিয়ায় অনেক দূর এগিয়েছে। তারা আশা করেন, সরকারও দ্রুততার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি নির্বিঘ্ন রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
তারা বলেন, আমেরিকার তুলা, ভোজ্য তেল, গমসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের যথেষ্ট চাহিদা আছে বাংলাদেশের বাজারে। শুল্ক যৌক্তিককরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হতে পারে। তারা বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য সরকারকে শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদারকরণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন শুল্ক প্রত্যাহারে রাজি করানোর আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের রপ্তানি আয় মোট আয়ের এক-পঞ্চমাংশ হলেও একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাংলাদেশি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সভায় ব্যবসায়ীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে সরকার বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য লজিস্টিক খাতে ব্যয় হ্রাস, কাস্টমস প্রক্রিয়াগুলো সহজীকরণ ও শুল্ক নীতিগুলোর যৌক্তিকীকরণ করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
এএইচএস/ওএফ