নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটে বিএনপির সভা করার অভিযোগ মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৮

মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেলের কার্যালয়ে বসে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ম-নীতি এবং রাষ্ট্রদূতের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
সরকারি ‘নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে’ এ সভার আয়োজন করেন খোদ কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। তিনি তার কর্মচারীদের দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীদের ফোন করে ও ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে মতবিনিময় সভার আমন্ত্রণপত্র পাঠান।
রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী তার ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ম-নীতি এবং রাষ্ট্রদূতের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নিজেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেলের কার্যালয় পরিদর্শনের জন্য প্রস্তাব দেন। তার এ সফরের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতি ছিল না বলে জানা গেছে। তার এ প্রস্তাব পেয়ে কনসাল জেনারেল একটি আমন্ত্রণপত্র তৈরি করেন।
রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী নিজেও বেশকিছু সাংবাদিক ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ফোন করে সেখানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত প্রায় সকলেই বিএনপির নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কিংবা সরকারি দপ্তরগুলো মেক্সিকোর বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের অধিক্ষেত্র বা এখতিয়ারে নেই। তাই মেক্সিকো বা অন্য কোনো দেশের বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতরা যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য দেশের কোনো দরকারি দপ্তর পরিদর্শন করতে হলে কূটনীতিক নিয়মানুসারে সরকারি অনুমতিপত্র লাগবে।
পরিদর্শনের পূর্বেই সংশ্লিষ্ট কমকর্তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক চিঠি দিয়ে পূর্বেই অবহিত করবেন। কিন্তু এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই মুশফিকুল ফজল আনসারী ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেলকে ব্যবহার করে সরকারি অফিসে বসেই দলীয় সভা করেন। যদিও বিএনপি এখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই। এ নিয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
প্রবাসীদের অনেকেই বলছেন, সর্বজনীন মতবিনিময় সভা হলে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জানাতেন। বেছে বেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের আমন্ত্রণ দেওয়া হতো না।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, ‘আমি কন্স্যুলেট ভিজিট করতে এসেছিলাম। সেখানে কনস্যুলেট আমার সম্মানে কম্যুনিটির নেতৃবৃন্দকে, বিশেষ করে যারা ফ্যাসিস্টবিরোধী প্রবাসে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয়। সেখানে গোলটেবিল মতবিনিময় হয়। বিএনপি ছাড়াও বাইরের অনেকেই ছিলেন। এটা বিএনপির মিটিং ছিল না।’
বিএনপি নেতা আকতার হোসেন বাদল বলেন, ‘সরকারি কোনো স্থানে রাজনৈতিক কার্যকলাপ থাকা উচিত নয়, যদি না কোনো সরকারি প্রতিনিধি দেশের সংকট বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানান। আমি বিশ্বাস করি, এই মুহূর্তে আমাদের একসাথে কাজ করা উচিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে দৃঢ় করার জন্য।’
বিএনপি নেতা মাকসুদুল এইচ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে প্রবাসের অনেক মানুষ ছিল। প্রবাসীদের পাশাপাশি বিএনপির কিছু নেতাকর্মী, যারা দীর্ঘ ১৭ বছরের ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মুশফিকুর ফজল আনসারীর সাথে কাজ করেছেন, স্বাভাবিকভাবে ওনার সাথে মতবিনিময় কিংবা আড্ডাতে বিএনপি নেতাকর্মী থাকলে দোষের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।‘
বিএনপি নেতা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মাধ্যমে দাওয়াত পেয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সেখানে গিয়েছি। সেখানে আমার মতো বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরাই উপস্থিত ছিলেন।’
নিউইয়র্কের কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট নাসির খান পল বলেন, ‘রাষ্ট্রের কোনো অফিসে কোনো রিশেষ দলের সভা একেবারে নিষিদ্ধ ও বেআইনি। আমরা কনসাল জেনারেলকে এই ব্যাপারে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারি। উনি তার কার্যালয়ে এ ধরনের রাজনীতিকরণ করার কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতে পারেন না।’
কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আল আমিন রাসেল বলেন, ‘আন্দোলনের পর আমার আজ সবচেয়ে মন খারাপ হয়েছে বাংলাদেশে কন্স্যুলেটের চিত্র দেখে। রীতিমতো আওয়ামী লীগ যা করত, সবই করছে বিএনপি। কন্স্যুলেটকে মনে হলো তাদের দলীয় আড্ডার জায়গা। কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের দেখেও মনে হলো তারা খুব অসহায়।’
নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেলের কার্যালয়ে ‘দলীয় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত’ হওয়া নিয়ে কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদার সঙ্গে ফোনে ও ক্ষুদে বার্তায় যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন না ধরলেও ক্ষুদে বার্তায় তার মতামত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন ‘নো কমেন্টস’।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীকে মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তায় প্রশ্ন করা হলে তিনি লেখেন, ‘আমি এখন কাজে আছি। এখন নিউইয়র্কে নাই, আমি কম্বোডিয়ায়।’
- কেই/এমজে