
ছবি : বাংলাদেশের খবর
চৈত্রের দাবদাহে যখন রাজধানীবাসী হাঁসফাঁস করছে, তখন রাস্তাঘাটে একটু ঠান্ডা শরবতের আশায় দাঁড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। আখের রস কিংবা লেবুর শরবত–গরমে শরীর ঠান্ডা করতে যা পাচ্ছে, তাই গলাধঃকরণ করছে মানুষ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই শরবতের বেশিরভাগই হয়ে উঠেছে একেকটি বিষের পাত্র।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের দোকানগুলোতে যে শরবত বিক্রি হচ্ছে, তার বেশিরভাগই তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পানি দিয়ে। আবার সে শরবত ঠান্ডা করতে যে বরফ ব্যবহার করা হচ্ছে সেটিও তৈরি হচ্ছে নোংরা পরিবেশে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান অনুষদ বিভাগের পরিচালক মো. সাইদুল আরেফিন বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে মানুষ ফুটপাতের পাশেই আখের রস, লেবুর শরবত ও বিভিন্ন পানীয় পান করে থাকেন। যেগুলো সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হয়ে থাকে। এই শরবতগুলোতে শিল্পজাত রং, চিনির পরিবর্তে স্যাকারিন, এমনকি ক্ষতিকর রাসায়নিকও মেশানো হচ্ছে। অনেক শরবতে ব্যবহৃত বরফও তৈরি হচ্ছে অপরিষ্কার পানিতে। এতে নানা রকম পেটের পীড়া, বমি, হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়া এমনকি জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।’
রাজধানীর শাহবাগে শরবত বিক্রি করা এক ব্যক্তি বলেন, আমরা পরিষ্কার পানি দিয়ে তৈরি বরফ ব্যবহার করি।
আবার কেউ কেউ বরফের বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতেই আগ্রহী নন বলেও জানান।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বরফ সরবরাহ করা এক ব্যক্তির সাথে কথা বললে তিনি জানান, একই পানিতে তৈরি হওয়া বরফ মাছ, শরবত এমনকি মরদেহ সংরক্ষণেও ব্যবহার করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও নোংরা পানি দিয়ে বরফ তৈরি করার কারণে ইতোমধ্যেই আমরা বেশ কয়েকটি বরফ কলকে জরিমানা করেছি। তবে নিম্ন শ্রেণির যে শরবত ব্যবসায়ীরা রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি না। তাদের এ আইন হতে অব্যাহত করা হয়েছে। তবে আমাদের নজরদারি থাকলেও এত বিশাল সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাস্তায় খোলা পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। বাসায় তৈরি লেবু পানি, ডাব বা স্বাস্থ্যকর শরবত খাওয়াই নিরাপদ। শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থদের জন্য তো আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
গরমে তৃষ্ণা মেটাতে গিয়ে যেন বিষ না খাওয়া হয়—এ বিষয়ে নগরবাসীর এখনই সচেতন হওয়া দরকার।
এফএটি/এমএইচএস