গাজাবাসীদের সিরিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৫:০৪

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের সিরিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে আফ্রিকার সুদান, সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডে পাঠানোর গোপন চেষ্টা ফাঁস হয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েল বর্তমানে একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নীরবে কাজ করছে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব করেছিলেন। এই পরিকল্পনায় গাজার ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে অন্যত্র পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে, দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং এটিকে একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্প হিসেবে গড়ে তুলবে। তবে বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে অবাস্তব বলে মনে করছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে স্থানান্তরের বিষয়ে কড়া আপত্তি জানিয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে। অন্য এক আঞ্চলিক সূত্র সিবিএসকে জানিয়েছে যে দামেস্কের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। তবে এক সিনিয়র সিরীয় কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ পাননি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ইসরায়েলি নেতারা বরাবরই সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারারার ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। আল-শারারা ছিলেন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) সাবেক নেতা, যারা দীর্ঘদিনের সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ইসরায়েল সিরিয়ার সীমান্ত এলাকায় একটি বাফার জোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেশটিতে নিয়মিত বিমান হামলা চালায়।
শারারা ও তার সরকার নিজেদের মধ্যপন্থী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তারা সিরিয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়—ইহুদি, দ্রুজ ও কুর্দিদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। তিনি ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি ও হামলার বিরোধিতা করেছেন। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি দেননি।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালেই সিরিয়ায় প্রায় সাড়ে চার লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী বসবাস করছিলেন।
সিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র গাজাবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য সুদান ও সোমালিয়ার সঙ্গেও আলোচনা করেছে। একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছেন যে মূলত যুক্তরাষ্ট্রই এ বিষয়ে যোগাযোগ করছে। তবে তারা নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম প্রকাশ করেননি।
সোমালিয়ার যুক্তরাষ্ট্রস্থ রাষ্ট্রদূত সিবিএসকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল সোমালিয়া সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেনি।
এপির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সোমালিল্যান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।
গাজার ভবিষ্যৎ ও যুদ্ধবিরতি
ট্রাম্প তার গাজা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ১৫ মাসের যুদ্ধের পর, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হয়েছিল। যুদ্ধের ফলে গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি পরিকল্পনার আনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যেখানে ইসরায়েল দাবি করেছে, এই পুনর্গঠনের জন্য হামাসের পরিবর্তে একটি নতুন প্রশাসন দরকার।
তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনার পর আরব দেশগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। মিসর একটি বিকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপন করে।
মিসরের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে যে গাজা শাসনে ছয় মাসের জন্য একটি স্বাধীন কমিটি থাকবে। এরপর এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হবে। এতে ফিলিস্তিনিরা গাজাতেই থাকবে, যা ট্রাম্পের পুরো জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করার প্রস্তাবের বিপরীত।
ট্রাম্প প্রশাসন মিসরের পরিকল্পনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। সম্প্রতি, ট্রাম্প তার সুর কিছুটা নরম করে দাবি করেছেন যে এতে ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কার করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
তবে, নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় গাজার চার শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি আর রইল না। নতুন করে হামলার আগে ১৭ দিন ধরে গাজায় আন্তর্জাতিক সাহায্য পাঠানোর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিল। গোটা রমজান মাস গাজাবাসী অনাহারে অর্ধাহারে থাকার পর নতুন করে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজায় বিমান হামলায় শত শত মৃত্যু ‘সবেমাত্র শুরু’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী হামাসকে ‘বল প্রয়োগ করে’ যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বসাতে বাধ্য করবে।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় হামাস আমাদের বাহিনীর বল প্রয়োগ অনুভব করেছে। আমি আপনাদের ও তাদের আশ্বস্ত করতে চাই ‘এটি কেবল শুরু’। আমরা লক্ষ্য অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের সকল জিম্মিদের মুক্তি ও হামাসকে নির্মূল করব। গাজা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে থাকবে না এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিমান হামলায় কমপক্ষে চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই শিশু এবং ৫৬০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ওএফ