Logo

আন্তর্জাতিক

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাচীন মন্দিরে দাবানল, প্রাণহানি ২৬

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৯:২৪

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাচীন মন্দিরে দাবানল, প্রাণহানি ২৬

নজিরবিহীন দাবানলে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রাচীন মন্দিরের বড় অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া জাতীয় সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত করা দুটি ভবন আগুনে ধসে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দেশটির কর্মকর্তারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

গেল পাঁচদিন ধরে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের মুখে পড়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এতে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তিন শতাধিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ৩৭ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

খ্রিষ্টপূর্ব ৬৮১ অব্দে শিলা রাজবংশের সময় গৌনসা মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কোরীয় উপদ্বীপটির অর্ধেকেরও বেশি সময় শাসন করেছেন তারা। উইসিং শহরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ডিউনগুন পাহাড়ের পাদদেশে মন্দিরটির অবস্থান।

প্রাচীন আমলে নির্মিত ভবনগুলো যদিও কোনো আবাসিক ভবন না, তবে পরবর্তীতে এখানে কিছু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার আগুনের গ্রাসের মধ্যে পড়ে যায় মন্দিরটি। এতে ৩০টি ভবনের মধ্যে প্রায় ২০টি আগুনে ধসে পড়ে।-খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।

হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও তীব্র বাতাসে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দাবানলের লেলিহান শিখা। নিহতের মধ্যে ৪ ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও একজন পাইলটও রয়েছেন।

উইসিয়ং অঞ্চলে দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়ে ওই পাইলট প্রাণ হারিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সিউল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আহতদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান সরকারি কর্মকর্তারা।

তবে নিহতদের ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। নিহতরা বেশিরভাগ ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়স্ক বলে জানান তারা।

গত শুক্রবার দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি অঞ্চলে দাবানলের সূত্রপাত হয়। শুষ্ক বাতাসের কারণে দ্রুতই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকাগুলোতে।

দেশটির হাজার হাজার কর্মী, কয়েকডজন হেলিকপ্টারসহ নানা সরঞ্জাম নিয়ে চেষ্টা করলেও প্রবল বাতাসে ব্যাহত হচ্ছে সব। দেশটির কর্মকর্তারা জানান, শুষ্ক বাতাসের প্রচণ্ড গতির কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার বন বিভাগের প্রধান লিম স্যাং-সেওপ জানান, দেশটির যেসব অঞ্চল দাবানলের জ্বলছে, সেখানে আজ (বৃহস্পতিবার) ৫ মিলিমিটারের কম মাত্রায় বৃষ্টি হতে পারে। অল্প হলেও এই বৃষ্টি দাবানল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এর আগে, বুধবার (২৬ মার্চ) টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক সু বলেন, শুক্রবারের দাবানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেশি। এরকম ভয়াবহতার অভিজ্ঞতা দেশটির আগে কখনো হয়নি।

এ কারণে সমস্ত শক্তি ও সক্ষমতা দিয়ে এই দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে বলে দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করেন তিনি। বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার কর্মী ১২০টি হেলিকপ্টার আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দাবানলে আনদং, উইসিয়ং ও উলসান শহরে আগুনের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। দাবানলে প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির ছাড়াও বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

বুধবার রাতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণে আনদং শহরের বিশ্ব ঐতিহ্য খ্যাত ‘হাহো ফোক ভিলেজ’ ও পানচেওন গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জিরি পাহাড় থেকেও দর্শনার্থীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাসিন্দাদের ভুলের কারণেই এই দাবানলের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা। সম্ভাব্য কারণ হিসেবে সমাধি পরিষ্কারের জন্য ঘাসে আগুন দেওয়া বা ঢালাই কাজে উৎপন্ন স্ফুলিঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন তারা।

ডিআর/বিএইচ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর