
ফিলিস্তিনের গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর বরাতে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ গাজায় একটি তথাকথিত ‘নিরাপত্তা করিডোরে’ সেনা মোতায়েন করেছে।
চিকিৎসা সূত্রগুলো আল জাজিরাকে জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে বিমান হামলায় অন্তত ছয়জন এবং উত্তরের বেইত হানুনে আরেকটি হামলায় আরও ছয়জন নিহত হয়েছেন।
গত মার্চের মাঝামাঝি হামাসের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহের অস্ত্রবিরতি ভেঙে ফের হামলা শুরু করার পর থেকে গাজায় আরও বেশি ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি পক্ষ জানায়, হামাস আটককৃত ইসরায়েলিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা হামলা আরও জোরদার করবে।
শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার নতুনভাবে গঠিত একটি নিরাপত্তা করিডোরে তাদের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘মোরাগ করিডোর’ নামে নতুন একটি করিডোরের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, এটি রাফাহ শহরকে গাজার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। ইসরায়েল ইতোমধ্যে রাফাহ থেকে বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
তবে করিডোরটি ঠিক কোথায় এবং কত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
‘মোরাগ’ ছিল একটি ইহুদি বসতি, যা রাফাহ ও খান ইউনিসের মাঝামাঝি অবস্থান করত। নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন, করিডোরটি এই দুই শহরের মধ্য দিয়ে যাবে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত মানচিত্রে দেখা গেছে, করিডোরটি গাজার পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।
এদিকে শনিবার হামাসের সশস্ত্র শাখা একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে গাজায় আটক দুই ইসরায়েলিকে জীবিত দেখা গেছে। তারা ভিডিওতে জানায়, কীভাবে একটি ইসরায়েলি হামলা থেকে তারা বেঁচে গেছে।
ইসরায়েলি বন্দি পরিবারগুলোর সংগঠন জানিয়েছে, ভিডিওতে যাকে দেখা গেছে তিনি ম্যাক্সিম হারকিন। হারকিনের পরিবার মিডিয়াকে ভিডিওটি প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমে ভিডিওতে থাকা অন্য ব্যক্তিকে ইসরায়েলি সেনা বার কুপারস্টেইন বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
এই দুইজন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় ‘নোভা মিউজিক ফেস্টিভাল’ থেকে অপহৃত হয়ে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে ৫৮ জন ইসরায়েলি বন্দি গাজায় অবস্থান করছেন, যাদের মধ্যে ৩৪ জনকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মৃত বলে মনে করছে।
গত ১৮ মার্চ অস্ত্রবিরতির অবসানের আগে ছয় সপ্তাহের একটি সাময়িক শান্তির সময়ে হামাস ৩৩ বন্দিকে হস্তান্তর করেছিল, যাদের মধ্যে আটজন মৃত ছিলেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫০ হাজার ৬৬৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, হামলা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্স-এ পোস্টে বলেন, ‘শিশুদের হত্যা কোনোভাবেই বৈধ নয়।’
তিন দেশের শীর্ষ সম্মেলন
গাজায় যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ দ্বিতীয়ের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন।
ম্যাক্রোঁ এক্স পোস্টে বলেন, গাজায় জরুরি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ও প্রেসিডেন্ট সিসির আমন্ত্রণে মিসরে আমার সফরের সময় আমরা এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করব।
তিনি রোববার রাতে কায়রো পৌঁছাবেন ও সোমবার সকালে সিসির সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওইদিনই কায়রোতে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
গাজাগামী আন্তর্জাতিক ত্রাণের প্রধান স্থানান্তর কেন্দ্র মিশরের এল-আরিশ বন্দরে যাবেন ম্যাক্রো। এটি গাজা সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানে তিনি মানবিক ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। যুদ্ধবিরতির পক্ষে ফ্রান্সের ‘নিরবিচ্ছিন্ন সক্রিয়তা’ তুলে ধরবেন।
ওএফ