শুল্ক বিরতিতে স্বস্তি, ট্রাম্পের টার্গেট চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৩৩

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আচমকা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। এতে ধস নামা বৈশ্বিক শেয়ারবাজার একদিনেই বড় ধরনের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।
ট্রাম্প যেদিন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তার ঠিক একদিন পরেই বিশ্ববাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়— শেয়ারবাজারে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয় ও মার্কিন সরকারি বন্ডের সুদের হার হঠাৎ বেড়ে যায়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। তারা হঠাৎ চমকে গেছিল।’
ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার পর মার্কিন স্টক সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এক লাফে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। আর বৃহস্পতিবার জাপানের নিক্কেই সূচকও ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
তবে এই স্থগিতের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি নয়— প্রায় সব আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে। গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্কও থাকছে।
তবে, কানাডা ও মেক্সিকো ৯০ দিনের ঘোষণার বাইরে থাকবে। কারণ তাদের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। তারা ইউএসএমসিএ চুক্তির আওতায় কিছু পণ্যে ছাড় পাবে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, শুল্ক প্রত্যাহার এই পরিকল্পনার অংশ ছিল। যাতে দেশগুলো আলোচনায় আসতে বাধ্য হয়।
তবে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, বাজারে সৃষ্টি হওয়া ভীতিকর পরিস্থিতি তার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে।
তার নীতি অপরিবর্তনীয় থাকবে বারবার বললেও বুধবার তিনি বলেন, ‘আপনাকে অবশ্যই নমনীয় হতে হবে।’
চীনের ওপর চাপ আরও বাড়ল
অন্যদের জন্য নমনীয় হলে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা কমেনি। শুল্ক যুদ্ধে চীনকে ডেকে আনাই ছিল ট্রাম্পের মূল উদ্দেশ্য। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চীনের বৃহত্তম ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান বলেছেন, যেসব চীনা কোম্পানি আমাজনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে তারা শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দাম বাড়াবে বা মার্কিন বাজার ছেড়ে দেবে।
চীনও পাল্টা পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে। চীন এর শেষ দেখে ছাড়বে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
আইএনজির গ্লোবাল হেড অফ মার্কেটস ক্রিস টার্নার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন এক ধরনের শক্তির খেলায় মেতে উঠেছে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতার উদ্যোগ নিচ্ছে চীন। তবে অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা চীনের সঙ্গে কোনো যৌথ অবস্থানে যাবে না।
চাপ দিয়েই আলোচনায় আনা ট্রাম্পের কৌশল
বিদেশি সাহায্য ও সামরিক সহযোগিতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে দেশ-বিদেশের আলোচনায় ট্রাম্পের প্রধান হাতিয়ার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘এটা ছিল প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনা। চীনকে চাপে ফেলে দুর্বল অবস্থানে আনা হয়েছে।’
বেসেন্ট বাজারের অস্থিরতা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নগুলো উপেক্ষা করে বলেন, ‘আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশ ট্রাম্পের প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ মেনে চলেছিল তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।’
মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রাম্প সর্বোচ্চ আলোচনা সুবিধা তৈরির জন্য শুল্ক ব্যবহার করেছেন। আপনি বলতে পারেন, তিনি চীনকে একটি খারাপ অবস্থানে নিয়ে গেছেন।’
তবে বাজারে এই স্বস্তির পরও অর্থনীতিতে শঙ্কা পুরোপুরি কেটে যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারের দামের হঠাৎ বৃদ্ধি সমস্ত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে না। জরিপে দেখা গেছে, শুল্কের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের কারণে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ও পারিবারিক ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন অনেকে।
রয়টার্স ও ইপসোসের একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন আমেরিকান আগামী মাসগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন।
গোল্ডম্যান স্যাক্স জানায়, মন্দার আশঙ্কা কিছুটা কমলেও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি ও ব্যয় সংকোচন অব্যাহত থাকতে পারে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের সাথে কথা বলেছেন। এছাড়া ভিয়েতনামের একটি প্রতিনিধিদল বুধবার বাণিজ্য বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন।
তবে, মার্কিন অর্থমন্ত্রী বিশ্বের ৭৫টির বেশি দেশের সাথে আলোচনায় কত সময় লাগতে পারে, তা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে চুক্তি সম্ভব। তবে আপাতত যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা অগ্রাধিকার দেবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চীন একটি চুক্তি করতে চায়। কিন্তু ওরা আসলে বুঝতে পারছে না ঠিক কীভাবে শুরু করবে।’
বুধবারের এই ঘোষণার আগে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন, ‘শান্ত থাকুন! সবকিছু ঠিকঠাকভাবে কাজ করতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে আরও বড় ও উন্নত হবে!’
পরে, তিনি যোগ করেন, ‘এখনই সবচেয়ে ভালো সময় কেনাকাটার!!!’
ওএফ